Meyo Road

মেয়ো রোডে মিনি বাস উলটে হত কিশোর সহ ২

কলকাতা

কলকাতার মেয়ো রোডে যাত্রীবোঝাই মিনি বাস উলটে গিয়ে বুলেটের চালক এক কিশোর সহ দুই জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হলো। আশঙ্কাজনক আরও একজন। মিনি বাসের থাকা প্রত্যেক যাত্রীরই কমবেশি চোট লেগেছে। তাঁদের সকলকে এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। 
নিহতদের মধ্যে ফারহান আহামেদ খান (১৬) বাইক চালাচ্ছিল। বন্ধু আজলান খান পিছনে বসেছিল। সে গুরুতর আহত। ট্রমা কেয়ার সেন্টারে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। মৃত অপর ৪৫ বছরের ব্যক্তির পরিচয় মেলেনি। পুলিশের সন্দেহ তিনি বাস কর্মী, সম্ভবত কন্ডাক্টরও হতে পারেন। হাওড়াগামী মিনিবাসটি বিকেল ৪:৪০ নাগাদ ওই বুলেট বাইককে ধাক্কা মেরে  উলটে যায়। গুরুতর জখম হন ওই দুই যুবক। নিহত ফারহান আহমেদের খানের বাড়ি একবালপুরে সুধীর বোস রোডে। তাঁর সঙ্গে এ বছর কেন্দ্রীয় বোর্ড পরীক্ষা দেওয়া বন্ধু আজলানের বাড়ি ওয়াটগঞ্জে। নিহত কিশোর সিপিআই (এম) নেতা ফৈয়াজ আহমদ খানের নিকটাত্মীয়। 
কলকাতার ব্যস্ততম রাস্তায় এদিনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে শনিবার সন্ধ্যায় আহতদের দেখতে এসএসকেএম হাসপাতালে যান সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সঙ্গে ছিলেন ফৈয়াজ আহমদ খানও। সেলিম এদিন সরকারি ও বেসরকারি বাসের ওপর ঠিকমতো সরকারি নজরদারি না করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেলিম বলেন, এখন ভাড়ার কোনও ঠিক নেই, রক্ষণাবেক্ষণের ঠিক নেই, চালকের যোগ্যতা আছে কিনা দেখা হয় না, এমনকি তাঁরা প্রশিক্ষিত কিনা, তাও দেখা হয় না। টাকার বিনিময়ে আরটিও দপ্তর থেকে মিলছে সরকারি শংসাপত্র। ট্রাম তুলে দেওয়া ছাড়া সরকারি পরিবহণ দপ্তরের কোনও কাজ নেই। 
মিনি বাসটি পুরানো রিসোল টায়ার লাগানো ছিল বলে অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘কলকাতা ট্রাফিক বিভাগকে ঢেলে সাজানো উচিত। তাদের পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের এখন টাকা তোলা ছাড়া কোনও কাজ নেই। শহরের কেন্দ্রস্থলে দুর্ঘটনায় ষোলো বছরের তরতাজা প্রাণ ঝরে গেল। মর্মান্তিক এই ঘটনা।‘ তিনি বলেন, ‘এত বিজ্ঞাপন, এত টাকা খরচা, ‘সেফ ড্রাইভ- সেভ লাইফ’ স্লোগান, মুখ্যমন্ত্রী গান লিখছেন- তা সত্ত্বেও এমন ঘটনা কেন?’ 
বাদিকে করে বাসটিকে উলটে যাওয়ায় বাসের দরজা রাস্তায় আটকা পড়ে যায়। আর তার জন্য বাসের ভিতরে আটকে পড়া যাত্রীরা বেরোতে পারেননি। আটকে পড়া যাত্রীদের পরে পুলিশ, দমকলের সহায়তায় উদ্ধার করে। উদ্ধার করার পরেও একজন যাত্রী বাসের ভিতরেই আটকে ছিলেন। পরে বাসের সামনের ও পিছনের কাচ ভেঙে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। বাসটিতে চালক-কনডাক্টর বাদে ছিলেন ১৭ জন যাত্রী। যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ৩ জন মহিলা। সকলেই কমবেশি জখম হয়েছেন। বাসের যাত্রীদের সঙ্গে আঘাত লাগা বুলেটের দুই আরোহীকেও  একসঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারে। সেখানে তিনজনের অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকায় তিনজনকে ভেন্টিলেশনে পাঠানো হয়। সেখানে মারা যায় বাইক চালক কিশোর এবং বাসের কনডাক্টর বলে যাকে অনুমান করছে পুলিশ। 
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের যাত্রীরা এদিন দাবি করেছেন, মেটিয়াবুরুজ থেকে ধর্মতলার মেয়ো রোড হয়ে বাসটি হাওড়ার দিকে যাওয়ার কথা ছিল। ডাফরিন রোড পার করে মেয়ো রোডে পড়তেই তা হঠাৎ করে সেটি গতি বাড়িয়ে দেয়।  আর তা করতে গিয়ে সামনে চলে আসে ফারহানদের কালো রঙের বুলেটটি। এরপর বাসের চালক বুলেটে পাশ কাটাতে গিয়ে সেটাকে ধাক্কা মেরে উলটে যায়। এদিনের দুর্ঘটনার জেরে কিছু সময়ের জন্য মেয়ো রোডের একটি অংশে যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। উলটে যাওয়া বাসটিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্রেন আনা হয়।  
এসএসকেএম হাসপাতালে এদিন সন্ধ্যায় দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন আহত ও নিহতদের পরিজন না। খিদিরপুর থেকে প্রচুর মানুষ এসেছেন ফারহানের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে। খিদিরপুরের সেন্ট টমাস স্কুলের মেধাবী ছাত্র ফারহান ও তাঁর বন্ধু আজলান। ফারহানের বড় ভাই ফৈয়জান খান ও ছোট ভাই ফৈসানের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। মেজ ভাইয়ের এই অকাল মৃত্যুকে কেউ যেন মেনে নিতে পারছিল না। বড় ভাই ফৈয়জান একটানা কেঁদে চলেছেন। তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে চলেছেন পড়শীরা।

Comments :0

Login to leave a comment