Corruption Civic

১৭ পৌরসভায় ১৮৫০ জন নিয়োগে দুর্নীতি, হাইকোর্টে জানালো সিবিআই

রাজ্য

২০১৪ সালের পর থেকে রাজ্যের ১৭টি পৌরসভায় মোট ১৮৫০ জন নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ। পৌর নিয়োগ দুর্নীতি মামলার চার্জশিটে বেআইনি চাকরির সংখ্যা জানালো সিবিআই। সম্প্রতি সিবিআই বিশেষ আদালতে এই চার্জশিট জমা দিয়েছে। ইডি’র তরফে আগেই হাইকোর্টকে জানানো হয়েছিল, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মতো পৌরকর্মী নিয়োগ দুর্নীতির ব্যাপকতা রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। পৌরসভাগুলিতে কর্মী নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছে। পৌর নিয়োগ দুর্নীতিতে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কোটি টাকার হদিশ পাওয়া গেছে। 

সিবিআই জানিয়েছে, এরমধ্যে দক্ষিণ দমদম পৌরসভায় সবচেয়ে বেশি বেআইনি নিয়োগ হয়েছে। এই পৌরসভায় দুর্নীতি নিয়োগের সংখ্যা ৩২৯ জন। সম্প্রতি সিবিআই দক্ষিণ দমদম পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান পাঁচুগোপাল রায়কে গ্রেপ্তার করেছে। এর আগেই পৌর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অয়ন শীলকে গ্রেপ্তার করেছিল সিবিআই। অর্থের বিনিময়ে এই নিয়োগ হয়েছে বলে জানিয়েছে সিবিআই। ১৭টি পৌরসভায় এখনও পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। কামারহাটি পৌরসভায় বেআইনিভাবে নিয়োগ হয়েছে ৩০৩ জন, বরানগর পৌরসভায় চাকরি দেওয়া হয়েছে ২৭৬ জনকে, টিটাগড় পৌরসভায় বেআইনি নিয়োগ হয়েছে ২২১ জন। এছাড়া বেআইনি নিয়োগের তালিকায় রয়েছে কাঁচড়াপাড়া, বাদুড়িয়া, হালিশহর, দমদম, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, নবদ্বীপ পৌরসভা। 

কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিসন বেঞ্চ এই মামলায় মন্তব্য করেছিল,  শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি এবং পৌরকর্মী নিয়োগে দুর্নীতির মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে। এটা অসৎ উপায়ে টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা। এই দুর্নীতি নিয়োগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তরুন প্রজন্ম। সমাজে এর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এই পৌরকর্মী নিয়োগে তদন্তের গভীরে যাওয়া উচিত। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত অয়ন শীলের যে স্ট্যাটাস রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে জমা দিয়েছিল ইডি, সেখানেই পৌরসভায় দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করা ছিল। অয়ন শীলের সল্টলেকের ফ্ল্যাট থেকেই পৌরকর্মী দুর্নীতির বহু নথি ও তথ্য উদ্ধার হয়েছিল। 

এই মামলায় প্রথমে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পৌরকর্মী নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্তের ওপর স্থগিতাদেশের জন্য সুপ্রিম কোর্ট গিয়েছিল রাজ্য সরকার। সুপ্রিম কোর্ট পৌরকর্মী নিয়োগ দুর্নীতির নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বহাল রেখেছিল। তবে শীর্ষ আদালত এই মামলার এজলাস বদলের নির্দেশ দিয়েছিল। ফলে এই মামলা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে শুনানির জন্য গিয়েছিল। বিচারপতি সিনহা এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বহাল রেখে মন্তব্য করেছিলেন, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ উঠছে। এব্যাপারে রাজ্য সরকারের উচিত দুর্নীতি নিয়োগ বন্ধ করতে পদক্ষেপ করা। 

আইনজীবী ফিরদৌস সামিম বলেন, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মতই পৌরকর্মী দুর্নীতিতে কোটি কোটি টাকা তোলা হয়েছে। এই টাকা কোথায় গেল তার খোঁজ শুরু হয়েছে। যেসমস্ত গরিব মানুষকে প্রলোভিত করে এই টাকা নেওয়া হয়েছে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। এই দুর্নীতির সঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের যোগ রয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment