Sitaram Yeachury

দেশজুড়ে বিজেপি-কে হারানোই প্রধান লক্ষ্য, তৃণমূলকে হারাতে হবে বাংলায়

জাতীয়

দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষায় বিরোধী দলগুলি একটি সমবেত বোঝাপড়ায় পৌঁছেছে। তারই প্রতিফলন ‘ইন্ডিয়া’। সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি গণশক্তিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এটি কোনও নির্বাচনী জোট নয়। সর্বভারতীয় কোনও নির্বাচনী জোট হতেও পারে না। রাজ্যে রাজ্যে বাস্তবতা অনুযায়ী তা ঠিক হবে। জাতীয় স্তরে দেশের স্বার্থই প্রাধান্য পাবে। প্রধান কর্তব্য বিজেপি-কে পরাস্ত করা। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে বাংলায়, তাদের হারাতেও হবে বাংলায়।   
গণশক্তি: ২৬টি দল মিলে যে ‘ইন্ডিয়া’ তৈরি করল, তা কি একটি নির্বাচনী জোট? 
ইয়েচুরি: না, একদমই না। দলগুলির মধ্যে বোঝাপড়া। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র চরিত্র রক্ষা করতে একসঙ্গে কাজ করার বোঝাপড়া। দেশের সামনে এখন এটিই প্রধান বিষয়। ২৬টি দল এই বোঝাপড়ায় এসেছে যে ভারতের সংবিধান, গণতান্ত্রিক কাঠামো রক্ষা করতে হবে। আমি বৈঠকে বলেছিলাম নাম হোক ‘উই ফর ইন্ডিয়া’। ভারতকে রক্ষা করার জন্য আমরা একসঙ্গে লড়াই করব। এই ধারণার সঙ্গে অন্যরা একমত হলেও কথা আসে এটি স্লোগান হিসাবে ভালো, কিন্তু নাম দেবার ক্ষেত্রে শুধু ইন্ডিয়া হওয়াই ভালো। ইংরেজিতে শেষ অক্ষর হিসাবে ‘এ’ রয়েছে, তাই অ্যালায়েন্স। কিন্তু এটি নির্বাচনী সমঝোতা নয়। হতেও পারে না। কোনও সর্বভারতীয় অভিন্ন নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে না। তা রাজ্যে রাজ্যে হবে। যেমন, বাংলায় বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস উভয়কেই হারাতে বামপন্থীরা লড়াই করবে। আমরা কংগ্রেস ও অন্যান্য সহযোগী শক্তিগুলির সমর্থন চাইব। আবার, কেরালায় বামপন্থীদের সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ’র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। রাজ্যগুলির সুনির্দিষ্ট বাস্তবতা রয়েছে। 
গণশক্তি: তাহলে এই মঞ্চের কাজ কী হবে? 
ইয়েচুরি: গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে, নীতির প্রশ্নে দেশজুড়ে প্রচার চালানো, জনগণকে সমবেত করা। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের বিরুদ্ধে, বুলডোজার রাজনীতির বিরুদ্ধে, গণহত্যার ডাক দেওয়া হচ্ছে তার বিরুদ্ধে, অর্থনৈতিক আক্রমণের বিরুদ্ধে, জাতভিত্তিক জনগণনার দাবিতে, মোদী সরকারের কাজকর্মের বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় প্রচার গড়ে তোলা। মানুষকে সচেতন ও সমবেত করাই হবে লক্ষ্য। এতগুলি দল একসঙ্গে বসেছে বলে বিজেপি যে আতঙ্কিত তার প্রমাণ সেদিনই কিছু দলকে জোগাড় করে নতুন করে আবার এনডিএ’র বৈঠক করা হয়েছে। এতদিন বলা হচ্ছিল, মোদী একাই যথেষ্ট, বিরোধীদের তিনি একাই পাল্লা দিতে পারেন। তাহলে হঠাৎ এতদিন পরে এনডিএ’র কথা মনে পড়ল কেন? এতে বোঝা যাচ্ছে ওরা দেওয়াল লিখন পড়তে শুরু করেছে। 
গণশক্তি: বিজেপি ও কিছু মহল থেকে বলা হচ্ছে, এই দলগুলির অনেকেরই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাহলে তারা একসঙ্গে লড়বে কী করে? 
ইয়েচুরি: ভারতে এই ঘটনা নতুন নয়। ২০০৪ সালে বামপন্থীরা লোকসভায় ৬১ আসন জিতেছিল। তার মধ্যে ৫৭টিতে আমরা কংগ্রেসকে পরাস্ত করেছিলাম। কিন্তু তারপর জাতীয় স্বার্থে আমরা ইউপিএ সরকারকে সমর্থন করেছিলাম। আমরা সমর্থন না করলে ইউপিএ সরকার হতো না, মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হতেন না। এর মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। রাজ্যস্তরে রাজ্যের প্রশ্ন মীমাংসিত হবে। দেশের প্রশ্ন জাতীয় স্তরে মীমাংসা করতে হবে। জাতীয় স্তরে দেশের স্বার্থই প্রাধান্য পাবে। 
গণশক্তি: সিপিআই(এম)’র রাজনৈতিক লাইন স্থির হয়েছে পার্টি কংগ্রেসে। কান্নুরে গত বছরে সেই কংগ্রেসে গৃহীত লাইনের সঙ্গে এই বোঝাপড়া কি সঙ্গতিপূর্ণ? 
ইয়েচুরি: অবশ্যই সঙ্গতিপূর্ণ। কান্নুরে গৃহীত রাজনৈতিক লাইনে আমরা প্রথমেই বলেছিলাম প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হলো বিজেপি-কে বিচ্ছিন্ন ও পরাস্ত করা। রাজনৈতিক লাইনের শেষ বাক্যে আমরা বলেছিলাম, সেই লক্ষ্যে রাজ্যে রাজ্যে যথাযথ নির্বাচনী কৌশল গ্রহণ করতে হবে। ঠিক সেই লক্ষ্যেই সিপিআই(এম) চলতে চাইছে। 
গণশক্তি: পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস সদ্যই পঞ্চায়েত ভোটে গণতন্ত্রের ওপরে আক্রমণ করেছে। কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছে, বেঙ্গালুরু বৈঠকে তৃণমূল থাকল আবার সিপিআই(এম)-ও থাকল কেন? 
ইয়েচুরি: তৃণমূল কংগ্রেস আছে বলে আমরা বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মঞ্চে যাব না, এমন কথা পার্টি কংগ্রেস বলেনি। পার্টির রাজনৈতিক লাইন তা নয়। তৃণমূলকে হারাতে হবে বাংলায়। সেখানেই তৃণমূলের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে, সেখানেই তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে, সেখানেই তাদের পরাস্ত করতে হবে। কিন্তু গোটা দেশেই বিজেপি-কে হারাতে হবে। কেন্দ্রের সরকার থেকে বিজেপি-কে সরাতে হবে। ব্যতিক্রম একমাত্র কেরালায়, সেই রাজ্যে কংগ্রেসকেও আমাদের হারাতে হবে। এই নয় যে সেখানে এলডিএফ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত থাকবে। নির্বাচনী লাইন রাজ্যে রাজ্যে পৃথক হবেই। প্রশ্ন হলো বিজেপি-বিরোধী ভোট সর্বোচ্চ সম্ভব একত্রিত করা। বিরোধীদের ভোট ভাগ হয়ে বিজেপি যেন বাড়তি সুবিধা না পায়। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-বিরোধী, তৃণমূল-বিরোধী ভোটকে সর্বোচ্চ সম্ভব একত্রিত করতে হবে। তেলেঙ্গানায় আমরা হয় বিআরএস অথবা কংগ্রেসের সঙ্গে যাব। অন্ধ্রে, ওডিশায় আরেক রকম কৌশল নিতে হবে। প্রত্যেক রাজ্যের বৈশিষ্ট্য ও সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় রেখে অবস্থান নিতে হবে। যেখানকার ময়দানের বাস্তবতা যা, সেই অনুযায়ী লড়াই হবে। নির্বাচন-উত্তর বোঝাপড়া হবে তখনকার পরিস্থিতির বিচারে।

Comments :0

Login to leave a comment