ইন্দোরের বেলেশ্বর মহাদেব ঝুলেলাল মন্দিরে বৃহস্পতিবার বেলার দিকে চলছিল ‘হাভন’। রামনবমী উপলক্ষে যজ্ঞ। মন্দিরের মূর্তির সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়েছিলেন দর্শনার্থীরা। আচমকাই পায়ের তলার মাটি সরে গিয়ে প্রায় ৫০-৬০ ফুট নিচে গিয়ে পড়েন তাঁরা। রাত পর্যন্ত এই দুর্ঘটনায় ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২৫ জনের আটকে পড়ার খবর পাওয়া যায়। তারপর ক্রমশ মৃত্যুর খবর আসতে থাকে এবং তালিকা দীর্ঘ হয়। মধ্য প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান জানান, ১৯ জনকে উদ্ধার করা হয়। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
‘স্ল্যাব’ তৈরি করে কুয়োর মুখ ঢাকা হয়। দর্শনার্থীরা দাঁড়িয়েছিলেন তার উপরেই। চাপ রাখতে না পেরে তা ভেঙে পড়ে। কুয়োর উপর কীভাবে মন্দির তৈরি করা যায় এ নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠছে, তেমনই ভিড় হবে জেনেও কেন মন্দির কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিল না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। ‘বাওরি’ বা কুয়োর ছাদ ভেঙে নিচে পড়ে যান অন্তত পক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ জন দর্শনার্থী।
সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও থেকে দেখা যাচ্ছে, মন্দিরের মূর্তির ঠিক সামনের চাতালেই ঘটেছে এই দুর্ঘটনা। ভেঙে পড়ার পর ইট-কংক্রিটের স্তূপের মধ্যে আটকে পড়েছেন তাঁরা। বয়স্ক কয়েকজন মহিলাকে কোনওক্রমে টেনে তুলছেন উদ্ধারকারীরা। নিচে তখনও আটকে রয়েছেন অনেকে। মই, দড়ি নিয়ে উদ্ধারকারী দল, স্থানীয় লোকজন এবং পুলিশ কর্মীরা চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁদের উদ্ধারে। ওই কুয়োর ভিতর পাঁচ ফুট পর্যন্ত জলও ছিল। আশঙ্কা, দুর্ঘটনার পর বেশ কয়েকজন শিশুও নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। কুয়োর জল পাম্প করে তুলে তাদের খোঁজ চালানো হচ্ছে।
রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র জানান, ‘বাওড়ি’র খোলা মুখ ঢেকে কীভাবে এই মন্দিরের নির্মাণ কাজের অনুমতি পাওয়া গেল, তা তদন্ত করে দেখা হবে। ইন্দোরের পুলিশ কমিশনার মকরন্দ দেওস্কার জানান, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ২৫ জন দর্শনার্থী কুয়োর ভিতর পড়ে গিয়েছেন। কিন্তু ঠিক কতজন দর্শনার্থী দুর্ঘটনার মুখে পড়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। ফলে নিশ্চিত নয়, কতজন আটকে রয়েছেন।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, রামনবমী উপলক্ষে সকাল থেকেই মন্দিরে পুজো দেওয়ার ভিড় ছিল। যজ্ঞ শুরু হতে ভিড় আরও বাড়তে থাকে। তখনই ভেঙে পড়ে কুয়োর ছাদ। হুড়মুড়িয়ে নিচে পড়ে যান দর্শনার্থীরা। ঘটনাস্থলেই একাধিকের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পরিজনদের খোঁজেও অনেকে ভিড় জমান মন্দির চত্বরে। ‘প্যাটেল নগর রেসিডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি কান্তিভাই প্যাটেল অভিযোগ করেছেন, দুর্ঘটনার পর এক ঘণ্টা পর্যন্ত কোনও অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি। জখমদের অনেকেই যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন। মৃতদের মধ্যে ১১ জনের নাম জানিয়েছে পুলিশ— লক্ষ্মী প্যাটেল (৭০), ভারতী কুকরেজা (৫৮), জৈবন্তী খোবচাঁদনি (৮৪), দক্ষা প্যাটেল (৬০), মধু ভাম্মানি (৪৮), মণীশা মোতোয়ানি (৪০), গঙ্গা প্যাটেল (৫৮), কণক প্যাটেল (৩২), পুষ্পা প্যাটেল (৪৯), ভূমিকা খানচাঁদনি (৩১) এবং ইন্দ্র কুমার হরওয়ানি (৫৩)। নিহতদের পরিবারপিছু পাঁচ লক্ষ টাকা এবং জখমদের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি শিবরাজ সিং চৌহানের সঙ্গে কথা বলেছেন।
Madhya Pradesh
ইন্দোরে মন্দিরে কুয়োয় পড়ে হত ১৩

×
Comments :0