দীপশুভ্র সান্যাল
বামপন্থীরা শক্তিশালী হওয়া মানে ‘সড়ক সে সংসদ তক’, রাস্তা থেকে সংসদ পর্যন্ত মানুষের কথা বলা, সংসদে মানুষের পক্ষে আইন করা। বামপন্থীদের শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে শনিবার ফুলবাড়িতে এ কথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। দেশ, দেশের গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে জোর দিয়ে এ রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের ভূমিকা মনে করিয়েছেন তিনি।
লোকসভা নির্বাচন প্রসঙ্গে সেলিম বলেছেন, ‘‘এটা কোনও সাধারণ নির্বাচন নয়, অসাধারণ নির্বাচন। বিজেপি বলেছিল ‘ওয়ান নেশন ওয়ান ভোট’। প্রস্তুতি হচ্ছে যাতে এই ভোটই শেষ ভোট হয়। শুধু ভোট নয়, মানুষের অধিকার শেষ করা হচ্ছে দেশে। আর গণতন্ত্রকে কিভাবে গলা টিপে মারা হয় পশ্চিমবঙ্গের মানুষ গত বারো বছর ধরে দেখছেন।’’
ফুলবাড়ির জনসভায় বক্তব্য রেখেছেন পার্টি রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য জীবেশ সরকার, দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক সমন পাঠকও। সেলিম বলেছেন, ‘‘বামপন্থীরা শক্তিশালী ছিল একশো দিনের আইন আদায় করেছে, বনাঞ্চলে বাসিন্দাদের জমির আইন আদায় করেছে। ১৪টি নিত্যপ্রয়োজনঈ দ্রব্য রেশনে দাম বেঁধে বিক্রির দাবি বারবার তুলে গিয়েছেন বামপন্থীরাই। খাদ্যের সুরক্ষা আইনের প্রশ্নেও বামপন্থীদের ভূমিকা রয়েছে।’’
এদিন আসামের কাজিরাঙায় হাতির পিঠে চড়ে জঙ্গলে ঘুরেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শিলিগুড়িতে একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন। সংবাদমাধ্যম এই বিষয়ে সেলিমের প্রতিক্রিয়া চায়। সেলিম বলেন, ‘‘যখন ভোট আসে তখন আসেন, আমরা সারা বছর থাকি। যে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার কোনটা করেছেন? কালো টাকা নিয়ে এসেছেন? চা বাগানের উন্নতি করেছেন? উত্তরবঙ্গে শিল্পস্থাপন করেছেন? কটা সরকারি বিনিয়োগ করেছেন? অথচ মারাত্মক অপরাধের অভিযোগ বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে এখানে। তৃণমূলের প্রতিদিন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তৃণমূলকে ভেঙেই তো বিজেপি।
এখানে সন্দেশখালির কথা বলছেন। কেন মণিপুরে গেলেন না? কেন দাঙ্গা থামাতে পারছেন না। কাজিরাঙায় গেছেন জঙ্গলে সাফারি করছেন। প্রকল্পের শিলন্যাস করেছেন, ঘোষণা করেছেন, এই পর্যন্ত। চালু হয়নি। ২০১৪’র পর নতুন প্রকল্প নেই যে উদ্বোধন করেছেন এবং আজ চালু হয়েছে।’’
জনসভায় সেলিম বলেছেন, বামপন্থীরা ভুল করে। কিন্তু মানুষের সঙ্গে বুজরুকি করে না।’’
সেলিম বলেছেন, ‘‘ক’দিন আগে পঞ্চায়েত নির্বাচন ছিল। নমিনেশন জমা দিতে দেবে না, পুলিশ প্রশাসন দিয়ে নেমেছিল। কে এসপি কে ডিএম আর কে তৃণমূলের মস্তান আলাদা করা যাচ্ছিল না। বামফ্রন্ট সরকার তৈরি হয়েছিল ১৯৭৭ সালে, জরুরি অবস্থার সঙ্গে লড়াই করে।’’
তিনি বলেন, বামফ্রন্ট বলেছিল গণতন্ত্রের সম্প্রসারণ হবে। গণতন্ত্রকে আরও বেশি মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন অনেক মিথ্যা মামলায় মানুষকে বন্দি করা হয়েছিল। সব রাজনৈতিক বন্দিকে মু্তি দিয়েছিল বামফ্রন্ট। লোকসভা বিধানসভা নয় গ্রামসভা করা হয়েছিল। এখন মমতা ব্যানার্জি গ্রামসভা তুলে দিয়েছেন আর নরেন্দ্র মোদী লোকসভা তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। এ কারণেই এই নির্বাচন আমাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’’ সংসদের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘মানুষের প্রতিনিধি কেন নির্বাচিত হয়। বেকার, শ্রমিক, কৃষক, দোকানদার, মা বোনেদের কথা, স্কুল-কলেজ তার কথা যাতে হয়। বামপন্থীরা সে কাজই করেন।’’
আজ কী হচ্ছে?
সেলিম বলেন, ‘‘৮ মার্চ মহিলা দিবস। সমানাধিকারের দাবিতে লড়াইয়ের দিন। গোটা বিশ্ব পালন করে। আর আজকে সন্দেশখালির মহিলারা লড়ছেন সম্ভ্রম বাঁচাতে। বলছেন নারী নির্যাতন থেকে বাঁচাও। বিধানসভা ভোটের আগে মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়। আর দেখা গেল তৃণমূল নিজের দপ্তরে ডেকে নিয়ে বাংলার মেয়েদের সম্ভ্রমহানি করছে। লালঝান্ডার মিটিংয়ে এই সব প্রশ্ন আসত? আজকে কেবলধর্ষণ, নির্যাতন। আগে কতা হলো কৃষকদের জমি, গৃহহীনের ছাদ, রাস্তা, স্কুল, স্কুল থাকলে হাইস্কুল। এই ছিল বাংলা।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ভুলত্রুটি নিশ্চয় ছিল। কাজ করলে ভুল হয়। কিন্তু আমরা কোনও বুজরুকি করিনি। আজকে প্রধানমন্ত্রী এসেছেন। কখনও উত্তরবঙ্গে এসেছেন, ভোটের সময় ছাড়া? যে রাস্তার কাজ পঁচিশ বছর ধরে চলছে নতুন করে তার উদ্বোধন করছেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন এত টাকা দিলাম। টাকা কার? রাজীব গান্ধীর সময়ে ঠিক হয়েছিল প্রতি লিটার পেট্রোলে ১ টাকা করে দিতে হবে সেস রাস্তার। অরুণ জেটলি অর্থমন্ত্রী হয়ে ৪ টাকা করলেন। প্রধানমন্ত্রী তখন নরেন্দ্র মোদী। তাকে দামের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে। সে জন্যই পেট্রোল ডিজেলের দাম বেশি। বলছে আমি দিলাম। কার টাকা? জনতার টাকা।’”
Comments :0