Darjeeling

মমতা-সঙ্গ ছাড়লেন বিনয় তামাঙ

রাজ্য

Darjeeling

তৃণমূলের সৌজন্যে এবার দখলের রাজনীতি পাহাড়েও। সরকারি মদতেই অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টির কাউন্সিলরদের ভাঙিয়ে দার্জিলিঙ পৌরসভার দখল নিল অনিত থাপার দল, সঙ্গে তৃণমূল। অনিত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সঙ্গেই জোট তৃণমূলের।
পাহাড়ে এই দখলদারির রাজনীতির প্রতিবাদে ও গণতন্ত্র ধ্বংসের অভিযোগে বুধবারই শাসক তৃণমূলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করার কথা ঘোষণা করলেন পাহাড়ে মমতা ব্যানার্জির দলের অন্যতম মুখ বিনয় তামাঙ।

 হামরো পার্টি ভাঙিয়ে তৃণমূল ও অনিত থাপার দল বুধবার দার্জিলিঙ পৌরসভার দখল নেওয়ার পরেই তৃণমূল থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্তের কথা প্রেস বিবৃতি মারফত জানিয়েছেন বিনয় তামাঙ। তাঁর দাবি, পাহাড়ে এই সময়ে গণতন্ত্র গভীর সঙ্কটের মুখে রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, বহিরাগত নেতারা দূরে থেকে পাহাড়ের বেশ কিছু নেতাকে পরিচালিত করছেন। পরোক্ষভাবে তাঁরাই পাহাড়ের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। 


গত ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর কলকাতায় এসে তৃণমূল ভবনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর হাত থেকে দলের পতাকা নিয়েছিলেন বিনয় তামাঙ। সে সময় মোর্চা থেকে বিনয় তামাঙকে ভাঙিয়ে মমতা ব্যানার্জি তৃণমূলে নিয়ে এসেছিলেন। তৃণমূলে যোগ দিয়ে সেদিন বিনয় তামাঙ পাহাড়ে মমতা ব্যানার্জির হাত ধরেই উন্নয়ন ও গণতন্ত্র বিকশিত হওয়ার কথা বলেছিলেন। ঠিক এক বছরের মাথায় তৃণমূল সরকারের দিকেই গণতন্ত্র খতমের অভিযোগ এনে দল ছাড়লেন তিনি।


সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক সমন পাঠক এদিন জানান, আমরা দৃঢ়ভাবে এই দখলদারি প্রক্রিয়ার তীব্র নিন্দা করছি। এরাজ্যের শাসক তৃণমূল আর দিল্লির শাসক বিজেপি দু’পক্ষই পাহাড়ের অস্থিরতাকে জিইয়ে রাখতে চায়। তৃণমূল দল ভাঙাচ্ছে, বিজেপিও ওখানে উসকানি দিচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। দুই দলই একই খেলা খেলছে পাহাড়ের মানুষকে নিয়ে। অনীত থাপার দল এবং তৃণমূল কংগ্রেস জোট এর আগে জিটিএ দখল করার পরেই প্রথম বোর্ড সভা থেকে পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ড নিয়ে প্রস্তাবের কথা জানিয়েছে। সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলা কমিটির পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে গোটা জেলার সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে পাহাড়ের জনগণের কাছে ঐক্যবদ্ধ, সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।


রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, পার্টির প্রবীণ নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, এই পরিণতির কথা আমরা আগেই বলেছিলাম। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পাহাড়ে এই দল ভাঙানোর রাজনীতির আমদানি করা হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসই দায়ী এই অস্থিরতা তৈরি করার জন্য। অনিত থাপা তো প্রকাশ্যে গোর্খাল্যান্ডের কথা বলে যাচ্ছে, মমতা ব্যানার্জির দল জোটসঙ্গী। কোনও মৌলিক অবস্থান তৃণমূল নেয় না। বিজেপি আর তৃণমূল পাহাড়কে সঙ্কীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার করছে। তবে তৃণমূল থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছে বিনয় তামাঙ। ও যদি সেই অবস্থান প্রকৃতভাবেই নেয় তাহলে স্বাগত।
এদিন তৃণমূল ছাড়ার পরে বিনয় তামাঙ জানান, পাহাড়ের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও পাহাড়ের মানুষের সাংবিধানিক অধিকারের স্বার্থে তিনি কাজ করে যেতে ইচ্ছুক। যদিও বিনয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। এদিন সেবিষয়ে কোনও কিছুই স্পষ্ট করে না জানালেও বলেছেন, কিছুদিনের মধ্যেই আগামী পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্যে আনবেন। 


এদিনই অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টিকে সরিয়ে দিয়ে দার্জিলিঙ পৌরসভার দখল নিয়েছে অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা (বিজিপিএম) ও তৃণমূল। এদিন অনাস্থা ভোটে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার পক্ষের ১৬ জন কাউন্সিলরই উপস্থিত ছিলেন। অনাস্থা ভোটে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার পক্ষে দলীয় ১৪ জন কাউন্সিলর ও তৃণমূলে ২জন কাউন্সিলারের মিলিয়ে মোট ১৬টি ভোট। যদিও হামরো পার্টি এবং মোর্চা মিলিয়ে ১৫জন কাউন্সিলর অনুপস্থিত ছিলেন।


দার্জিলিঙ পৌরসভায় মোট ৩২টি আসন। তার মধ্যে ১৮টি আসনে জিতে বোর্ড গঠন করেছিল হামরো পার্টি। অন্য দিকে, অনীতের প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা ৯টি, তৃণমূল ২টি, বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা জিতেছিল ৩টি আসনে। যদিও এর পরে জিটিএ ভোটে লড়ার জন্য অনীত থাপার দলের এক কাউন্সিলর ইস্তফা দেন। সেই আসনে এখনও ভোট হয়নি, কাউন্সিলরের সংখ্যা কমে হয় ৩১। ফলে ৩১টি আসন বিশিষ্ট দার্জিলিঙ পৌরসভায় ১৬জন কাউন্সিলরের সমর্থন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে অনীত থাপা ও তৃণমূল জোট দখল নেয়। অনীত থাপা জানিয়ে দিয়েছেন দার্জিলিঙ পৌরসভার নতুন চেয়ারম্যান হচ্ছেন দীপেন ঠাকুরি। 


মাত্র দশ মাস অতিক্রান্ত হতে না হতেই দার্জিলিঙ পৌরসভা থেকে ক্ষমতাচ্যূত হলে হামরো পার্টি। ১৮টিতে জয়লাভ করে পৌরসভার দখল নিয়েছিল হামরো পার্টি। কিন্তু কিছু মাস যেতে না যেতেই হামরো পার্টির ছয় কাউন্সিলরকে ভাঙিয়ে নেয় তৃণমূল ও অনীত থাপার জোট। এইভাবে কাউন্সিলর ভাঙিয়ে বোর্ড পাহাড়ে নতুন প্রবণতা বলেই দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল।

Comments :0

Login to leave a comment