SHAH OLD PENSION

ভোটের মুখে হঠাৎ পুরানো পেনশনে ফেরার জুমলা শাহের

জাতীয়

 বাজপেয়ী আমলে চালু হয়ে যাওয়া নয়া পেনশন প্রকল্প বাতিল ব্যবস্থা বাতিল করে কি শেষে পুরানো পেনশন ব্যবস্থায় ফিরছে মোদী সরকার? নাকি এ কেবলই জুমলা। নাকি শ্রমিক-কর্মচারীদের মেজাজ বুঝেই কি আবার মোদী-শাহের নয়া টোপ? রাত পোহাতেই রাজস্থানে ভোট। আর কিছুদিন বাদেই দেশে লোকসভা নির্বাচন। বিরোধী পরিচালিত বেশ কিছু রাজ্যে ইতিমধ্যেই ফিরে এসেছে পুরানো পেনশন ব্যবস্থা।  
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের প্রায় শেষ দিনে এসে পুরানো পেনশন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নিছক বিবেচনার আশ্বাসে এই প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে বিজেপির শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সংগঠন(বিএমএস) বুধবার পুরানো পেনশন ব্যবস্থা চালুর দাবিতে দিল্লি সমাবেশ করেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে এনিয়ে ডেপুটেশন দিয়েছে। তাতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পাঁচ রাজ্যে ইতিমধ্যে নয়া পেনশন বাতিল করে পুরানো পেনশন ব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে। সারা দেশেই সরকারি কর্মচারীরা নয়া পেনশন প্রকল্পের বিরুদ্ধে সোচ্চার। এতে ক্ষোভ প্রতিদিন বাড়ছে।বিএমএসের দাবি তাই কেন্দ্রকে দ্রুত পুরানো পেনশন চালু করতে হবে। প্রসঙ্গত, চলতি মাসে ৩নভেম্বরে রামলীলা ময়দানে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি শিক্ষক কর্মচারী শ্রমিকদের পৃথক এক বিশাল সমাবেশে পুরানো পেনশন চালুর দাবি জানানো হয়। তাতে সিআইটিইউ নেতা তপন সেন জানিয়ে দেন নয়া পেনশন প্রকল্প এখন বিভিন্ন রাজ্য সরকার  বাতিল করছে।তিনি কেন্দ্রকে অবিলম্বে তা বাতিল করে পুরানো পেনশন চালু না হলে লাগাতার ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দেন। যদিও বিজেপির শ্রমিক সংগঠন সপ্তাহের প্রথমে শ্রমিক কর্মচারীর পুরানো পেনশন ব্যবস্থা চালুর দাবির পক্ষে ছিলনা।শাহ এনিয়ে বিবেচনার বার্তা দেওয়ার পর বিএমএসের পুরানো পেনশন চালুর একই দাবিতে নির্বাচনের আগে কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রীকে ডেপুটেশন দেওয়া বিশেষ অর্থবহ বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল ।
এদিকে নয়া উদারবাদী অর্থনীতির মূল কথাই হলো সরকারের শ্রমিক কর্মচারীর সামাজিক সুরক্ষার সব দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলা। ফলে নয়া উদারবাদী আর্থিক নীতি চালু করার লক্ষ্যে বিজেপির বাজপেয়ী সরকার পেনশনে সরকারের আর্থিক দায় ঝেড়ে ফেলতে পুরানো পেনশন ব্যবস্থা বাতিল করে দেশে নয়া পেনশন প্রকল্প চালু করে দেয়। ২০০৩ সালের ২২ডিসেম্বর অর্ডিন্যান্স জারি করে বাজপেয়ী সরকার জানিয়ে দেয় ২০০৪সালের ১জানুয়ারি থেকে যারা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী হিসাবে নিয়োগ হবেন, সকলেই নয়া পেনশন প্রকল্পের আওতায় আসবেন।পুরানো পেনশন ব্যবস্থায় সরকারি কর্মীদের পেনশনের আর্থিক দায় এবং তার নির্দিষ্ট সময় অন্তর মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার দায় ছিল সরকারের। পুরানো পেনশন প্রকল্পে অবসর প্রাপ্ত কর্মীদের অবসর নেওয়ার সময়ে তার বেতনের ৫০ শতাংশ পেনশন হিসাবে দেওয়া হয়। পেনশনের সেই নিশ্চয়তা তুলে দিয়ে নয়া পেনশন প্রকল্পে নিজের পেনশন নিজে জমাও প্রকল্প চালু হয়ে গেল। এদিকে কেন্দ্রে নয়া পেনশন প্রকল্প চালুর পর রাজ্য সরকারকে তা চালু করার জন্য চাপ দেয় কেন্দ্র। এতে বামফ্রন্ট  শাসিত পশ্চিমবঙ্গও দুএকটি রাজ্য ছাড়া সব রাজ্যে নয়া পেনশন প্রকল্প চালু হয়ে যায়। বিজেপির শ্রমিক সংগঠন বিএমএস বাদে সমস্ত কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন নয়া পেনশন প্রকল্প বাতিলের দাবিতে গত দুই দশক ধরে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে এসেছে। তাতে ইতিমধ্যে পাঁচ রাজ্যে  বিরোধী সরকার ইউনিয়নের দাবি মেনে নয়া পেনশন প্রকল্প বাতিল করে পুরানো পেনশন ব্যবস্থা চালু করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থদপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ভগবত কারাড সংসদে জানিয়েছেন, হিমাচল, ছত্তিশগড়,পাঞ্জাব, রাজস্থান এবং ঝাড়খণ্ড এই পাঁচ রাজ্য তাদের নয়া পেনশন প্রকল্প বাতিল করে পুরানো পেনশন ব্যবস্থা চালু করে দিয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাজস্থানে নির্বাচনের শেষ দিনেই পুরানো পেনশন ব্যবস্থা নিয়ে মুখ খুললেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ।বা খুলতে বাধ্য হলেন।কারণ রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার নয়া পেনশন প্রকল্প বাতিল করে রাজ্যে পুরানো পেনশন ব্যবস্থা চালু করে দিয়েছে।শাহ এনিয়ে প্রশ্নে সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন, ‘পুরানো পেনশন ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি।কমিটি এনিয়ে তার রিপোর্ট দেওয়ার পর পুরানো পেনশন ব্যবস্থার বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করব।’ প্রসঙ্গত শাহ যে কমিটি গঠনের কথা জানালেন তা কেন্দ্র গত ৬ এপ্রিল গঠন করে। কেন্দ্রের অর্থ সচিবের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। যদিও এই কমিটি নয়া পেনশন প্রকল্পে কি গলদ আছে এবং এতে আরো কি আর্থিক সুযোগ দেওয়া যায় তা খতিয়ে দেখবে। এদিকে পুরানো পেনশন নিয়ে শাহের কমিটি গঠন নিয়ে প্রশ্নে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেন,যেখানে কংগ্রেস পুরানো পেনশন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা নিশ্চিত করেছে সেখানে শাহ তা নিয়ে শুধু কমিটি  গড়া নিশ্চিত করে যাচ্ছেন।এটাই কংগ্রেস ও বিজেপির  মধ্যে পার্থক্য।তিনি বলেন, রাজ্যের মানুষ  কমিটি চায়না। যে কাজ করা হবে বলা হচ্ছে তার নিশ্চয়তা চায়। আমরা নিশ্চিত করেই পুরানো পেনশন ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনেছি। কমিটি করিনি। এবারে তা পুরানো পেনশন ব্যবস্থা স্থায়ী করতে আইন আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে রাজস্থান ও ছত্তিশগড় দুই রাজ্যে নয়া পেনশন প্রকল্প বাতিল হয়ে ফিরে এসেছে পুরানো পেনশন প্রকল্প। রাজস্থানে নির্বাচনের মুখে পুরানো পেনশন ব্যবস্থা বহাল রাখা হবে এই বার্তা দেওয়া জরুরি ছিল শাহের কাছে।  তাই এতে আলোচনার বার্তা দিয়ে থেমে থাকেননি। দলের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস এনিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণকে এই দাবি নিয়ে ডেপুটেশন দিয়েছে। পুরানো পেনশন ব্যবস্থার দাবিতে বিএমএসের  শাখা সংগঠন গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ন্যাশনাল কনফেডারেশনের সভা হয় দিল্লিতে। অর্থমন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন শেষে এদিন বিএমএস নেতা রবীন্দ্র হিমতে বলেন, আমরা ২০০৪ সাল থেকে পুরানো পেনশন ব্যবস্থা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছি।সেই সময় সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে পুরানো পেনশন বাতিল করে নয়া পেনশন প্রকল্প চালু করে। সারা দেশে শ্রমিক কর্মচারীদের নয়া পেনশন প্রকল্পের বিরুদ্ধে  ক্ষোভ বাড়ছে। হিমতে বলেন, নয়া পেনশন প্রকল্পে শ্রমিক কর্মচারীরা  সামাজিক সুরক্ষার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।  সরকারের দায়িত্ব হলো পেনশনের মতো সামাজিক  সুরক্ষা বহাল রাখা। তার আর্থিক দায় বহন করা। তাই পুরানো পেনশন ব্যবস্থা চালুর আমরা দাবি করছি। তিনি আরো জানান, বেশ কিছু রাজ্য পুরানো পেনশন রাজ্যে চালু করেছে। এতে অনেকেই  ‌আশা করছেন পুরানো পেনশন চালু করা সম্ভব। মোদী সরকারের তা দ্রুত তা চালু করা উচিত বলে জানায় বিএমএস।
এদিকে পুরানো পেনশন ব্যবস্থার দাবি নিয়ে রামলীলা ময়দানে  কনফেডারেশন অব সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন, অল ইন্ডিয়া স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন, স্কুল টিচারস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া, ন্যাশনাল  কোঅর্ডিনেশন কমিটি অব পেনশনার্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে শ্রমিক কর্মচারীদের বিশাল সমাবেশ হয়। গত ৩নভেম্বরের সেই সমাবেশে স্বাগত  ভাষণ দেন সিআইটিইউ নেতা তপন সেন। তিনি জানান,নয়া উদারনীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে গিয়ে প্রথম থেকে এই নয়া পেনশন প্রকল্পের বিরোধিতা করে এসেছে সিআইটিইউ। আজ বিভিন্ন রাজ্যে আন্দোলনের চাপেই পুরানো পেনশন প্রকল্প চালু হয়েছে। কেন্দ্র তা চালু করার দাবি জানানো হচ্ছে। এই দাবি আদায়ে ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দেন সেন।

Comments :0

Login to leave a comment