EDITORIAL YOGI

গেরুয়া যোগীর মনু শাসন

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ

হিন্দু রাষ্ট্রের উপযোগী আদর্শ প্রশাসনিক ও সামাজিক ব্যবস্থা তৈরির অন্যতম পরীক্ষাগার হিসেবে অনেক আগেই উত্তর প্রদেশকে বেছে নিয়েছে আরএসএস। সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর দায়িত্ব বর্তেছে হিন্দুত্ববাদের অন্যতম আইকন যোগী আদিত্যনাথকে। এর আগে কোনও গেরুয়া বসনধারী মঠের সন্ন্যাসীকে কোনও রাজ্যের রাজনৈতিক-প্রশাসনিক শীর্ষ পদে দেখা যায়নি। হিন্দু রাষ্ট্রচালকরা ঠিক কেমন হবেন বা হতে পারেন তার নমুনা হিসেবে যোগীকে হাজির করেছিল আরএসএস। তিনি সেই দায়িত্ব পালনে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তাঁর রাজ্যে তিনি হিন্দু রাষ্ট্রের ও হিন্দুত্ববাদী সমাজের অনেক নমুনা বা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। রাজ্য প্রশাসনের সর্বস্তরে আরএসএস’র অনুগামীদের দিয়ে ভরানো হয়েছে। প্রশাসনের কাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে হিন্দুত্ববাদী উপাচারের রমরমা। সংবিধানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গোটা পুলিশবাহিনীকে কার্যত সঙ্ঘবাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। আরএসএস-এর সঙ্গে প্রশাসনের দূরত্ব এখন প্রায় নেই বললেই চলে।
এহেন উত্তর প্রদেশে যোগী শাসনে ক্রিমিনালদের স্বর্গরাজ্য। আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নে দেশের সবচেয়ে খারাপ রাজ্যের একটি। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ, বি‍‌শেষ করে দলিত মেয়েদের বিরুদ্ধে হিংসা, যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন সর্বাধিক উত্তর প্রদেশে। প্রতিদিনই এই রাজ্যের কোনও না কোনও জায়গায় দলিত কন্যারা ধর্ষণ-খুনের শিকার। ঘটনা যত নৃশংস, অমানবিক ও বর্বর হোক না কেন পুলিশের ভূমিকা প্রায় শূন্য। অপরাধী যদি উচ্চবর্ণের বা সঙ্ঘ-বিজেপি ঘনিষ্ট হয় তাহলে তাদের রক্ষা করাই হয়ে ওঠে প্রধান কর্তব্য। ভারতের বুকে নারীদের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগের, সবচেয়ে বিপজ্জনক রাজ্য উত্তর প্রদেশ। সরকার কার্যত অপরাধীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে বসে আছে। মহিলাদের রক্ষায় পুরোপুরি ব্যর্থ যোগী সরকার এখন মহিলাদের মনুবাদী অনুশাসনের অধীনে গৃহে অন্তরীণ থাকার পরোক্ষ পরামর্শ দিয়েছে। আপাতত রাতের জন্য, পরে হয়ত দিনেও মেয়েরা যাতে রাস্তায় না বেরোয় তার ফতোয়া জারি হবে।
সম্প্রতি ছাত্রীদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধ এতটাই বেড়ে গেছে এবং পথে-ঘাটে কোথাও ছাত্রীদের নিরাপত্তা না থাকায় সরকার ঘোষণা করেছে ছাত্রীরা সন্ধ্যার পর কোচিং ক্লাসে যেতে পারবে না। কারণ সন্ধ্যার পর রাস্তায়, বাসে, বাসস্ট্যান্ডে, জন শৌচালয়ে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। ছাত্রীরা সেখানে নিরাপদ নয়। পুলিশ দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়ে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিতে অপারগ। তাই ফতোয়া জারি। আসলে মেয়েদের শিক্ষা থেকে দূরে রাখার এটা একটা কৌশল।
অপদার্থ যোগী সরকার চাইলে তামিলনাডু থেকে শিখে আসতে পারে কীভাবে সেখানে ছাত্রী, নারী শ্রমিক ও সাধারণ নারীদের দিনে-রাতে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মেয়েরা রাতে শিফটে কারখানায় কাজ করে। রাতে তাদের জন্য বাসের ব্যবস্থা আছে। আসলে সভ্য সমাজ থেকে যারা বহু যোজন দূরে অবস্থান করে তারা যদি শাসক হয় তাহলে এমনটা হবেই।

Comments :0

Login to leave a comment