ISRAEL JUDICIAL PROTEST

বিচারবিভাগকে পঙ্গু করতে বিল পাশ ইজরায়েলে, তুঙ্গে প্রতিবাদ

আন্তর্জাতিক

এভাবেই তেল আভিভে নেমেছে বিক্ষোভ।

গণতন্ত্রকে প্রসারিত করতে হবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সিদ্ধান্তই শেষ কথা হবে। বিচারবিভাগ আইনসভার সিদ্ধান্তকে কাটাছেঁড়া করতে দেওয়া যাবে না। মুখ্যত এই যুক্তিতেই বিচারবিভাগীয় সংস্কারে বিল পাশ করল ইজরায়েল। দেশের ভেতর এই সংস্কারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ গত কয়েকমাস ধরে টানা চলেছে প্রায় প্রতিটি বড় শহরে।  

বিরোধী শূন্য সংসদে বিচারবিভাগীয় সংস্কারের এই বিল পাশ করল বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার। ফের তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে ইজরায়েলে। ফের রাস্তাজুড়ে বিক্ষোভের প্রস্তুতি তুঙ্গে উঠেছে এই ইহুদি আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রে। 

নেতানিয়াহু সরকারের একাধিক যুক্তির সঙ্গে ভারতে নরেন্দ্র মোদী সরকারের স্বরের মিলও ধরা পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে একাধিক সংঘাতে মোদীর মন্ত্রীরা হুঁশিয়ারির সুরে বলে গিয়েছেন, বিচারপতিরা নির্বাচিত নন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। সংসদের সিদ্ধান্ত এবং বিচারপতি নিয়োগে সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হওয়া উচিত। 

ইজরায়েলের বিচারবিভাগীয় সংস্কারে বিচারপতি নিয়োগে সরকারকেই চরম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদীরা বলছেন, জায়নবাদী রাষ্ট্রে অন্তত বিচারপপতি নিয়োগ হত কমিটির মাধ্যমে। সেখানে সরকারি প্রতিনিধিদের পাশাপাশি রাখতে হতো বিশেষজ্ঞ এবং বিচারবিভাগের প্রতিনিধিদেরও। নতুন আইনে কমিটিতে সরকারের প্রতিনিধিদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। 

প্রতিবাদীদের বক্তব্য, কোনও কারণে বিরোধ বাধলেও বিচারবিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ রেখে নিজের সিদ্ধান্তকে আইনসিদ্ধ বলে পাশ করাতে মরিয়া প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তার জন্যই এমন সংস্কার। 

এশীয় ভূখণ্ডে আমেরিকার এক নম্বর সহযোগী ইজরায়েল। বরাবর দখলদার এই রাষ্ট্র প্যালেস্তাইনের একের পর এক এলাকা দখল করে গিয়েছে কয়েক দশক ধরে। কিন্তু নেতানিয়াহুর এই সরকার ইজরায়েলের মতো দখলদার রাষ্ট্রের নিরিখেও ‘সবচেয়ে দক্ষিণপন্থী, আগ্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত। চলতি বছরেই প্যালেস্তাইনে ঢুকে পড়া ইজরায়েলের সেনার গুলিতে প্যালেস্তানীয়দের মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় একশো ছুঁয়েছে।  দেশের ভেতর প্রতিবাদের জেরে বিচারবিভাগ আপত্তি তুলেছে প্যালেস্তাইনের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিতে সেনা ঘাঁটি বানানোর সিদ্ধান্তে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনি সংস্কার এই বাধা হটানোর জন্যও। 

বিভিন্ন সময়ে ইজরায়েলের বিচারবিভাগ সরকারি সিদ্ধান্তে বাধা দিয়েছে ‘যুক্তির বিচারে অসঙ্গত’ আখ্যা দিয়ে। নতুন সংস্কারে বিচারবিভাগ এমন কোনও আখ্যা কোনও সরকারি সিদ্ধান্তকে দিতে পারবেন না। 

লক্ষ্যণীয়, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা বললেও বাস্তবে বিরোধীশূন্য করার কৌশলে জাতীয় আইনসভা চালিয়েছেন নেতানিয়াহু। বিলের বিপক্ষে থাকা বিরোধীদের ওয়াকআউট করে বেরিয়ে যেতে হয়েছে। বিরোধীশূন্য আইনসভায় পাশ হয়েছে এই বিল। প্রতিবাদীরা মনে করাচ্ছেন, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের ধারণায় বিরোধীদের গুরুত্ব রয়েছে। সে কারণেই আইনসভায় বিরোধীরা থাকেন, তাঁদের কাছে জবাবদিহি করতে হয় সরকারকে। আবার সরকার, আইনসভা এবং বিচারবিভাগের আলাদা এক্তিয়ার নির্দিষ্ট থাকে। এই ব্যবস্থাই তুলে দিচ্ছেন নেতানিয়াহুর মতো নেতারা। 

বাস্তবে ইজরায়েলের নেতানিয়াহুর সঙ্গে ভারতে নরেন্দ্র মোদী সরকারের পরিচালন পদ্ধতির সঙ্গে বহু ক্ষেত্রে তুলনা চলে আসছে। আর তুমুল এই বিতর্কে বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র প্রসারের স্বঘোষিত রক্ষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নীরব। আমেরিকার এই নীরবতা চোখ এড়াচ্ছে না বহু অংশেরই। 

Comments :0

Login to leave a comment