Panchayat Information

তথ্যে মমতা শাসন

ফিচার পাতা

Panchayat Information

মদে জোয়ার 
বামফ্রন্ট সরকারের শেষ বাজেটে মদ বিক্রি করে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪১৮ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। মমতা ব্যানার্জির সরকার আগামী এক বছরে রাজ্যে মদ বিক্রি করে ১৭,৯২১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করেছে। অর্থাৎ গত ১১ বছরে রাজ্যে লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৪১%! যদিও ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে দলের যে নির্বাচনী ইশ্‌তেহার প্রকাশ করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি, সেই ইশ্‌তেহারের নয়ের পাতায় বামফ্রন্টের তীব্র সমালোচনা করে কী লেখা হয়েছিল? মমতা ব্যানার্জি লিখেছিলেন—‘‘শিল্পের থেকে আজ শুঁড়িখানা অনেক বেশি। শিল্প মানে শুধু মদের বন্যা।’’
‘মদ-জোয়ার’ দেখিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি।


জলের হিসাবে জল
মমতা ব্যানার্জির ‘জলস্বপ্ন’  আর নরেন্দ্র মোদীর ‘জল জীবন মিশন’ একই প্রকল্প। সেই ‘মিশন’ অথবা ‘স্বপ্ন’-র হাল কী? প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল বাড়ি বাড়ি নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া। এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র-রাজ্যের এই যৌথ প্রকল্পে রাজ্যের মাত্র ৩৩.৭৫% বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছেছে। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের হিসাবে রাজ্যে মোট পরিবার ১ কোটি ৮৪ লক্ষের কাছাকাছি। রাজ্যের দাবি নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছেছে মাত্র ৫৯ লক্ষ ৮৭ হাজারের কিছু বেশি বাড়িতে। তবে এটি সরকারি হিসাব। সেই হিসাবেও বিস্তর গোলমাল। যেমন, বালুরঘাটের ভাটপাড়া পঞ্চায়েত। রাজ্যের হিসাবে এই পঞ্চায়েত এলাকায় প্রতি গ্রামেই বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছেছে। কোথাও ১০০%। কোথাও ৯৫%-র আশপাশে। কিন্তু গ্রাম কী দেখাচ্ছে? কল আছে, জল নেই। বাড়িতে পানীয় জলের প্রকল্পের কল, নল লাগানো হয়েছে। কিন্তু জল পড়ে না ছ’মাস ধরে। বালুরঘাটের ভাটপাড়া পঞ্চায়েতের খিদিরপুর, ডাঙ্গি, ভূষিলা, শিবরামপুর প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা হলো, বাড়িতে যে জলের সংযোগ দেওয়া হলেও বেশিরভাগ বাড়িতেই জল আসে না। আর একটি উদাহরণ ছাতনা। বাঁকুড়ার এই ব্লকে ৭৫%-র বেশি বাড়িতে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে গেছে বলে রাজ্য সরকারের দাবি। সেই ছাতনায় অনেক গ্রামে জল নেই। যেখানে নল লাগানো হয়েছে, সেখানেও জল নেই। আবার অনেক জায়গাতে সেই কাজই হয়নি। যেমন আড়া পঞ্চায়েতের বরশি গ্রাম। ৩৯৫জন বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে আদিবাসী ২৩১ জন। আদিবাসী কিংবা অনাদিবাসী— কারও বাড়িতে পানীয় জলের লাইন পৌঁছায়নি। তেমনই মেটিয়ালা পঞ্চায়েতের মেটালা গ্রাম। ৮৬৪ জন গ্রামবাসীর মধ্যে ৪১৩ জন তফসিলি জাতির। এই গ্রামে কারও বাড়িতে নল পৌঁছায়নি। জল তো অনেকদূর।
মুর্শিদাবাদের কী হাল,  সীমান্তবর্তী এই জেলাটি বড়। ২৫৫টি পঞ্চায়েত। ২২৩৮টি গ্রাম। জেলায় মাত্র ২৯% বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছেছে। কেমন কাজ করেছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। উদাহরণ সাগরদিঘি। এই ব্লকে ১১টি পঞ্চায়েত, ১৯৭টি গ্রাম। ২% বাড়িতে পানীয় জল গেছে বলে সরকারের দাবি। কী দুঃসহ অবস্থায় আছেন গ্রামবাসীরা,  উদাহরণ হতে পারে রামনা-শেখদিঘি গ্রাম। এই গ্রামে জনসংখ্যা ৬৩৬৭। তাঁদের মধ্যে তফসিলি জাতির আছেন ২০৮ জন। বাকিরা সংখ্যালঘু, জেলারেল কাস্টের। একটি বাড়িতে পানীয় জলের কল পৌঁছায়নি। রাজ্যের দাবি মুর্শিদাবাদে ডোমকল ব্লকে সবচেয়ে বেশি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছেছে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের আধিকারিকরা নাম না প্রকাশের শর্তে জানাচ্ছেন—  বেশিরভাগ কলে জল আসে না। এই ব্লকেরই একটি গ্রাম রসুলপুর পাতনিপাড়া। গ্রামে ১৯,৯৫৮ জনের বাস। তাঁদের মধ্যে আদিবাসী ২৬ জন,  তফসিলি ৪১ জন এবং বাকিরা সংখ্যালঘু, জেনারেল কাস্ট। কোনও বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছায়নি।
লালগড়ের জঙ্গলখাস গ্রাম। সেখানে গরিবরাই সিংহভাগ। গ্রামের বাসিন্দা ৫০১ জন। তাঁদের মধ্যে ৩৬৭ জন আদিবাসী। একজনের বাড়িতেও পানীয় জল, নল, কল কিছুই পৌঁছায়নি। 
রাজ্য সরকারের তথ্য অনুসারেই রাজ্যের ৮টি ব্লক আছে, যেখানে গত চার বছরে সেই ব্লকগুলির কোনও পঞ্চায়েতের কোনও গ্রামে এই প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। সেই ৮টি ব্লক হলো পুরুলিয়ার জয়পুর, ঝালদা-১, বরাবাজার,  দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ডহারবার-১, জয়নগর-২, কুলপি, কুলতলি, মগরাহাট-১।
সরকারি হিসাবে তথ্য— যার বেশিরভাগই জলশূন্য। আর যেখানে যায়নি,  সেখানে দুঃসহ যন্ত্রণা।

জলে গেছে বোল্ডার!
মালদহের প্রশাসনিক বৈঠকে গত ৪ মে মুখ্যমন্ত্রী ভাঙন নিয়ে বলেছেন,‘‘পাঁচ বছরে ১০০০ কোটি টাকা খরচ করেছি। সব টাকা জলে যাচ্ছে।’’ তিনি বলেন,‘‘এমন ঠিকাদার দিয়ে কাজ করান, যিনি অন্তত কুড়ি বছরের দায়িত্ব নেবেন। শুধু বোল্ডার ফেলে চলে যাবে, এমনটা হবে না।’’ অর্থাৎ ‘১০০০ কোটি টাকার বোল্ডার’ নামেই ফেলা হয়েছে। সব ‘জলে গেছে।’ ঠিকাদারদের কাজ দিয়ে কমিশন নিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। ভাঙন বিধ্বস্ত এলাকায় এটিই মানুষের অন্যতম অভিযোগ। একাধিকবার তাঁরা তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী, তৃণমূলের বিধায়ক, প্রশাসনের আমলাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বোল্ডার-দুর্নীতির বিরুদ্ধে। মমতা ব্যানার্জি কার্যত সেই অভিযোগ মেনে নিয়েছেন বৃহস্পতিবার।

দেড় লক্ষ মহিলা নিখোঁজ ৫বছরে
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো(এনসিআরবি)-র রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০১৭ থেকে ২০২১ — এই পাঁচ বছরে রাজ্যের ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৭৭৬ জন মহিলা নিখোঁজ হয়েছেন। ২০২২-র রিপোর্ট চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বেরোবে। ফলে গত বছরে কতজন নিখোঁজ হয়েছেন, তা উল্লেখ করা যাচ্ছে না। কিন্তু এনসিআরবি-তে রিপোর্ট পাঠায় রাজ্য সরকারই। রাজ্য সরকারের দেওয়া সেই রিপোর্ট অনুসারে ২০১৭-তে ২৮,১৩৩ জন, ২০১৮-তে ৩১,২৯৯ জন, ২০১৯-এও ৩১,২৯৯ জন, ২০২০-তে ২৭,৪৩৪ জন এবং ২০২১-এ ৩০,৬১১ জন মহিলা নিখোঁজ হয়েছেন রাজ্যে।

বেকারি বেড়েছে
মমতা ব্যানার্জির শাসনে রাজ্যে বেকারি বেড়েছে। ২০০৯-১০-এ বেকারি ছিল হাজার জনে ১৭। ২০২১-এ তা পৌঁছেছে ৩৭-এ। এই সময়ের গ্রামে নারীদের বেকারি ২৮ থেকে হয়েছে ১৭। কিন্তু এই প্রবণতা খুবই স্বাভাবিক। পুরুষরা কাজ খুঁজতে গ্রাম, মহকুমা, জেলার বাইরে যান। মহিলারা নানা অস্থায়ী কাজে, দিনমজুরির কাজে যুক্ত হয়েছেন। তবে নারী-পুরুষ মিলিয়ে সাধারণভাবে বেকারির হার ২০০৯-১০-এ হাজার জনে ছিল ১৯। তা ২০২১-এ হয়েছে ৩২। শহরেও পুরুষদের বেকারি বেড়েছে। ২০০৯-১০-এ ছিল হাজার জনে ৩৫। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪৬। সামগ্রিকভাবে এই এগারো বছরে রাজ্যে বেকারির হার হাজার জনে ৪০ থেকে ৪৪ হয়েছে।

পরিযায়ীদের স্কিল ব্যাঙ্ক কোথায়?
পরিযায়ীদের সঙ্কটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কাজের অভাবের প্রশ্ন। মমতা ব্যানার্জি গত বারো বছরের শাসনে রাজ্যে কাজের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। শিল্প হয়নি। কৃষিতেও কাজের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তৃণমূলের সরকার। এই পরিস্থিতিতে পরিযায়ীদের এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টায় একটি পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত। যদিও এই পর্ষদের কী কাজ হবে, তা এদিন মলয় ঘটক জানাননি। 
রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের তালিকা তৈরির একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল প্রায় ৬ বছর আগে। প্রতিটি পঞ্চায়েতে, ওয়ার্ডে পরিযায়ীদের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল তৃণমূল সরকার। কিন্তু সেই তালিকা হয়নি। করোনা কালে রাজ্যে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য দুটি প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি— ‘স্নেহের পরশ’ এবং ‘স্কিল ব্যাঙ্ক।’ পরিযায়ী শ্রমিকদের এককালীন কিছু টাকা দেওয়ার প্রকল্পের নাম মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছিলেন ‘স্নেহের পরশ।’ সেই প্রকল্প ঘোষিত হয়েছিল ২০২০-র ২০ এপ্রিল। শেষ পর্যন্ত ‘স্নেহের পরশ’ প্রকল্পে মমতা ব্যানার্জির সরকার ব্যয় করে ৫০ কোটির কিছু বেশি টাকা। অনেক পরিযায়ী শ্রমিকই আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রকল্পের সুবিধা পাননি।
২০২০-র ৩ জুনই নবান্নে পরিযায়ীদের জন্য আর একটি ব্যাঙ্কের ঘোষণা করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। সেটির নাম দিয়েছিলেন ‘স্কিল ব্যাঙ্ক।’ বিষয়টি কী? তিনি বলেছিলেন,‘‘জেলাগুলিকে বলছি যাঁরা ফিরে এসেছেন তাঁদের তালিকা বানান। তাঁরা কে কী পারেন তারও তালিকা করুন। কেউ একশো দিনের কাজ পারে। কেউ সোনার কাজ কিংবা জরির কাজ। একটা ‘স্কিল ব্যাঙ্ক’ করার পরিকল্পনা করেছি আমরা। ছোট মাঝারি এবং ক্ষুদ্র শিল্প দপ্তরের মাধ্যমে এদের কাজে লাগানো হবে।’’
সেই ‘স্কিল ব্যাঙ্কের’ সেখানেই ইতি। কোনও তালিকা হয়নি। 
সেদিনই, অর্থাৎ ২০২০-র ৩জুনই মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর জেলা শাসক, পুলিশ সুপারদের নজর রাখতে প্রকাশ্যে নির্দেশ দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন,‘‘দেখতে হবে তাঁরা যেন আর না ফিরে যান।’’ বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনায় দেখা গেল দলে দলে যুবক গ্রাম ছাড়ছেন কাজের খোঁজে।

‘ভবিষ্যৎ’ অন্ধকার
আত্মসম্মান’, আত্মমর্যাদা’ নামে দুটি প্রকল্প আছে। আছে প্রধানমন্ত্রী এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম (পিএমইজিপি)। 
তারপর সম্প্রতি নতুন প্রকল্প ঘোষণা করেছেন মমতা ব্যানার্জি। নাম— ‘ভবিষ্যৎ।’ যুবক, যুবতীদের ছোট ব্যবসা গড়ে তোলার জন্য এই প্রকল্প। কিন্তু একই লক্ষ্যে রাজ্যে চালু আছে অন্তত তিনটি প্রকল্প। স্বামী বিবেকানন্দ স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রজেক্টের(এসভিএসকেপি)-র আওতায় আছে ‘আত্মসন্মান’ এবং ‘আত্মমর্যাদা।’ এই দুটি নাম মমতা ব্যানার্জিরই দেওয়া। বাংলা স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্প (বিএসকেপি) চালু হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে। মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তার নামের আগে ‘স্বামী বিবেকানন্দ’ বসিয়েছিলেন। 
কিন্তু প্রকল্পটির হাল খারাপ হয়েছে মমতা-শাসনে।
আত্মসন্মান’-এ ৫ কিংবা তার বেশি যুবক যুবতী মিলে প্রকল্প করতে পারেন। ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রকল্প খরচ হতে পারে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা রাজ্য সরকার দেয়। আর ‘আত্মমর্যাদা’য়  ১ জন থেকে ৪ জন প্রকল্প করতে পারে। প্রকল্পের খরচ সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা হতে পারে। রাজ্য সরকার সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ টাকা দেয়। দুটির ক্ষেত্রেই বাকি টাকা ব্যাঙ্ক দেয়।

সেই প্রকল্প দুটির হাল কী? 
২০২১-২২-এ এই দুটি প্রকল্পে যুবক যুবতীদের নিজের পায়ে দাঁড় করাতে ৩০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে বলে বাজেটে তৃণমূলের সরকার জানিয়েছিল। দিয়েছে ৫কোটি টাকা! ২০২২-২৩, অর্থাৎ গত আর্থিক বছরে বাজেটে বরাদ্দ ছিল ২০০ কোটি টাকা। এখনও পর্যন্ত ১৪ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে বলে আর্থিক সমীক্ষায় রাজ্য সরকার স্বীকার করেছে। রাজ্যের ব্যাঙ্কগুলির কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ আর্থিক বছরে নতুন কোনও আবেদন গ্রহণই করেনি রাজ্য সরকার। ৩৮৬৮টি ছোট ব্যবসার আবেদন সরকারের ঘরে পড়েছিল। যার জন্য সরকারকে মাত্র ২৬ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা ভরতুকি দিতে হতো। 
সরকার দেয়নি। একটি টাকাও ‘আত্মসন্মান’ কিংবা ‘আত্মমর্যাদা’-র জন্য মমতা ব্যানার্জির সরকার দেয়নি। এই ধারা এখনও জারি আছে। 
দেশের অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও ২০০৮ থেকে চালু আছে কেন্দ্রীয় প্রকল্প পিএমইজিপি। প্রকল্প কেন্দ্রের হলেও রাজ্যের খাদি বোর্ড সহ আরও কিছু সংস্থা প্রকল্পের তদারকি করে। দায়িত্বে মাঝারি, ছোট, ক্ষুদ্র এবং বস্ত্র শিল্প দপ্তর। সেই প্রকল্পে ২০২০-র ১ এপ্রিল থেকে শুক্রবার (১৭ মার্চ, ২০২৩) পর্যন্ত অনুমোদন পেয়েছিল ২৯,০২২টি প্রকল্প। টাকা পেয়েছে কটি? মাত্র ৬১৯৬টি। ভরতুকি বাবদ কত টাকা পেয়েছে তরুণ উদ্যোগপতিরা? ২২২ কোটি ৩২ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন,‘‘প্রতিবারই ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনায় পিএমইজিপি’র কথা ওঠে। গত ২৩ ডিসেম্বর সর্বশেষ বৈঠক হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে ৩৮০০-র কিছু বেশি যুবকে এই প্রকল্পে ব্যাঙ্ক ঋণ, ভরতুকি দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা আছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সংখ্যাটি ১০০০ পেরোয়নি।’’
চালু প্রকল্পে ভরতুকি, ঋণ দেওয়ার কাজেই যেখানে সরকার ব্যর্থ, তখন ‘ভবিষ্যৎ’র আসলে শুধুই পঞ্চায়েত নির্বাচন উপলক্ষে মমতা ব্যানার্জির চমক।

মন্ত্রীদের ১০ গুণ, মুখ্যমন্ত্রীর 
১৩ গুণ বেতন বেড়েছে

ছিল ৮৫০০ টাকা। হয়েছে ১,১৭,০০১ টাকা। মমতা ব্যানার্জির শাসনে মুখ্যমন্ত্রীর বেতন বেড়েছে এমনই। বৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৩ গুণ।
গত ১২বছরে শুধু মুখ্যমন্ত্রীর বেতন বেড়েছে, এমন নয়। রাজ্যের অর্থ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি আর্থিক বছরে রাজ্যের মন্ত্রীদের বেতন, অফিসে হাজিরা বাবদ ভাতা ইত্যাদি মিলিয়ে সরকারের কোষাগার থেকে প্রায় ৫২ কোটি টাকা খরচ হবে। দু’বছর আগে, ২০২১-২২-এ এই বাবদ খরচ হয়েছিল ৩২ কোটি ৮৩ লক্ষের বেশি টাকা। 
কিন্তু বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে? ২০১০-১১ আর্থিক বর্ষে রাজ্যের মন্ত্রীদের জন্য রাজ্য সরকারের খরচ হয়েছিল ৪ কোটি ১৭ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা। তৃণমূল সরকারের আমলে মন্ত্রীদের জন্য মানুষের করের টাকা খরচ বেড়েছে প্রায় ১১ গুণ।

মানুষের আয়ে রাজ্য পিছনে 
জাতীয় গড়ের থেকে যে রাজ্যগুলির মাথাপিছু আয় কম, সেই রাজ্যগুলিকে ‘আন্ডার ডেভেলপড’ বা অনুন্নত হিসাবে চিহ্নিত করেছে নাবার্ড। রাজ্যের মাথা পিছু গড় আয় বছরে ৭২,২০২টাকা, জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। মমতা ব্যানার্জির দাবি নস্যাৎ হয়ে গেছে। 
রাজ্যের কৃষকদের গড় আয় ৩ লক্ষ টাকা, এমনটাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দাবি করেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সর্বশেষ ‘হ্যান্ডবুক অব স্ট্যাটিসটিকস অব ইন্ডিয়ান স্টেট’-এ উল্লিখিত রাজ্যগুলির মধ্যে বড়, জনসংখ্যা বেশি এমন ১৮টি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ১২ নম্বরে। অন্য রাজ্যগুলির মধ্যে আছে অন্ধ্র প্রদেশ, আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, গুজরাট, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, কেরালা, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওডিশা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, তামিলনাডু, তেলেঙ্গানা, উত্তর প্রদেশ।


 

Comments :0

Login to leave a comment