MD SALIM SILIGURI

মণিপুরকে দেখে সতর্ক হওয়ার আহ্বান সেলিমের

রাজ্য জেলা

MD SALIM SILIGURI

অনিন্দিতা দত্ত (শিলিগুড়ি) এবং বিশ্বনাথ সিনহা (ইসলামপুর)

মণিপুরের অভিজ্ঞতা নিয়ে সতর্ক হতে হবে উত্তরবঙ্গকেও। সতর্ক হতে হবে মেহনতির মধ্যে নানা কৌশলে বিভাজনের রাজনীতি সম্পর্কে। সোমবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে এই মর্মে বার্তা দিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, বিভাজন করে ভোটে জেতার কৌশলে নতুন পরীক্ষাগার বানানো হচ্ছে উত্তরবঙ্গকে। 

তাঁর আহ্বান, বেকারি বা দারিদ্র্য, অশিক্ষা, মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি-দুষ্কৃতীরাজের বিরদ্ধে খেটে খাওয়া সব মানুষকে লড়তে হবে একজোটে। বিভাজনের রাজনীতির জন্য তৃণমূল এবং বিজেপি, দু’দলকেই দায়ী করেছেন তিনি। সোমবারই ইসলামপুরে সিপিআই(এম)’র কর্মীসভায় দুই দলকেই পরাস্ত করার আহ্বান জানান তিনি। 

এদিন সুপ্রিম কোর্টও বিপন্নদের সুরক্ষার দ্রুত বন্দোবস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বাস্তুচ্যূত মানুষেরও পুনর্বাসনের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে।  

সেলিম বলেন, ‘‘বিজেপি এবং তৃণমূল ছোট ছোট ভাগে মানুষকে ভাগের চেষ্টা করছে। পাহাড় বনাম সমতল, নেপালি বনাম বাঙালি বনাম রাজবংশী, কোচবিহার-গ্রেটার কোচবিহার, কামতাপুরী, আদিবাসী, মেচ, রাভা নানা ভাগে ভাগ করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ শিলিগুড়তে সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার।

এদিনই নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মণিপুরের প্রসঙ্গে বক্তব্য রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মণিপুরের পরিস্থিতির জন্য বিভাজন, বিদ্বেষের রাজনীতিকে দায়ী করেন তিনি। ভোটের লক্ষ্যে বিভাজনের জন্য বিজেপি’কে দায়ী করেন তিনি। 

এদিন মণিপুর সম্পর্কে বলতে গিয়েই ‘কেরালা স্টোরি’ প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর ফাইলস’ বা কেরালা স্টোরির মতো সিনেমা তৈরি হচ্ছে বিভাজনের জন্য। কেরালা স্টোরি রাজ্যে দেখানো হবে না, ঘোষণা করেন তিনি। সোমবার সন্ধ্যে পর্যন্ত যদিও স্পষ্ট নয়, মৌখিক নির্দেশের বাইরে সরকারি নির্দেশিকা জারি হয়েছে কিনা। 

এরপরই তিনি বলেন, কেরালা স্টোরির বিরোধিতা করছি মানে আমি সিপিআই(এম)’র পক্ষে নই। সিপিআই(এম) বিজেপি’র সঙ্গে কাজ করছে পশ্চিমবঙ্গে। কেরালার মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবো।

কিন্তু সেলিমের বক্তব্যে এই সিপিআই(এম) সম্পর্কে এই অভিযোগ টেকেনি। সেলিম মনে করিয়েছেন যে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি’র মতো তৃণমূল কংগ্রেসও মানুষের মধ্যে বিভাজনের নানা কৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। সেলিম বলেন, ‘‘বেকারি থেকে দারিদ্র বা অশিক্ষা, মূল্যবৃদ্ধি, চুরি জোচ্চুরি, দুষ্কৃতিরাজ থেকে মুক্তি চাইছে মানুষ।’’ একজোটে লড়াইয়ের আহ্বানে মণিপুরের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। 

সেলিম বলেন, ‘‘মণিপুরে বিদ্বেষের চাষ হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ ও আসামের মানুষকে শিক্ষা নিতে হবে। নানা ভাষা, জনগোষ্ঠীর মানুষকে ভোটের আগে একে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ রাজ্যে ধর্ষণ হোক বা অন্য কোনও অপরাধ, সঙ্কীর্ণ জাতি দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। মণিপুরেও এই ভাগ করা হয়েছিল। ধর্মকে বর্ম করে মণিপুরে আগুন জ্বলছে। শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি অফিসার থেকে সাধারণ মানুষ, বিজেপি’র মন্ত্রী, বিধায়কদেরও উদ্ধার করতে হচ্ছে সেনা এবং আধা সেনা পাঠিয়ে।’’ 

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন মণিপুরে আটকে পড়া রাজ্যের ১৮৫ বাসিন্দা যোগাযোগ করেছেন। উদ্ধার করা হয়েছে যাঁদের তাদের মধ্যে রয়েছেন অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং রাজস্থানের ছাত্ররাও। সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে তা জানানো হয়েছে। তাঁর দাবি, মণিপুর সরকারের সঙ্গেও রাজ্য যোগাযোগ রাখছে। কারও বিপন্নতার খবর পেলে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। চালু হয়েছে কন্ট্রোল রুম। নম্বর- ০৩৩২২১৪৩৫২৬, ০৩৩২২৫৩৫১৮৫। 

(শিলিগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে মহম্মদ সেলিম ও জীবেশ সরকার। ছবি: রাজু ভট্টাচার্য)

Comments :0

Login to leave a comment