ANAYAKATHA \ LIGHT OF FARASDANGA — JAGADHATRI \ PALLAB MUKHOPADHAYA \ MUKTADHARA \ 10 NOVEMBER 2024

অন্যকথা \ ফরাসডাঙার জগদ্ধাত্রী — শোভাযাত্রা থেকে আলোকসজ্জ্বা \ পল্লব মুখোপাধ্যায় \ মুক্তধারা \ ১০ নভেম্বর ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

ANAYAKATHA  LIGHT OF FARASDANGA  JAGADHATRI  PALLAB MUKHOPADHAYA  MUKTADHARA  10 NOVEMBER 2024

অন্যকথা

ফরাসডাঙার জগদ্ধাত্রী — শোভাযাত্রা থেকে আলোকসজ্জ্বা

পল্লব মুখোপাধ্যায়

মুক্তধারা

দীপাবলির পরে যে উৎসবটিকে ঘিরে মেতে ওঠে বাঙালি সমাজের একাংশ, তা জগদ্ধাত্রী।
মূলত কৃষ্ণনগর ও চন্দনগরে জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষ্যে ধূমধাম হলেও গত
কয়েক বছর ধরে রাজ্যের অন্যান্য অংশেও এই পুজোর প্রচলন হয়েছে। কৃষ্ণনগর ও
চন্দনগরে জগদ্ধাত্রী পুজো দুর্গাপুজোকেও ছাপিয়ে প্রধান উৎসব হিসেবে গণ্য হয়।
বহু মানুষ এই সময় জগদ্ধাত্রী পুজোর আলোকশোভা দেখতে চন্দননগরে যান।
পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ওডিশার বিভিন্ন অংশেও জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে থাকে।
জগদ্ধাত্রীর আরাধনার প্রবর্তক নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। কারণ দুর্গাপুজো করতে
অসমর্থ হয়ে বিকল্প হিসেবে জগদ্ধাত্রীর আরাধনা বঙ্গে প্রথম প্রচলন করছেন
তিনিই। কৃষ্ণনগরে দুর্গাপুজোর বিকল্প হিসেবে প্রচলিত হয় জগদ্ধাত্রী পুজো।
কৃষ্ণচন্দ্রের পুজোয় অনুপ্রাণিত হয়ে ফরাসিদের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী শুরু
করলেন তৎকালীন ফরাসডাঙা বা অধুনা চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো। যা পরে বিকল্প
এক উৎসবের আকার নেয়।
দুর্গা পুজোর পর আবারও ঠিক দুর্গাপুজোর মতো একই রকম উৎসবের মেজাজ তৈরি হয়
জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে। চন্দননগর শহর সেজে ওঠে জগধাত্রী পুজোর আনন্দে।
চন্দননগরের সরষে পাড়া এলাকায় রয়েছে ইন্দ্রনারায়ন চৌধুরীর বাড়ি। বর্তমানে সেই
বিশাল বাড়ির একাংশ হয়েছে গাছগাছরা জঙ্গলে ভর্তি। তা পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই
দেখা যাবে মূল বাড়ি যেখানে এখনও বসবাস করেন তাঁদের বর্তমান প্রজন্মরা।
বর্তমানে চন্দননগরের আলো একটি বড় শিল্পে পরিণত হয়েছে। চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী
পুজোর থেকেও বেশি জনপ্রিয় তার শোভাযাত্রা। দেশ-বিদেশের বহু মানুষ আসেন এই
শোভাযাত্রা দেখতে। আর শোভাযাত্রার মূল আকর্ষণ চন্দননগরের আলোকসজ্জা।
সারারাত আলোর মালায় সেজে ওঠে চন্দননগরের আশপাশ। এখন দেখা যায় উন্নতমানের
এলইডি আলো। সঙ্গী হয়েছে প্রযুক্তিও। চন্দননগরের আলোর ইতিহাসও সবদিক
থেকেই সমৃদ্ধ ।
ফরাসি আমলে জগদ্ধাত্রীর শোভাযাত্রায় থাকত গ্যাস লাইট, হ্যাজাক ও ডে লাইট
(পেট্রোম্যাক্স)। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টিউবলাইট আসে। তবে এখানকার আলোর
জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে টর্চের টুনি বাল্বের মধ্যে দিয়ে। আমেরিকা লন্ডন-সহ বিভিন্ন
দেশে প্রশংসিত হয় চন্দননগরের আলোকসজ্জা। সেভাবেই চন্দননগরের আলোক শিল্পে
জনপ্রিয়তা পান শ্রীধর দাস, তারক শেঠ, বাবু পাল ও অসীম দে'র মতো শিল্পীরা। এখন
একাধিক শিল্পী নতুন ধরনের আলোর জাদুতে সাজিয়ে তুলছেন চন্দননগরের শোভাযাত্রাকে। এমনকী 
এতই জনপ্রিয় চন্দননগরের আলো যে শারদোৎসব ও দীপাবলীর আগাম বায়না পান আলোকশিল্পীরা |
তৎকালীন ফরাসডাঙা বা বর্তমানে চন্দননগরের আলো রীতিমতো একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। 
তৈরির আগে আলোকসজ্জার বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ আঁকা হয়। এরপর তা লোহা অথবা ফাইবারের
কাঠামোর মধ্যে ফুটিয়ে তোলা হয়। থ্রিডি ও অ্যানিমেশনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।
চন্দননগরের আলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গেলেও শোভাযাত্রার আলোয় থাকে
অন্যরকম চমক। সেই জন্য পুজোকমিটিগুলি ও আলোকশিল্পীরা সারা বছরের
চিন্তাভাবনা ও পরিশ্রমে আলোর জাদু তুলে ধরেন এই জগদ্ধাত্রী পুজোর শোভাযাত্রায়।
চন্দননগর বাগবাজার জগদ্ধাত্রী পুজো থেকেই টুনির আলোর শোভাযাত্রা শুরু হয়। নকশা
করা বেতের ওপর আলো লাগিয়ে শোভাযাত্রা শুরু হয় চন্দননগরে। তারপর থেকেই ধীরে
ধীরে টুনি বাল্বের পরিবর্তন হয়ে এলইডি লাইটের চল বাড়ে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের
আলো তৈরি করা হয় চন্দননগর শোভাযাত্রায়। চন্দননগরের আলোক শিল্পে প্রথমে
গ্যাস লাইট, ডে-লাইট ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ল্যাম্প আসে। পরবর্তীকালে সিক্স পয়েন্ট
টু টুনি বাল্বের জনপ্রিয়তা বাড়ে। আর এই টুনি বাল্বের আলোর জাদু তৈরি করেছিলেন
চন্দননগরের বিখ্যাত আলোকশিল্পী শ্রীধর দাস। তিনি শুধু চন্দননগর নন ভারতের
বিভিন্ন শহর এমনকী বিদেশেও গিয়েছেন। রাশিয়া, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ডেও
গিয়েছিলেন বেশ কয়েকবার। চন্দননগরের আলো বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন। ১৯৮৮
সালে চন্দননগরে এলইডির ব্যবহার হয়। আবার সেই এলইডির উজ্জ্বলতা কমাতে
এলইডি-র ওপর ক্যাপ তৈরি করে আলোর অন্যমাত্রা যোগ করেছিলেন আলোকশিল্পীরা
| প্রথমে শুধুমাত্র নীল রঙের এলইডি পাওয়া যেত । অন্য রঙের এলইডি পাওয়া যেত না |
বর্তমানে সেই এলইডিতে থ্রিডি এফেক্ট ও অ্যানিমেশন এসেছে। বর্তমানে বিভিন্ন
রকমের এলইডি আলো বাজারে এসেছে। তৎকালীন ফরাসডাঙা বা অধুনা চন্দনগরবাসীদের অভিমত, 
চন্দননগরের আলোরা কারিগর শিল্পীরা যতদিন বেঁচে থাকবেন  চন্দননগরের আলো ততদিন থাকবে।

Comments :0

Login to leave a comment