জয়ন্ত সাহা: ময়নাগুড়ি
‘সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।’ সাহিত্যিক এস ওয়াজেদ আলির ছোট গল্পের মতো ভোট এলেই বন্ধ বাগান খোলা আর অধিগ্রহণের প্রতিশ্রুতিও সমানে চলছে চা বাগান এলাকায়!
গত লোকসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ময়নাগুড়ির মাঠে বলেছিলেন,‘সব বন্ধ বাগান খুলে যাবে।’ তারও আগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলে গিয়েছিলেন দিল্লির ক্ষমতায় বিজেপি ফের এলে বন্ধ ৫ টি বাগান অধিগ্রহণ করা হবে। তখন তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী।
এবারে লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণার আগে মুখ্যমন্ত্রী গত ১১ ডিসেম্বর ঘোষণা করে গেছিলেন,‘৬টি বন্ধ চা বাগান রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করবে।’ ঘোষণা পর তিন মাস কেটে গেছে। কোনও ৬টি বাগান রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করছে শ্রম দপ্তরের আধিকারিকরাই জানেন না। এ প্রসঙ্গে সিআইটিইউ নিয়ন্ত্রিত শ্রমিক ইউনিয়নের রাজ্য নেতৃত্ব বিদ্যুৎ গুন বলেন,‘আগের লোকসভা ভোটে দিল্লির দাদা ভাঁওতা দিয়ে বাগান শ্রমিকদের ভোট লুটেছিল। এবার সেই পথেই রাজ্যের স্বঘোষিত দিদি বাগান শ্রমিকদের ভোট লুটের ছক কষেছে।’
মিথ্যে প্রতিশ্রুতির চেনা ছক ধরা পড়ে গেছে বাগানের শ্রমিক মহল্লায় মহল্লায়। এখন উত্তরবঙ্গে বন্ধ ও অচল চা বাগানের সংখ্যা সব মিলিয়ে দু’ডজনের বেশি। দার্জিলিঙের পাহাড়ে ১০ টি, আলিপুরদুয়ার জেলায় ৭ টি, জলপাইগুড়ি জেলায় ৬ টি বাগান বন্ধ রয়েছে। পাহাড়ের বন্ধ ১০ টি বাগানের মধ্যে রয়েছে কার্শিয়াঙের অম্বুটিয়া, সুখিয়াপোখরির মুন্ডোকোঠি, ধোতেরিয়া, বালাসনের মতো বাগান। আলিপুরদুয়ার জেলার বন্ধ ৭ টি বাগানের মধ্যে রয়েছে দলমোড়, দলসিংপাড়া, রায়মাটাং, কালচিনি, রামঝোড়া, ঢেকলাপাড়ার মতো চা বাগান। বন্ধ রয়েছে জলপাইগুড়ির রায়পুর, নাগরাকাটা, মেটেলির চা বাগান। বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের মাসিক ভাতা ‘ফাউলাই’ বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে ছিল মাসিক ১৫০০ টাকা। গত ১৩ বছরে তৃণমুল সরকার সে ভাতার পরিমাণ এক টাকাও বাড়ায়নি।
আলিপুরদুয়ারের কালচিনি বাগানের শ্রমিক শিবু চিক বরাইক বলেন,‘‘মুখ্যমন্ত্রী আর তার মন্ত্রী, এমএলএদের বেতন বেতন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও আমাদের ফাউলাই বাড়ে না। আমাদের ভরসা ওই রেশনের চাল আর জঙ্গলের লতাপাতা সেদ্ধ। ভোট এলে অনেক স্বপ্ন দেখায় আর ভোট ফুরোলেই সব ফক্কা।’’
শ্রমিকদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি ধরা পড়ে যাওয়ায় বিপাকে তৃণমুল আর বিজেপি। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন বিটিডব্লিউ’র নেতা তৌফিল সোরেনের বক্তব্য,‘‘চা শ্রমিকদের প্রতি দিনের পর দিন বঞ্চনা করা হয়েছে। সব সহ্যের বাইরে চলে গেছে। এসব বঞ্চনার অবসান না হলে প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামছি না।’’ আলিপুরদুয়ারের তৃণমুল প্রার্থী প্রকাশ চিক বরাইকও ভোট প্রচারে বন্ধ বাগানে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির জবাবদিহি করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। কারণ তিনিও জানেন না কোন ৬টি বাগান অধিগ্রহণ করবে রাজ্য সরকার। তিনি জানেন না আদালতের রায়ের পরেও কেন চা বাগানের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করছে না শ্রম দপ্তর।
Tea Garden
মোদীর কথা মমতার কথা বাগানের কথা
×
Comments :0