Drinking Water Crisis

তীব্র পানীয় জলের সঙ্কট মেদিনীপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে

রাজ্য

Drinking Water Crisis

চিন্ময় কর( পশ্চিম মেদিনীপুর) অপুর্ব মন্ডল (দক্ষিণ দিনাজপুর)

পানীয় জলের হাহাকার চলছে মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে। কোথায় নির্জলা গ্রাম আড়াই থেকে ৩ কিকোমিটার পথ গিয়ে লম্বা লাইন দিয়ে পানীয় জল সংগ্রহ করছেন মানুষ। আবার কোথাও পানীয় জলের দাবিতে পথ অবরোধ বিক্ষোভে শামিল হচ্ছেন মানুষ। প্রসাশনের হুঁশ নেই। জলের দাবিতে মানুষ হন্য হয়ে ঘুরলেও প্রশাসন নির্বিকার। টাকা বরাদ্দ হলেই পানীয় জলের মতো বিষয়ে কাজ হবে সেই আশ্বাস দিয়ে প্রসাশন দায় সারছেন। ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের।

কেশপুর ব্লকের লক্ষ্মণচক মৌজার শতাধিক পরিবার আজ ছয় মাস নির্জলা। গ্রামের একটি ডীপটিউবল সেই ডিসেম্বর মাস থেকে অকেজো। এতদিন বরো চাষের জমি থেকে সেচের মিনি ডীপটিউবল থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করে চালাতেন। এখন সেগুলিও বন্ধ। লক্ষ্মণচক মৌজার শতাধিক পরিবারকে ৩ কিমি দূরে অন্যগ্রাম থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করে আনতে হচ্ছে। সকালে ও বিকালে লাইন দিয়েও জল পাওয়া যায়না কারণ ওই গ্রামের মানুষ আগে জল নেয়। তাই ভরদুপুরে তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে জল সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। 
খড়্গপুর গ্রামীন ব্লকের বড়কোলা মৌজায়ও পানীয় জলের সঙ্কট। এখানকার পরিবারগুলিও পাশের গ্রাম থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করে আনেন। মেদিনীপুর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা শাসক দপ্তরের ৬০০ মিটার নাগালে বার্জ টাউন এলাকায় চরম পানীয় জলের সঙ্কটে মানুষ শহরের ব্যাস্ততম সড়ক পথ অবরোধ করে বিক্ষোভে সামিল হন পানীয় জলের দাবিতে। তিন দিন ধরে জল পাওয়া যায়নি বলে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ। পৌরসভাকে জানিয়েও বিকল্প ভাবে পানীয় জলের ট্রাঙ্কি পাঠানো হয়নি। বিকাল থেকে পানীয় জলের গাড়ি পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় অবরোধ তুলে নেয় বিক্ষোভ কারীরা।


শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরে নয় পানিয় জলের হাহাকার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা জুড়েই। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন, বংশীহারী, কুশমন্ডি,গঙ্গারামপুর, হরিরামপুর সহ প্রায় সব কয়টি ব্লকেই পানিয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জল প্রকল্পের পাইপ লাইন কিছু গ্রামে গেলেও হয়নি বাড়িতে সংযোগ। পানিয় জলের প্রকল্প কবে শেষ হবে ? শাসক দলের নেতা মন্ত্রীদের প্রতিশ্রুতিতে আর ভরসা নেই গ্রামের মানুষের। তাদের অভিযোগ পাইপ লাইনের ট্যাপে  জল আসেনা।  টিউবওয়েলও খারাপ হয়ে গিয়েছে। টাকা দিয়ে ড্রামের জল কিনে খেতে হচ্ছে বাধ্য হয়েই অধিকাংশ গ্রামেই। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে গ্রামের মার্ক টিউবওয়েল গুলি প্রায় নষ্ট হতে বসেছে। পুরনো পাইপ লাইন থাকলেও সংস্কারের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে জল। অনাবৃষ্টি ও তীব্র দাবদাহে ইতিমধ্যে জেলায় কয়েকজন ক্ষেত মজুরের মৃত্যু ঘটেছে। পানিয় জলের সঙ্কটে প্রায় গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। রাস্তা অবরোধ থেকে পঞ্চায়েতেও তালা ঝুলিয়েছে গ্রামবাসীরা। শাসক দলের পরিচালিত পঞ্চায়েত  প্রতিনিধিরা পানিয় জলের ব্যাপারে জন সাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের উপর দোষ চাপিয়ে পালাতে চাইছে। 


এদিকে জন সাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা জলস্তর নিচে নেমে যাওয়ার দোহাই দিয়ে গা ঝাড়া দিচ্ছে। গ্রামের গরিব মানুষ জল না পেয়ে পুকুরের জল ছেঁকেই কাজ চালাচ্ছে তপনের শ্রীবই, হরশুরা, ভেরেন্ডা, ভারিলা, লস্কর, আউটিনা সহ বহু গ্রামে জল আনতে বাসিন্দারা।  এক কিলোমিটার দূরে চলে যাচ্ছে মাঠের সাব মার্সিবল পাম্প থেকে জল আনতে। শ্রীবই গ্রামের বাসিন্দা রতন কিস্কু জানায় বর্ষার দুই তিন মাস গ্রামের কলে জল ওঠে। তার পর থেকেই জল সঙ্কট থাকে সারা বছর ধরেই। বহু অনুরোধ করেও বাড়ি বাড়ি পানিয় জলের সংযোগ হয়নি। ভাড়িলার বাসিন্দা লাটু বর্মন বলেন ভোটের আগে শাসক দলের নেতারা প্রতিশ্রুতি দিলেও বাড়িতে পানিয় জল পায়নি গ্রামের মানুষ। বংশীহারীর পাথর ঘাটার বাসিন্দা গৌতম ঘোষ বলেন পঞ্চায়েতের মানুষ সরকারি জল পায়না। গরিব ক্ষেত মজুর, শ্রমিকরাও বাধ্য হয়ে জল কিনে পান করছে। লস্কর হাটের বাসিন্দা দিলিপ বিশ্বাস বলেন পঞ্চায়েতের  জল প্রকল্পের মাধ্যমে জল পায় না। পায় শুধু প্রতিশ্রুতি। জেলা জুড়ে পানিয় জলের সঙ্কট প্রসঙ্গে জেলা  বামফ্রন্ট আহবায়ক নারায়ণ বিশ্বাস বলেন, গঙ্গারামপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় বাম আমলের তৈরি জল প্রকল্প থেকেই পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল পায় বাসিন্দারা। তিনি বলেন, সেই জল প্রকল্পের সংস্কারও করেনি দশ বছরে। ফলে অনেক জায়গায় জল আসছে না। নতুন জল প্রকল্পের শুধু প্রচার আর প্রতিশ্রুতিই দিচ্ছে বর্তমান সরকার। বাস্তবে জনগণ পানিয় জলের সঙ্কটেই আছেন। তিনি বলেন পানিয় জল প্রকল্পে দুর্নীতি হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার প্রকল্পের প্রচার করছে শাসক দল। যদি খরচই হয় তবে মানুষ জল পাচ্ছেনা কেন ? দশ বছর ধরে একটা পানিয় জলের প্রকল্প যারা তৈরি করতে পারেনা তাদের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। জেলা জুড়ে তীব্র জল সঙ্কট দেখা দিয়েছে আগামী দিনে ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হবে জনগণ। তিন বলেন, আমরা বামফ্রন্ট গতভাবে ভাবে জেলা শাসকের দপ্তর ঘেরাও করবো পানিয় জলের দাবিতে। 

Comments :0

Login to leave a comment