Editorial

অজানা উদ্বেগ

সম্পাদকীয় বিভাগ

শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অকল্পনীয়, অদৃশ্যপূর্ব এবং নজিরবিহীন দুর্নীতির জেরে গোটা নিয়োগ‍‌ প্রক্রিয়াটাই সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে বাতিল হবার পর সুদীর্ঘ ৯ বছর পর ফের নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হলো প্রথম পর্বের। দ্বিতীয় শেষ পর্বের পরীক্ষা হবে সাতদিন পর। একদা স্বঘোষিত সততার প্রতীক মমতা ব্যানার্জির সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে আদালত নিরুপায় হয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ২৬ হাজারের মতো শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিল করতে বাধ্য হয়। দিনের পর দিন বছরের পর বছর অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্তদের তালিকা দেবার নির্দেশ দিলেও রাজ্য সরকার তা দেয়নি। দিলে যোগ্যদের চাকরি বাঁচানো সম্ভব হতো। কিন্তু লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে যেসব অযোগ্যদের প্রতি সরকার একান্তই দায়বদ্ধ তাদের রক্ষা করার এবং আড়াল করার তাড়নায় সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে উপেক্ষা করেছে। বদলে অযোগ্য, অবৈধ শিক্ষকদের চাকরি বাঁচাতে কোটি কোটি সরকারি টাকা খরচ করে দেশের সেরা উকিলদের নিয়োগ করে গত ৯ বছর ধরে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে মামলার পর মামলা করে গেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা করা যায়নি। টাকা দিয়ে চাকরি কেনা শিক্ষকদের চাকরি ছাড়তে হয়েছে। দুর্ভাগ্য, মমতার সরকার দাগিদের চিহ্নিত করে না দেওয়ায় চাকরি হারাতে হয়েছে যোগ্যদেরও।
মমতা ব্যানার্জিরা চাননি শুধু টাকার বিনিময়ে চাকরি পাওয়া অযোগ্যদের চাকরি যাক। তাই তালিকা দেয়নি। তালিকা দেওগা মানেই দাগিরা চিহ্নিত হয়ে যাওয়া। তখন তারা যে যাকে টাকা দিয়ে চাকরি কিনেছিল তার বাড়ি চড়াও হয়ে টাকা আদায় করবে। রাজ্যজুড়ে এক গণরোষের পরিস্থিতি হবে। দুনিয়া দেখবে টাকা দিয়ে শিক্ষকতার চাকরি দিয়ে তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরা জনগণের হাতে গণধোলাই খাচ্ছে। যেভাবেই হোক এটা আটকাতে চেয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। তাই বারবার তিনি সকলের চাকরি ফিরিয়ে দেবার আশ্বাস দিয়েছেন। যোগ্য অযোগ্য সকলকেই তার উপর ভরসা করতে বলেছেন। কোনও একটা ব্যবস্থা তিনি ঠিক করবেন। একথাও বলেছেন কারও চাকরি যাক তিনি চান না। অর্থাৎ চুরি করে, দুর্নীতি করে চাকরি পেলেও তিনি তাদের সরকারি ক্ষেত্রে বিকল্প চাকরি ব্যবস্থা করবেন। অর্থাৎ দুর্নীতিকে তিনি বৈধতা দেবেন।
দুর্নীতি করে চাকরি মিলেছে, অযোগ্যরা লক্ষ লক্ষ টাকা নেতা-মন্ত্রীদের দিয়ে চাকরি কেনা হয়েছে তাতে মুখ্যমন্ত্রী মোটেই লজ্জিত বা বিচলিত নন। যোগ্যদের চাকরি যাওয়াতেও তার বিশেষ তাপ উত্তাপ নেই। তিনি প্রধানত উদ্বিগ্ন দাগিদের চাকরি যাওয়া নিয়ে। দুর্নীতি আড়ার করে দাগিদের চাকরি বাঁচানোর জন্য ৯ বছর ধরে আইনি লড়াইয়ের জের শিক্ষক নিগোগের নতুন কোন পরীক্ষা হয়নি, নিয়োগ হয়নি নতুন শিক্ষক। ফলে রাজ্যের বিদ্যালয়গুলির কার্যত শিক্ষক শূন্য হয়ে পঠন-পাঠন শিকেয় উঠেছে। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই হচ্ছে নতুন করে নিয়োগ পরীক্ষা। প্রথমদিন ৯ম-১০ম-র পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৩ লক্ষ ২০ হাজার। পরীক্ষায় বসেন চাকরিহারারা এবং নতুনরা।
পরীক্ষায় বসলেও সরকারের উপর আস্থা বা ভরসা নেই প্রায় কারোরই। অজানা আশঙ্কা আবার কোনও ঘোঁট পাকানো হয়েছে গোপনে। আগে ১৭ রকম পদ্ধতিতে দুর্নীতি করে টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া হয়েছিল। এবার নতুন কায়দায় আরও কত রকমে দুর্নীতি হবে কেউ জানে না। সরকারটা তৃণমূলের, মুখ্যমন্ত্রী যখন মমতা ব্যাানার্জি তখন দুর্নীতি হবে না একথা হলফ করে কেউ বলতে পারবে না। কারণ জন্ম থেকে চুরি-দুর্নীতিই এই সরকারের ভূষণ। দুর্ভাগ্য রাজ্যবাসীর তাঁরা এখনও এই সরকারকে সহ্য করে যাচ্ছেন।

মন্তব্যসমূহ :0

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন