প্রায় তিন মাস আগে গাজায় ইজরায়েলি গণহত্যা অভিযান শুরু হবার পর যতদিন গেছে পরিস্থিতি ততই জটিল হয়েছে। হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে ইজরায়েলের সেনারা ইতিমধ্যেই প্রায় ২৩ হাজার প্যালেস্তাইনবাসীকে খুন করেছে। এদের মধ্যে প্রায় ৯ হাজারই শিশু। এইভাবে দিনের পর দিন শিশু ও নারী সহ নিরীহ মানুষ খুন করার এই অভিযানে ইজরায়েলের প্রধান সহযোগী আমেরিকা। অস্ত্র-অর্থ সহ সমস্ত দিক থেকে দৃঢ়তার সাথে ইজরায়েলকে গণহত্যায় মদত জুগিয়ে যাচ্ছে তথাকথিত বিশ্বের স্বঘোষিত মানবাধিকার রক্ষাকারী আমেরিকা। গাজাকে গোলা-বোমার আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে, অধিবাসীদের মেরে বিতাড়িত করে গোটা গাজায় দখলদারি কায়েমের লক্ষ্যে চলছে এই বিরামহীন ধ্বংস অভিযান। এবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই মার্কিন ও তার সহযোগী দেশের সাহায্য সহযোগিতা না পেলে ইজরায়েল এই গণহত্যার দুঃসাহস দেখাতে পারত না। আমেরিকা শুধু অর্থ-অস্ত্র নিয়ে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়ায়নি, কূটনৈতিকভাবেও পুরোপুরি ইজরায়েলের পাশে। এমনকি মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব বার বার তেল আবিব গিয়ে ইজরায়েলের মনোবল চাঙ্গা করে আসছেন। ফের যাচ্ছেন তিনি ইজরায়েলে। এই নিয়ে চারবার। বোঝাই যাচ্ছে যুদ্ধটা যতটা না ইজরায়েলের তার থেকেও বেশি আমেরিকার।
ইজরায়েলের অতি দক্ষিণপন্থী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যদিও বুক ফুলিয়ে বলছেন যুদ্ধ হবে দীর্ঘস্থায়ী। বাস্তবে কিন্তু উদ্বেগও বাড়ছে ক্রমবর্ধমান হারে। গাজায় গণহত্যার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া এখন শুধু গাজায় সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে গোটা পশ্চিম এশিয়ায়। সংঘাত নিকটবর্তী অঞ্চলেও। ফলে অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা বাড়ছে। হেজবুল্লা প্রভাবিত লেবাননের সঙ্গেও ইজরায়েলের উত্তেজনা বাড়ছে। উভয় তরফেই হামলার ঘটনা বাড়ছে। ইজরায়েলি ড্রোন হামলায় হামাস উপপ্রধানের মৃত্যুর ফলে উত্তেজনা তুঙ্গে। হেজবুল্লা বদলা নেবার কথা ঘোষণা করেছে। উত্তেজনা ছড়িয়েছে ইরাক ও ইরানেও। ইরানে শক্তিশালী বিস্ফোরণে শতাধিক মৃত্যুর ঘটনা নতুন করে সংঘাত বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তেমনি ইরাকে মার্কিন হামলায় এক মিলিশিয়া কমান্ডারের মৃত্যুও নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে লোহিত সাগরে ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত বাণিজ্যিক জাহজের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী। ফলে বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান রুট বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। অধিকাংশ জাহাজ এই রুট ত্যাগ করে আফ্রিকা ঘুরে যাতায়াত করছে। ফলে পরিবহণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে অনেকটা। সঙ্কট বাড়ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে। তাই গোড়ায় অনেক দেশই জায়নবাদীদের গণহত্যাকে দু’হাত তুলে সমর্থন করলেও এখন ঢোক গিলতে চাইছে। ইজরায়েলের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত দ্রুত কমছে। অনেক দেশই চাইছে মানে মানে ইজরায়েল যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসুক।
মুখে হম্বিতম্বি করলেও এবং আমেরিকা দু’হাতে সাহায্য করলেও ইজরায়েলের অভ্যন্তরেও অস্থিরতা বাড়ছে। শুরুতে নেতানিয়াহু’র পক্ষে বিপুল জনমত থাকলেও এখন কমছে। বিশেষ করে অর্থনীতিতে ধাক্কা লেগেছে ভয়ঙ্কর। শুধু যুদ্ধ চালাতে প্রতিদিন খরচ হচ্ছে অন্তত ২৬ কোটি ডলার। যুদ্ধের আবহে ও অনিশ্চয়তার উৎপাদন থমকে। অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে জিডিপি ৫ শতাংশ হ্রাস পাচ্ছে। বিপুল জনসংখ্যাকে যুদ্ধে পাঠানোয় উৎপাদনের কাজে লোক কম। ভারত থেকে শ্রমিক আমদানি করছে অর্থনীতির ধস ঠেকাতে। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা খেয়েছে নেতানিয়াহু। বিচার বিভাগের ক্ষমতা হ্রাসের বিলকে বাতিল ঘোষণা করেছে কোর্ট। বিশ্ব বাণিজ্য এবং বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্কট বাড়ছে। তাই আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে। এই অবস্থায় নেতানিয়াহু উচ্চাশা চরিতার্থ করার জন্য ইজরায়েলি গণহত্যাকে কতদিন সহ্য করে যাবে বিশ্ব শক্তি সেটাই দেখার।
ISRAEL PALESTINE
যুদ্ধের ধাক্কা ইজরায়েলে ভেতরেও
×
Comments :0