AIDWA

অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান মহিলাদের রাজ্য সম্মেলনে

রাজ্য

AIDWA Conference

রাজ্যজুড়ে চলা ভয়াবহ সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে ও নারীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আগামীদিনে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ লড়াই সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বৃহস্পতিবার শেষ হলো সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির ২৯ তম রাজ্য সম্মেলন। সমিতির পরিধি আরও বাড়িয়ে একে বৃহত্তর ক্ষেত্র প্রস্তুত করার আহ্বান জানালো এই সম্মেলন। এই লক্ষ্যে সমিতির কর্মীদের প্রান্তিক এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজে নিয়োজিত হওয়ার আবেদন জানিয়েছে সম্মেলন। প্রতিটি জেলায় আইনি সহায়তা কেন্দ্র গড়ে তুলে প্রান্তিক গরিব মহিলাদের সুরক্ষা নিরাপত্তা বিধান করতে হবে, এটি সমিতির অন্যতম লক্ষ্য। এদিনই সম্মেলনের শেষপর্বে সংগঠনের নতুন রাজ্য কমিটি গঠিত হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সভাপতি মালিনী ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক মারিয়াম ধাওয়ালে সহ অন্যান্য নেত্রীবৃন্দ।    

 

 

 


চন্দননগরে আয়োজিত এই সম্মেলনের শেষ দিনে পরিবেশ, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, দারিদ্র-ক্ষুধা, কর্মসংস্থান, মাইক্রোফিনান্স, মনুবাদ এবং নারীর মর্যাদা অধিকার ক্ষমতা বিষয়ক কমিশনের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। আরএসএস-বিজেপি’র জনবিরোধী নীতি এবং তৃণমূলের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রসঙ্গ এনে এদিন নেত্রীবৃন্দ বলেন, ভয়ঙ্কর মূল্যবৃদ্ধি রোজগারহীন জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। ওদিকে বেসামাল রেশন ব্যবস্থাও। রেশন ব্যবস্থায় বায়োমেট্রিক সিস্টেম বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি মানুষকে রেশনের আওতায় আনতে হবে। অসংখ্য ছোট ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থা বন্ধ হয়ে আছে। বন্ধ ১০০ দিনের কাজ। জব কার্ড পেতে চরম হয়রানি হতে হচ্ছে। 

 

 

অন্যদিকে শিক্ষা ব্যবস্থা দামী হয়ে পড়ছে। অনলাইনে শিক্ষা ব্যবস্থা ছেলেমেয়েদের ধ্বংস করছে। স্কুল ছুটের কুফল থেকে মিড-ডে মিল, সমস্যা বাড়ছে। আর এক দিকে নারী নির্যাতন ও নারী অবমাননা রুটিনমাফিক হয়ে পড়েছে এরাজ্যে। আইন আছে মহিলাদের সুরক্ষার জন্য, কিন্তু অনেক মহিলারই আইনগত দিকগুলি অজানা রয়েছে। তাঁদের সহায়তা করতে হবে। ধর্মকে ব্যবহার করে বিচ্ছিন্নতাবাদ রুখতে হবে।  
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির ২৯তম রাজ্য সম্মেলনের শেষ দিনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি মালিনী ভট্টাচার্য বলেন, সন্ত্রাস অনেক রাজ্যেই আছে। কিন্তু সেই সন্ত্রাসের মোকাবিলা করার পথ বা উপায়ও আমাদের সামনে আছে। আমাদের আরও বেশি করে সেই পথ ব্যবহার করে ঢুকে পড়তে হবে সংকটপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে। সাহস দেখাতে হবে, তবেই আমরা সফল হব। এই সাহস ইতিমধ্যে দেখিয়েছেন এরাজ্যের মহিলারা। মনে রাখতে হবে আমাদের সব কাজই নির্বাচনমুখী হবে না। আমাদের সমিতির করণীয় যে কাজ, বিভিন্ন ইস্যুতে লড়াই আন্দোলন— তা আমাদের আরও বেশি করে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

 

 

 

সম্পাদকীয় খসড়া প্রতিবেদনের আলোচনার ওপরে জবাবী ভাষণ দেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ভয়ঙ্করভাবে কায়েম আছে। মিছিল করলেও ছবি তুলে রাখা হচ্ছে এলাকায়। তাও আমাদের সমিতি হিম্মত দেখিয়েছে মোকাবিলার যা ইতিবাচক। এগিয়ে যাওয়ার পথে আমাদের ত্রুটি দুর্বলতা কিছু আছে, তা আমাদের সংশোধন করে নিতে হবে। কিন্তু আমাদের মূল লক্ষ্য হবে প্রতিটি মহিলার কাছে পৌঁছানো। কৃষক-খেতমজুর, বিড়ি-নির্মাণ শ্রমিক, চা শ্রমিক- সবার কাছে যেতে হবে আরও বেশি করে, তাঁদের সমস্যাগুলির সমাধানে আরও জোরদার লড়াই করতে হবে। আদিবাসীদের জল জমি জঙ্গলের অধিকারের দাবি আরও বেশি করে তুলে ধরতে হবে। একইসঙ্গে বামপন্থী ফ্রন্টের সময়ে কী সাফল্য ছিল তাও বারবার তুলে ধরতে হবে সবার সামনে। 
মাইক্রোফিনান্স সংস্থার বিপদ প্রসঙ্গে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে নেত্রীবৃন্দ বলেন, তারা আরও বেশি বেশি ঋণ দিতে চায়। বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিও একই কাজে নেমেছে। ঋণ নিলে তা শোধ করতেই হবে। এখানেই ফাঁদে পড়ছেন মহিলারা। বিপদ বাড়ছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির, বিপদগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র কৃষক, ভাগচাষি, দিনমজুর, শ্রমজীবীদের পরিবার। প্রান্তিক মানুষের জন্য আরও অনেক বেশি সরকারি সহায়তা দরকার, কিন্তু তা হচ্ছে না। এর বিরুদ্ধেও আন্দোলন আরও জোরদার করে তুলতে হবে।

 

 

 

মহিলা সমিতির সম্মেলনে গঠিত নতুন কমিটি

সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির ২৯ তম রাজ্য সম্মেলন থেকে আগামী ৩ বছরের জন্য নতুন রাজ্য কমিটি গঠিত হয়েছে। নতুন রাজ্য সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন জাহানারা খান। রাজ্য সম্পাদিকা হিসাবে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন কনীনিকা ঘোষ। কোষাধ্যক্ষ স্বপ্না ভট্টাচার্য। তিনিও পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। এবারের রাজ্য কমিটিতে নতুন মুখ ২০ জন। মোট ১১৯ জনের নতুন রাজ্য কমিটিতে বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য ১৫ জন। এর মধ্যে রয়েছেন এসএফআই’র পক্ষ থেকে নবনীতা চক্রবর্তী, ডিওয়াইএফআই’র পক্ষ থেকে মীনাক্ষী মুখার্জি এবং শ্রমজীবী ফ্রন্টের পক্ষ থেকে মধুমিতা ব্যানার্জি। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী হয়েছে ৩২ জনের। আগামী জানুয়ারি মাসে কেরালায় হবে সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্মেলন। আসন্ন সর্বভারতীয় সম্মেলনে এরাজ্য থেকে প্রতিনিধি থাকবেন ১১০ জন।  

Comments :0

Login to leave a comment