Editorial

ছবির মোদী

সম্পাদকীয় বিভাগ


আগামী লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উজ্জ্বল ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে এবং ব্যক্তিগত প্রচার চালাতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছে। মোদীই সব, তাঁর কোনও বিকল্প নেই। একমাত্র তিনিই পারেন সকলের সব সমস্যা সমাধান করতে। বিজেপি মানে মোদী। কেন্দ্রীয় সরকার মানে মোদী। বিজেপি’র নেতা মানে মোদী। দলে হাজার পদ থাকতে পারে। কিন্তু পদেরই ঠাঁই মোদীর পদতলে। সরকারে অনেক মন্ত্রক, অনেক দপ্তর, অনেক মন্ত্রী আছে। কিন্তু সবই নিমিত্ত মাত্র। মন্ত্রী একজনই, তিনি প্রধানমন্ত্রী। তিনি দলের ঊর্ধ্বে। তাই দল, সরকার সব জায়গা থেকেই চলে তাঁর বন্দনা। তাঁকে তুষ্ট করা, তুষ্ট রাখাই স‍‌কলের একমাত্র কর্তব্য। সরকারি সব প্রকল্পেই অনিবার্যভাবে তিনি এবং তাঁর ছবি। সরকারের সবটাই মোদীময়। ইদানীং প্রকল্প ছাড়াই সরকারি উদ্যোগে চলছে মোদীর প্রচার। নতুন বছরে ক্যালেন্ডারের নামে সরকারি টাকায় মোদীর বিরাট ছবিওয়ালা লক্ষ লক্ষ ক্যালেন্ডার। পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ঘরে ঘরে। সারা দেশের রেল স্টেশনগুলিতে তৈরি হচ্ছে মোদীর ঢাউস ছবি লাগানো সেলফি জোন। ঝাঁ চকচকে করে সাজানো হচ্ছে এবং এমনভাবে মোদীর ছবি রাখা হচ্ছে যাতে যেখান থেকেই ছবি তোলা হোক না কেন মোদীর ছবি বাদ দেওয়া যাবে না। মোদীকে নিয়েই ছবি তুলতে হবে।
পাঁচ রাজ্যে ভোট চলাকালীন গত ১৫ নভেম্বর মোদী ছুটে গেছে ঝাড়খণ্ডে বিরসা মুণ্ডার জন্মদিন উদ্‌যাপন করতে। সেদিন সেখান থেকেই শুরু হয় বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা মোদীর হাত ধরে মোদীর প্রচারে। তখন ঘোষণা হয় ৬৮টি জেলায় মূলত আদিবাসী নিবিড় ৮ হাজার গ্রামে পরিক্রমা করবে এই যাত্রা। কৃষি দপ্তর, গ্রামোন্নয়ন দপ্তর, আদিবাসী কল্যাণ দপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সরকারি অফিসার ও কর্মীদের নিয়ে গ্রামে গিয়ে সভা করে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে প্রচারের অছিলায় মোদীর প্রচার করতে। সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে গ্রামের মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করে তাদের প্রকল্পের সুবিধা পাবার ব্যবস্থা করাই নাকি এর লক্ষ্য। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে মোদীর প্রচার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রায় ডাবল ইঞ্জিনের সরকারগুলি মোদীর ছবিওয়ালা ক্যালেন্ডার ছাপিয়ে সর্বত্র ঢালাও বিলি করছে। এই যাত্রার মর্মকথা নাকি মোদীর সংকল্পকে দেশবাসীর ঘরে ঘরে‍‌ পৌঁছে দেওয়া। কি সেই সংকল্প? ২০৪৭ সালে স্বাধীনতার ১০০ বছরের মধ্যে তিনি ভারতকে আমেরিকা-ব্রিটেন-জার্মানির মতো উন্নত দেশে পরিণত করবেন। বছরে দু’কোটি বেকারের চাকরি, কৃষকের আয় দ্বিগুণ করা সহ কয়েক ডজন প্রতিশ্রুতি তথা ‘সংকল্প’ ইতিমধ্যেই ব্যর্থতার ডাস্টবিনে গড়াগড়ি খাচ্ছে। এখন দুই যুগ পরের সংকল্প প্রচার করছেন সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে। বর্তমান ১৪১ কেটি ভারতীয়র কতজন ততদিন বেঁচে থাকবেন কেউ জানে না। যাত্রা শুরুর পর দেখা যায় বিশাল বিশাল গাড়ির কনভয় নিয়ে সরকারি অফিসার ও কর্মচারীরা গ্রামে গেলে গ্রামবাসীরা তেমন আসছেন না। তাই লোক টাকার জন্য সেই সব মোদীর প্রচার সভাগুলিতে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাবার আবেদন সংগ্রহ শুরু হয়। সঙ্গে ক্যালেন্ডার।
রেল কাঠামো দেশের বৃহত্তম জনবহুল এলাকা। তাই দেশের সব রেল স্টেশনকেই মোদীর প্রচারের আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে। স্বচ্ছতার প্রচারের নামে স্টেশনে থাকে মোদীর গুচ্ছ গুচ্ছ পোস্টার। সব স্টেশনে রেলের উদ্যোগে একটি করে দোকান বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই মোদীর ছবি। এখন ধুম পড়েছে সেলফি জোন তৈরির। দেশের সব বড়, মাঝারি স্টেশনগুলিতে এক বা একাধিক অস্থায়ী ও স্থায়ী সেলফি জোন তৈরি হচ্ছে শুধুমাত্র মোদীর প্রচারের জন্য। একটি জোন বানাতে খরচ হচ্ছে ১.২৫ লক্ষ থেকে ৬.২৫ লক্ষ টাকা করে। রেলের এক একটি জোন খরচ করছে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। পরিষেবার উন্নতির টাকা নেই। নিরাপত্তায় ব্যয়ে অভাব টাকার। অথচ মোদীর প্রচারের জন্য টাকার কোনও অভাব নেই।

Comments :0

Login to leave a comment