Pahalgam Sajad Ahmad Bhat

পিঠে করে নামিয়েছেন আহত পর্যটককে, মানবিকতাকেই আগে রাখছেন সেই সাজাদ

জাতীয়

বৈসরন থেকে পর্যটককে এভাবেই নামিয়েছিলেন সাজাদ আহমেদ ভাট। ছবি সোশাল মিডিয়া থেকে

''বৈসরনে গুলি চলেছে জেনেছিলাম দুপুর সাড়ে তিনটেয়। কয়েকজন মিলে পৌঁছেছিলাম। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন অনেকে। তাঁদের জল দিলাম তখনই। হাঁটতে পারছিলেন না যাঁরা, তাঁদের তুলে আনার চেষ্টা করছি তখন। ... মানবিকতা তো ধর্মের আগে।’’
গত মঙ্গলবারের অভিজ্ঞতা এভাবেই জানাচ্ছেন সাজাদ আহমেদ ভাট। দুর্গম বৈসরনের রাস্তায় পিঠে আহত এক পর্যটককে নিয়ে যাঁর নিচে নামার সেই ছবি ছড়িয়ে পড়েছে বৃহস্পতিবার। 
বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র পহেলগাম থেকে বৈসরনের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। খাড়া রাস্তা, এবড়ো খেবড়ো, ফলে যান চলাচলের ব্যবস্থা নেই। ভরসা মুখ্যত টাট্টুঘোড়া বা স্থানীয় ভাষায় ‘পনি’। পর্যটকদের বৈসরনে পনিতে চড়িয়ে নিয়ে যান স্থানীয়েরা। 
বৈসরণে সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে নিহতের তালিকায় রয়েছেন সৈয়দ আদিল হুসেন শাহও। তিনিও পনিচালক। বুধবার অনন্তনাগ জেলার হপতানরে তাঁর শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছিলেন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের ওমর আবদুল্লাও। পর্যটকদের জন্যই প্রাণ দিতে হয়েছিল তাঁকে। 
বৃহস্পতিবার সাজাদ আহমেদ ভাট জানিয়েছেন তাঁকে দ্রুত এলাকায় যেতে বলেছিলেন পহলগাম পনি অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল ওয়াহিদ। ভাট তীব্র আক্ষেপে বলেছেন, ‘‘পর্যটকরা আসেন বলে আমাদের ঘরে আলো জ্বলে। তাঁরা আমাদের অতিথি। তাদের সাহায্য করা আমদের দায়িত্ব। কিন্তু মঙ্গলবার যে দৃশ্য দেখেছি, যেভাবে পরিজনরা কাঁদছিলেন, দেহ পড়ে ছিল মাটিতে, আহতেরা চিৎকার করছিলেন- চোখে জল এসে গিয়েছে।’’
সেনা বা বাহিনীর আগে স্থানীয়রাই ছুটে গিয়েছিলেন গুলির শব্দ পেয়ে। ‘অল টেরেন ভেহিকল’ (এটিভি) বা সর্বত্র যেতে পারে এমন বিশেষ যানও চলাচল করে এলাকায়। স্থানীয় ‘এটিভি’ চালকদের একজন ইরশাদ আহমেদ জানিয়েছেন নৌবাহনীর নিহত আধিকারিক বিনয় নারওয়ালকে তিনিই নামিয়েছেন নিচে। নারওয়ালের স্ত্রীকে তখন সাহস দিয়ে বলেছিলেন, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে’। হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় এই নৌসেনা আধিকারিককে। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। 
স্থানীয়দের সহায়তার কথা বলছেন ওই দিন বৈসরনে নিহত বা আহত পর্যটকদের পরিবারের সদস্যরাও। মহারাষ্ট্রের থানে থেকে পরিবার নিয়ে গিয়েছিলেন সঞ্জয় লেলে (৫০), হেমন্ত জোশী (৪৫) এবং অতুল মোনে (৪৩)। তিনজনকেই হত্যা করেছে সন্ত্রাসবাদীরা। সম্পর্কে ভাই তাঁরা। 
অতুল মোনের স্ত্রী অনুষ্কা মোনে কাঁদতে কাঁদতেই বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘‘এই সন্ত্রাসবাদীদের শাস্তি চাই। সবচেয়ে কঠোর শাস্তি চাই। কিন্তু স্থানীয় মানুষ যেভাবে এগিয়ে এসেছেন তাকে ভোলা যাবে না।’’ থানের বাড়িতে তাঁর পরিজনেরা বলেছেন, ‘‘শাস্তি চাই সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু দাঙ্গা চাই না।’’

Comments :0

Login to leave a comment