Editorial

চোর সাম্রাজ্যের আঢ্য-শাহজাহান পর্ব

সম্পাদকীয় বিভাগ


মমতা ব্যানার্জির স্নেহধন্য এবং অভিষেক ব্যানার্জির প্রাণপ্রিয় নবীন নেতা সন্দেশখালি তথা সুন্দরবন অঞ্চলের বেতাজ বাদশা ‘শাহজাহান ভাই’ আছেন বহাল তবিয়তেই। মমতা ব্যানার্জির পুলিশ প্রত্যাশিতভাবেই যথারীতি নাকে সরষের তেল দিয়ে শীত ঘুমে। ইডি অফিসার এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর রক্তাক্ত হামলার কুশীলবরা দিব্যি ঘুরে বেড়ালেও তাদের কারো কোনও খোঁজ পায়নি পুলিশ। নিরীহ গোবেচারা পুলিশ এখন থানায় বসে উপরওয়ালার নির্দেশের প্রহর গুনছে। একবিংশ শতাব্দীর এই অত্যাধুনিক ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থার কালেও মমতা ব্যানার্জির পুলিশ নাকি জানে না শাসক দলের ‘পপুলার লিডার’ কোথায় কীভাবে আত্মগোপন করে আছে। শাহজাহানের হুকুমে চলা ন্যাজাট থানার কাছে শাহজাহানের যাবতীয় ডেরা ও গতিবিধি অজানা থাকার কথা না। তবুও তারা নাকি কিছুই জানে না। তার খোঁজে পুলিশ ঠিক কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে বা আদৌ নিয়েছে কিনা স্পষ্ট নয়। যদিও গোপন ডেরা থেকে চন্দনদস্যু বীরাপ্পান বা ফুলন দেবীদের কায়দায় তিনি পোষা তৃণমূল বাহিনীকে অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। বীরের মতো জানিয়েছেন সকলকে একদিন না একদিন মরতেই হবে। অতএব মৃত্যুভয়ের কোনও কারণ নেই। নিজে ভয়ে পালিয়ে বেড়ালেও পোষাবাহিনীকে মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে লড়ে যাবার বার্তা দিয়েছেন। অর্থাৎ ইডি-কে আটকাতেই হবে। চোরাই মালের হদিশ যাতে কিছুতেই না পায়।
সন্দেশখালির ত্রাস, যার কথায় স্থানীয় মানুষ ওঠে আর বসে সেই ‘শাহজাহান ভাই’-র আছে নিজস্ব বাইকবাহিনী। দুই শতাধিক বাইক ও অস্ত্র সরবরাহ করে এই বাহিনী গড়ে তুলেছে শাহজাহান। এটাই তার সমান্তরাল প্রশাসন। এখানে রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশের শাসন চলে না, চলে শাহজাহানের শাসন। এই বাহিনীকে ব্যবহার করে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে সে। অর্থ আর সম্পদের কোনও সীমাপরিসীমা নেই। ভেড়ি, ইটভাটা, বাজার, শপিংমল,বাগানবাড়ি, হোটেল, রিসর্ট ইত্যাদি এলাকার যা কিছু সবই শাহজাহানের। মমতা জমানার বারো বছরে মহান সাফল্য।
শাহজাহান সাম্রাজ্যের অদূরে বনগাঁয় উন্মোচিত হয়েছে আরও এক সাম্রাজ্যের। এই সাম্রাজ্য মমতার প্রিয় বালু শাগরেদ শঙ্কর আঢ্যর। বনগাঁর প্রাক্তন পৌর প্রধান এই শঙ্কর ভারতের বৃহত্তম রেশন কেলেঙ্কারির মাথা জ্যোতিপ্রিয়র ২০ হাজার কোটি টাকা পাচারের অন্যতম ম্যানেজার। দশ বছর ধরে মমতার সৌজন্যে গরিবের রেশনের টাকা মেরে অন্তত ৯০টি বিদেশি মুদ্রার লেনদেন সংস্থার মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করত এই শঙ্কর। আঢ্য পরিবারের সকলের নামে খোলা হয় এই বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের সংস্থাগুলি। অনুমান এই সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে শঙ্কর বালুর দশ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
এতকাণ্ড সামনে আসার পরও পিসি মৌনব্রত পালন করছেন। ভাইপো আছেন গোসা ঘরে। একটা ব্যাট করে চলেছেন সারদা কেলেঙ্কারির বিপুল অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাধারণ সম্পাদক। চোরে চোরে মাসতুতো ভাই।

Comments :0

Login to leave a comment