লব মুখার্জী- রাজারহাট
জোঁকের মুখে নুন যেমন বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে তেমনই লালঝান্ডা। তৃণমূল কিংবা বিজেপি দলের উপর বীতশ্রদ্ধ হচ্ছেন তাদের দলের সমর্থকরা। তাঁদের কাছে টেনে নিতে হবে। আরো গভীর ভাবে যোগাযোগ করতে হবে সকলের সাথে। সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী শনিবার রাজারহাট ব্লকের কেন্দ্রীয় সমাবেশে একথা বলেন।
সিপিআই(এম) রাজারহাট ব্লক নির্বাচনী কমিটির আহ্বানে বিষ্ণুপুর বটতলা খেলার মাঠে সমাবেশটি হয়।
সুজন চক্রবর্তী ছাড়াও বক্তাদের মধ্যে ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা পলাশ দাশ , সপ্তর্ষি দেব , জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি অপর্ণা গুপ্ত , জেলা পরিষদ আসনে বামফ্রন্টের সিপিআই(এম) তিন প্রার্থী পরিমল মিস্ত্রি , অসীম চক্রবর্তী ও রীতা ব্যানার্জি। সভাপতি ছিলেন আজিহার রহমান।
জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বলেছিলেন সরকার চলবে পঞ্চায়েত পৌরসভা থেকে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে তিনি মানুষের চোখ দিয়ে রাজ্য কে দেখতে চেয়েছিলেন। মমতা ব্যানার্জি বলছেন , " এবার থেকে আমি একাই পঞ্চায়েত দেখবো"। একথা উল্লেখ করে সুজন চক্রবর্তী বলেন, অধিকারের কেন্দ্র হচ্ছে পঞ্চায়েত। তাকেই ধ্বংস করেছে তৃণমূলের সরকার।
ভোটের আগে এবারে গাড়িতে নয় হেলিকপ্টার সুস্থ ভাবে অবতরণে পা এবং কোমরে মমতা ব্যানার্জি'র চোট লাগা নিয়ে সাধারণ মানুষের মন্তব্যের কথা এবং ঢালাও দূর্নীতি করে নীচেরতলা থেকে উপর পর্যন্ত তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদের সম্পত্তি ও টাকার ভান্ডারের কথা উল্লেখ করে সুজন চক্রবর্তী বলেন, সপরিবারে জেলে যেতে হচ্ছে , বীর বাঘ এসব বলেও জেল যাত্রা থেকে অনুব্রত মণ্ডলকে বাঁচাতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী, মেয়ে সমেত জেলে থাকতে হচ্ছে। সপরিবারে জেলে অন্যান্যরা। পিসি ভাইপো কবে যাবেন এটাই এখন মানুষের প্রশ্ন। সুজন চক্রবর্তী বলেন , চোর ধর জেল ভরো বললেই তৃণমূলীরা রে রে করে বলে উঠছে কি আমাদের ধরার কথা বলছো ? যদি বলা হয় আমরা তো চোর ধরার কথা বলছি। তৃণমূলীরা বলছে , আমরা কি এতোই বোকা ? তোমরা আমাদের ধরার জন্য বলছো এটাও বুঝবোনা !
তিনি বলেন, বামফ্রন্টের আমলে কংগ্রেস অথবা তৃণমূলের জেলা পরিষদ কিংবা সমান সমান থাকাতে টসে জিতে তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত পাঁচ বছর ধরেই চলেছে। পুলিশ দিয়ে বাধা দেওয়া হয়নি। কারণ, মানুষের রায়কে মর্যাদা দিতে জানে বামফ্রন্ট।
দেশ ভাগের পর গ্রামকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়েছে বামফ্রন্ট সরকারের সময়েল পঞ্চায়েত। রাস্তা বিদ্যুৎ কিছুই ছিলোনা। বেশির ভাগ অঞ্চলে হয়েছে। আজ ধ্বংস হচ্ছে।
বামফ্রন্টের আমলে তৈরি টাউনশিপ , সরকপথ গুলির কথা এবং লাখো লাখো ছেলের কাজের চেষ্টার জন্য শিল্প গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন এখন শুধুই ধ্বংস করা হচ্ছে। একটাও বড় শিল্প উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেখা যাবেনা। বামফ্রন্টের শিল্প গড়ার কাজকে ধ্বংস করেছেন তিনি। গড়বার জন্য নয় তৃণমূল সরকার ধ্বংসের জন্য।
২০১৮ সালে মনোনয়ন পর্ব থেকে গণনা কেন্দ্র পর্যন্ত তৃণমূলের সন্ত্রাস ও জালিয়াতি করা হয় রাজারহাট পঞ্চায়েত সমিতি অঞ্চলে। বামফ্রন্টের প্রার্থীদের অপহরণ ও এলাকা ছাড়া করা হয়েছিলো। ২০২৩ সালে র নির্বাচনেও একই ভাবে সন্ত্রাস শুরু হলেও রাজারহাট পঞ্চায়েত সমিতির সব আসনে এবং গ্রমসভার আসন গুলিতে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে । গ্রাম গুলির মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্যে জোট বেঁধেছেন।
তৃণমূল থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে রাজারহাট - বিষ্ণুপুর ২ পঞ্চায়েতের নূর মহম্মদ তরফদার সহ ২০০ জন সমাবেশে এসে সিপিআইএম ' র সাথে যোগদান করেন। স্লোগান মুখরিত সমাবেশে তাঁদের হাতে লালপতাকা তুলে দেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য পলাশ দাশ। তিনি বলেন, তৃণমূল এবং বিজেপি পরস্পরকে হারাতে পারবে বলে মিথ্যা প্রচার তোলা হচ্ছে মিডিয়াতে। এই মিথ্যা প্রচার এখন আর মানুষের মনে দাগ কাটছেনা।
সাজানো ফলাফল সাজানো নির্বাচন করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু আজকের পরিস্থিতি পাল্টে গেছে । ২০১৮ সালের মতো নেই।
বামফ্রন্ট কংগ্রেস আইএসএফ জোটের সাথে রাজ্যের গ্রামে গ্রামে মানুষের জোটের কথা উল্লেখ করে পলাশ দাশ বলেন , ২০১৮ তে তৃণমূল যা যা করেছে সেটা ২০২৩ এ করা সহজ হবেনা।
কেন্দ্র থেকে বিজেপি এবং রাজ্য থেকে তৃণমূল সরকার হটানোর লড়াই শুরু হবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে । এদিন সুজন চক্রবর্তী হাবড়ার রাউতাড়া ও নকপুলে অপর দুই সভায় বক্তব্য রাখেন । তিনি ছাড়াও রাউতাড়াতে বক্তাদের মধ্যে ছিলেন পার্টির জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাবুল কর,এরিয়া কমিটির সম্পাদক মান্নান বিশ্বাস, সিআইটিইউ নেতা কৌশিক ভট্টাচার্য্য,যুব নেতা ঋতবাণ দে সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ৷ সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টির এরিয়া কমিটির সদস্য নুরুল হাসান।
হাবড়ার অপর সভাটি হয় নকপুলে। এই সভাতেও প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। নকপুলের সভাতে সুজন চক্রবর্তী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন পার্টির এরিয়া কমিটির সদস্য অশোক পাল, বাপি ভট্টাচার্য্য,মৌসুমী দাস সহ পার্টির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের প্রার্থী হিমাংশু মজুমদার,পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী জ্যোতিশঙ্কর গাঙ্গুলী,এরিয়া কমিটির সম্পাদিকা স্বপ্না ঘোষ সহ ব্লক এবং গ্রাম সভার প্রার্থীরা। নকপুল মোড়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টির এরিয়া কমিটির সদস্য অসীম ঘোষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করেই সভা গুলিতে ছিলো সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড়।
Comments :0