EDITORIAL PARLIAMENT

অমৃত আকাল

সম্পাদকীয় বিভাগ

৫৬ ইঞ্চি ছাতির মুখে যত হামবড়া ভাবই থাকুক না কেন, যত হম্বিতম্বি, হুঙ্কারই ছাড়ুন না কেন কার্যক্ষেত্রে তিনি এবং তাঁর সেনাপতি যে অষ্টরম্ভা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে দুই যুবক। চার দফায় কঠোরতম নিরাপত্তা বেষ্টনি পেরিয়ে নতুন সংসদের দর্শক গ্যালারিতে পৌঁছে গিয়েছেন যে দুই যুবক তারাই লাফ দিয়ে সাংসদদের টেবিলের উপর দিয়ে প্রায় অধ্যক্ষের আসনের কাছে চলে আসে। তারপর সঙ্গে আনা কেনেস্তারা থেকে হলুদ রঙের গ্যাস ছড়িয়ে দিতে থাকে। ভাগ্যিস তাদের কাছে কোনও মারণাস্ত্র ছিল না, ছিল না বিষাক্ত গ্যাস। হামলা করার বা কাউকে আঘাত করারও কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। তারা শুধু দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়ে‍‌ছিল তাদের ক্ষোভের, দুর্দশার, বেকারিত্বের। যদি তারা সন্ত্রাসবাদী হতো, যদি আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে আনত বা কেনেস্তরায় বিষাক্ত গ্যাস থাকত অথবা জীবাণু অস্ত্র থাকত তাহলে গণতন্ত্রের জননীর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কি হাল হতো? ভেবেই শিউরে উঠছেন সাংসদরা। এই যদি  তানাশাহীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা হয় তাহলে হাজার কোটি টাকার এই অমৃত সৌদ সাংসদদের জন্য মরণ কূপ হতে কতক্ষণ? বোঝাই যাচ্ছে যারা বেশি গর্জায় তারা বর্ষায় না।
মোদী জমানার অমৃতকালের অমৃত সৌধ নতুন সংসদ ভবন। হাজার কোটি টাকা খরচ করে আপন কীর্তি জগৎ সভায় প্রদর্শনের এই চোখধাঁধানো নির্মাণ নাকি নেহরু যুগকে মুছে ফেলে মোদীযুগ খোদাই করবে। কোভিডকালে লকডাউনের সময় যখন গোটা দেশের সবকিছু স্তব্ধ তখন দিন-রাত এক করে কাজ হয়েছে এই ভবন নির্মাণের। অর্থাভাবে যখন হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেন মিলছে না, পাওয়া যাচ্ছে না ভেন্টিলেটর, অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছে হাজার হাজার অসহায় মানুষ তখন কিছু টাকার অভাব হয়নি এই প্রকল্পের। সব নিষেধাজ্ঞা থেকে একমাত্র ছাড় ছিল এই প্রকল্পের। মোদীযুগের আহ্বানে অন্ধ সরকার তাই যা কিছু পুরানো তাকে নির্মূল করে নতুন ভবনকে সাজিয়েছে একেবারে নতুনভাবে। এমনকি নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেই নাকি পুরানো ভবনকে শতযোজন পেছনে ফেলে নতুন ভবন অত্যাধুনিক হয়ে উঠেছে।
আদিবাসী রাষ্ট্রপতিকে অনাহুত রেখে সাধু-সন্ন্যাসীদের ডেকে ব্রাহ্মণ্যবাদী উপাচারে মোদী মোদী ধ্বনি দিয়ে উদ্বোধন হয়েছে নতুন ভবন। কিন্তু বাইরের এই মোদীময় জাঁকজমক আর চাকচিক্যের আড়ালে নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি যে ফসকা গেরো হয়ে রয়েছে তা জানাই যেত না যদি দুই যুবক এমন কাণ্ড ঘটিয়ে না ফেলত। লক্ষণীয় এমন ভয়ঙ্কর ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও মুখে কুলুপ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর। ইজরায়েলে হামাসের হামলার খবর শুনেই যে মোদী হামাসের বিরুদ্ধে ও ইজরায়েলের পক্ষে জোরালো বিবৃতি দেন তাঁর এই নীরবতা মোটেই স্বাভাবিক আচরণ নয়। আর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা যার দায়িত্ব সেই অমিত শাহ কি আড়াল করতে চাইছেন নীরবতার মধ্য দিয়ে। ২২ বছর আগে যে দিন পুরানো সংসদ চত্বরে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল ঠিক সেইদিনই নতুন ভবনে ঘটেছে এই ঘটনা। হামলার হুমকি ছিল, গোয়েন্দা সতর্কতাও ছিল তাহলে কেন এমন ঢিলেঢালা নিরাপত্তা শাহ জবাব দেবেন না? দুই যুবককে যে বিজেপি সাংসদ সংসদে ঢোকার অনুমতি দিয়েছিলেন তিনি কেন দেশবাসীর কাছে জবাব দেবেন না? ২০১৯ সালের পুলওয়ামার মতো এবারই ভোটের আগে তেমন কোনও ছক কষা হয়েছিল কিনা সেটাই বা খতিয়ে দেখা হবে না কেন? তবে সবকিছুকে ছাড়িয়ে যে নির্মম সত্য প্রকটভাবে উঠে এসেছে সেটা হলো দেশের যুব সমাজের সামনে অনিশ্চয়তা, অসহায়তা, বেকারিত্বের হতাশা।

Comments :0

Login to leave a comment