Modi

মোদীর ৯: মহাজন সঙ্কটে বিপন্ন বিজেপি

ফিচার পাতা

বরেন সরকার
                   
কর্নাটকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পা রাখার শেষ ভরসার জমি হারানোর পর আম জনতার মন পেতে এবারে মহাসমারোহে শুরু করতে চলছেন ‘মহা জন সম্পর্ক কর্মসূচি’। 
বিজেপি’র এই কর্মসুচি আগামী ৩০ মে থেকে ৩০ জুন— দেশজুড়ে একমাস চলবে। মোদী আগামী ৩০ মে তা উদ্বোধন করবেন। পরের দিন দেশের ৫১ স্থানে হবে কর্মসূচির প্রচার মিছিল। তাতে থাকবেন নেতা মন্ত্রীরা। ৩৯৬টা লোকসভা কেন্দ্র, যা বিজেপি’র জেতা কেন্দ্র এবং জেতার সম্ভবনা আছে সেখানে হবে বড় সমাবেশ। প্রতি লোকসভা কেন্দ্রে ২৫০ পরিবার ধরে দেশে মোট ১ লক্ষ পরিবারের কাছে যাবে দলের কর্মীরা— বিজেপি’র ঘোষণা তেমনই। সেই পরিবারের মোদী প্রকল্প হাতে পাওয়াতে কত সুবিধা হয়েছে তা প্রচারে তুলে ধরা হবে। অনেকটা উজালা রান্না গ্যাস প্রকল্পের মতো হবে প্রচার মডেল। 
প্রতি কেন্দ্রে সামাজিকভাবে পরিচিত ব্যক্তি, ক্রীড়াবিদ, শিল্পীকে কর্মসূচিতে শামিল করা হবে। কর্মসূচিতে মোবাইলে মিস কলে যোগাযোগ করবে বিজেপি। ঘরে ঘরে যোগযোগ করতে গ্রামে দলের সদস্য পরিবারের সঙ্গে ভোজন করবেন। প্রতিটি রাজ্যে মিডিয়া এবং সোশাল মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলা হবে।  শেষ দিকে ২৩ জুন বিজেপি’র ১০ লক্ষ বুথ কর্মীর সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলবেন মোদী।
বলা হচ্ছে ৯বছর পূর্তি পালনের মধ্য দিয়ে লোকসভার প্রচারের সুর বেঁধে দেওয়ার মহড়া শুরু হয়ে গেল।

আগের প্রতিশ্রুতি ভ্যানিশ:

কিন্তু  নয়া কর্মসূচিতে মোদীর ঘোষিত সেই ঢালাও  প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল? প্রশ্ন উঠছে মোদীর ‘মহাজন সম্পর্ক কর্মসূচি’তে বছরে ২কোটি চাকরি প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল? কোথায় কৃষকের দ্বিগুণ আয় বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি? কোথায় শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষা? কোথায় আচ্ছে দিনের বিশ্বসেরা অর্থনীতি? 
সবই বেমালুম ভ্যানিশ। আবার নতুন প্যাকেজ!
জীবন জীবিকার চরম সঙ্কট তার সঙ্গে কর্পোরেটের বিপুল মুনাফা বৃদ্ধি ক্রমশ সমাজে গণঅসন্তোষের আকার নিচ্ছে। মোদী শাসনে এককথায়  বলতে গেলে যে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোদী ক্ষমতায় এসেছে তার কোনোটাই তারা পালন করেনি। দেওয়া হবে বলা হলেও সরকারের তরফে দেওয়া হয়নি বছরে ২ কোটি চাকরি। এতে শেষে সরকারি নিয়মে যে চাকরি চলতে থাকে সেই নিয়োগ পত্র বিলি করে মোদীর চাকরি বিলির প্রতিশ্রুতি পালন করছেন বলে বোঝানো হলো। যা নিছক প্রতারণা বলা যায়। মোদী ক্ষমতায় আসার আগে গ্রামীণ কর্মসংস্থানে ইউপিএ সরকার রেগা প্রকল্প তৈরি করে। সেই রেগা প্রকল্পের বরাদ্দ কমানো হচ্ছে প্রতিবছর। ফলে নতুন কর্সংস্থান দূরে থাক যে কর্মসংস্থান আগে সরকারি প্রকল্পে সৃষ্টি হতো তা আজ হচ্ছে না। 
মোদী ক্ষমতায় এসেই ঘোষণা করেছেন কৃষকদের আয় দ্বিগুণ বাড়ানো হবে। ‌আজও আয় দ্বিগুণ হারে বাড়েনি।  কৃষকদের বছরে ৬ হাজার টাকা নগদ ভরতুকি দেওয়া হবে ঘোষণা করা হলেও তা সকল কৃষকের কাছে আজও পৌঁছায়নি। দুর্নীতিমুক্ত ভারত বলে যে প্রচারে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তা আজ প্রহসনে পরিণত হয়েছে। আদানির শেয়ার জালিয়াতিতে অর্থ লোপাটের তথ্য ফাঁস হয়ে গেলেও তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই মোদীর। আজ পর্যন্ত আদানির বিরুদ্ধে একটা শব্দও শোনা যায়নি মোদীর মুখে। উলটে তার তদন্তে মোদী সরকারের তরফে বাধা দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দল আদানির দুর্নীতি নিয়ে তদন্তের দাবি তোলায় শাসক ভণ্ডুল করেছে সংসদের অধিবেশন। যা সংসদের ইতিহাসে কখনো দেখা যায়নি। দুর্নীতি ভোটে কোনও ইস্যু নয় বলে নয়া উদারবাদীরা প্রচার করে থাকে। সেই প্রচারও আজ ভ্রান্ত বলে প্রমাণ হয়েছে। কর্নাটকে ভোটে শাসকের দুর্নীতি ছিল প্রধান ইস্যু।  
‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়।’ এভাবেই গড়া হয়েছে মোদীর ইমেজ। তাতে শ্যাওলা জমতে শুরু করেছে। মোদী থাকলেই সব সমস্যার সমাধান এতদিন দেশ জুড়ে এটাই ছিল কিনে নেওয়া মিডিয়ার প্রচার। এবারে প্রচারে মহামানব গড়ে তোলা সেই বিশ্বাসেই যেন চিড় ধরেছে। কারণ আগেই পাঞ্জাবে, হিমাচলে হেরেছে দল। এবারে কর্নাটকে বিজেপি গোহারা হেরেছে। দক্ষিণের একমাত্র রাজ্য কর্নাটক, যেখানে গত দুই দশকে বিজেপি ঘুরে ফিরে ক্ষমতায় এসেছে। সেখানেই হার।   মোদীর ম্যাজিক কি আর কাজ করছে না? তাই কি শাসক ফিরে যাচ্ছে সেই জনসম্পর্কে নিয়ে প্রচার তোলার দিকেই। বিরোধী দলেরা আজও জনজীবনের সমস্যা নিয়ে  তাদের আন্দোলনে রাস্তাতেই আছে। তার ফল মিলেছে। মিডিয়ার প্রচারে তা স্থান না পেলেও ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ভোটের ফলে। মিডিয়ায় তুলে ধরা মোদীর ম্যাজিক আর কাজ করছে না।

লড়াকু মুখ আড়াল মিডিয়ায়:

নিত্যদিন হাত কাজ, দু’বেলা পেট ভরে খাবার, মাথার উপর ছাদ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা এসব দাবি দাওয়া নিয়ে সমাজে নানা ধরনের নিরন্তর যে রাজনৈতিক আন্দোলন চলে তাদের সেই সরব মুখগুলি মুখগুলো মূল মিডিয়ায় ব্রাত্য হয়ে গেছে। যেমন দেখা গেল মোদীর জমানাতেই সাধারণ মানুষের জরুরি জ্বালানি রান্নার গ্যাস ও কেরোসিনের দামে ভরতুকি তুলে দিয়ে তার চার গুণ বাড়ানো হলেও তার প্রতিবাদ আজ আর কোনও মূল মিডিয়ার সংবাদে ঠাঁই পায় না। প্রমোদের প্রচারে মুখ ঢেকেছে কর্পোরেট মিডিয়া। তাতেই বেশ চলছিল মোদীর রাজত্বে কর্পোরেটের রমরমিয়ে মুনাফা পাহাড় গড়ে তোলা কারবার। সেই আদবানির ‘ফিল গুড’ থেকে মোদীর শাসনে ‘আচ্ছে দিনে’ এসে শোষণ  বঞ্চনা ও অসাম্য আরও বেড়ে গেল। এই সময়ে জনতার ক্ষোভ অসন্তোষকে বিপথে চালিত করতে বা তাতে মলম জোগাতেই নিয়ে আসা হয়েছে ধর্মের রাজনীতি। ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক জিগির তুলে ভোট তোলাটা রাজনীতির একরকম ধারা তৈরি করে দিতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। নয়া উদার বাদের শুরু থেকে দেখা গেল বিজেপি’র ধর্ম আর কর্পোরেটের অর্থবলের ককটেল শাসকের রাজনীতির মূল ধারা হয়ে গেল। একটা রূপান্তর দেখা গেল রাজনীতির পরিসরে। যারা সামাজিক অসাম্য বঞ্চনা শোষণের সমাজবদলের জন্য রাজনীতি করছেন তাদের রাজনীতিকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়ার ছল চাতুরি চললো। তাদের রাজনীতিকে বাতিল করে  শাসকের সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটিয়ে ভোট তোলার রাজনীতিকে আসল রাজনীতি চালিয়ে দেওয়া হলো। ক্রমশ ধর্মীয়, জাতপাতের মেরুকরণ ভোট জেতার অন্যতম চাবি কাঠি হয়ে গেল। অনেক সময় সাম্প্রদায়িকতা একটা বৈধতা দিতে নরম হিন্দুত্ব ও উগ্র হিন্দুত্ব ধারণা চালু করা হলো। ক্রমশ দেশের বিরোধী ডানপন্থী দলের মধ্যেও  সেই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি ভোট তোলাটা বর্তমান সময়ের চাহিদা বলে একটা ধারণা তৈরি করা হয়েছিল। 
                    
মন্দির, মুনাফা এবং মানুষ:

বাবরি মসজিদ ভেঙে রামমন্দির তৈরি করা আইনিভাবে অন্যায় হলেও তা  মানুষের বিশ্বাস বলে প্রচার তুলে রামমন্দির তৈরি করাই রাজনীতির মূল লক্ষ্য করে তুললো বিজেপি। রামমন্দির পর্ব ফিকে হতেই একে একে ধর্মীয় মেরুকরণের অন্য তাস বের করা হলো। ধর্ম নিয়ে রাজনীতিতে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মকে ভোটে  নানাভাবে ব্যবহার করেছে। কর্পোরেট ও তার কেনা মিডিয়া এই ধর্মের রাজনীতিকে সমাজে ক্রমশ গ্রহণযোগ্য করে তোলার কাজ করছে। কর্নাটকে তাই নির্বাচনের আগে থেকে ধর্মীয় মেরুকরণ নিশ্চিত করতে হিন্দুত্বের নানা প্রচার হাজির করা হলো। এলো হিজাব  নিয়ে বিতর্ক, মাংস হালাল নিয়ে প্রচার, তা নিয়ে হিন্দুত্ববাদী হামলা চললো। গোরক্ষার নামে সংখ্যালঘুদের উপর  সামাজিক নিপীড়ন চললো। হিন্দুত্বের প্রচার চড়া সুরে তুলতে খাদ্য, বস্ত্র, সামাজিক আচার ব্যবহার সবেতেই ফতোয়া জারি হলো হিন্দুত্ব বাহিনীর। হিন্দু মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াতে সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কুৎসিত প্রচার চললো। এমন কি ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়ে টিপু সুলতানের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অবদানকে কালিমা লিপ্ত  করা হলো। ভোটের বাজারে প্রচারের শেষ মুহুর্তে হিন্দুত্ব বাহিনীর বজরঙ দলকে চাঙ্গা করতে মোদী ধর্মকে সামনে রেখে হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, ‘বিরোধী দল ভোটে জিতলে আপনাদের দেবতা হনুমানজিকে তারা গারদে পুরবে। তাই বিরোধীদের ভোট দেবেন না।’ ধর্মের নামে ভোট তোলা আইন বিরোধী হলেও কে কার কথা শোনে? 
কর্নাটকে বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের তীব্র হিংসার বিদ্বেষের প্রচার করেও অবশেষে ভোটে সেভাবে সাড়া পেল না। দেখা গেল বিজেপি কর্নাটকে ভোট পেল ৩৬%। গত ২০১৮ সালে বিজেপি কর্নাটকে  ভোট পেয়েছিল প্রায় ৩৬%।  ভোট এক হলেও তবে আসন কমেছে বিজেপি’র। তারা গতবার ভোটে আসন পেয়েছিল ১০৪ এবার পেয়েছে ৬৫ আসন। বিজেপি’র ভোট রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় বেড়ে গেলেও রাজ্য বাকি অংশে ভোট কমে গেছে। ফলে ভোট এক থাকলেও আসন বাড়েনি। বিজেপি’র ভোট বেড়েছে শহর বেঙ্গালুরে এখানে ১৬ আসন জিতেছে বিজেপি। 
নয়া উদারবাদে তৈরি হয়েছে নব্য ধনী। বিজেপির সাম্প্রদায়িক প্রচার শহর বেঙ্গালুরে দাগ কেটেছে। এছাড়া উপকূলবার্তা এলাকায় ভোট বেড়েছে বিজেপি’র। সেখানে গত কয়েকয়েক বছর ধরে লাগাতার সাম্প্রদায়িক জিগির তুলে প্রচার চালিয়েছে বিজেপি। ভোটে তার ফয়দা পেয়েছে বিজেপি। এদিকে কর্নাটক মুম্বাই লাগোয়া এলাকায় লিঙ্গায়েত ও উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের সংখ্যা বেশি। সেখানে ধর্মীয় মেরুকরণ জাতপাতের  প্রচারে ফয়দা তুলেছে বিজেপি। রাজ্যের বাকি এলাকায় এবং গ্রামে সেভাবে আর কোথাও বিজেপি ভোটে ফয়দা তুলতে পারেনি। গ্রাম কর্নাটকে একদম  মুছে গেছে বিজেপি। রাজ্যে ক্ষমতায় থেকে হিন্দুত্বের সব তাস খেলেও দলের এই শোচনীয় পরাজয়  হবে তা ভাবতেই পারেনি বিজেপি। প্রশ্ন উঠেছে  কর্নাটকে বিজেপি’র হিন্দুত্বের গবেষণাগার উপকূলবর্তী এলাকা ঘিরে। এখান থেকে  রাজ্যে বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রচার শুরু করেছিলেন বিজেপি নেতা সিটি রবি। তিনি দীর্ঘদিনের বিধায়ক। তার এলাকাতেই  হিন্দুত্বের প্রচার কোনও কাজ দেয়নি। বিজেপি গড়ে তিনি গোহারা হেরেছেন।
আগামী বছর লোকসভা ভোটের সঙ্গেই হয়তো ভোট হবে মধ্য প্রদেশ, ছত্রিশগড়, রাজস্থান ও ওডিশায়। সেই ভোটেও কি হিন্দুত্বের জিগিরেই  ভরসা বিজেপি’র?  কিন্তু মাঝে তো তিন রাজ্যের নির্বাচনে দেখা গেল চড়া হিন্দুত্বের টোটকা কাজ দেয়নি।

বিভাজন ছেড়ে ‘বিকাশ’?:

যেসব রাজ্যে ডবল ইঞ্জিনের টোটকা দিয়ে ক্ষমতায় আসা হয়েছিল তা আর কাজ করছে না। এবারে তাই মোদী হ্যায় তো সব মুমকিন হ্যায় বোঝাতে বিজেপি-কে ফের যেতে হবে দুয়ারে দুয়ারে। বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির, ফের কাশী মথুরায় মসজিদ ভেঙে মন্দির, গোরক্ষা, খাদ্য বিধি, পোশাক বিধি, ধর্মান্তরণ, মুসলিমদের বিরুদ্ধে তীব্র  বিদ্বেষের বাতাবরণ তৈরি করে বিজেপি জাতীয় রাজনীতিতে যেভাবে ধর্মীয় মেরুকরণের ফায়দা গত দুই দশকে তুলেছে তা তা কি ফের  লোকসভার ভোট জেতায় বাজিমাত করবে? বড় প্রশ্নের সামনে চলে এসেছে  ধর্মের নামে ভোট তোলার রণকৌশল। উদারবাদের দুই দশকে অনেক সময় বিজেপি শরিক দলগুলিকে সেই ধর্মের নামে ভোট তোলার কৌশল সানন্দে গ্রহণ করেছে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে যে ঘৃণা ছিল তা ক্রমশ লঘু হয়েছে বিজিপি ঘনিষ্ঠ শরিক দলগুলির উদ্যোগে। রাজ্যে যেমন অতীতে বিজেপি শরিক তৃণমুল মন্দির নির্মাণ করে দর্মের নামে ভোট তোলার কৌশল নিয়েছে। প্রাক্তন শরিক অকালি দলের ধর্মের নামে ভোট তোলার নানা কৌশল সকলের জানা। গত দুই দশকে  ভোট তুলতে রাজনীতিতে ধর্মের নামে দাপাদাপি  করে  বিজেপি তাদের হিন্দুত্বের গবেষণাগার গুজরাটে ভোট বাড়ানো শুধু নয় তার শাসন ক্ষমতা ধরে রেখেছে।কিন্তু সেই  একই পথে হিন্দুত্বের গবেষণা বলে পরিচিত হয়ে উঠেছিল দক্ষিণের রাজ্য কর্নাটক। কিন্তু ভোটের ফলে তো গুজরাট হলো না। দেখা যাচ্ছে কর্নাটকে  ফেল করছে হিন্দুত্ববাদীর ধর্মীয় মেরুকরণের রণকৌশল। ফলে ফের মন্দির জিগিরে না গিয়ে আপাতত জন সম্পর্কের যাত্রা করেই কি  বিজেপি আম জনতার নাড়ি বুঝে নিতে চাইছে?

আশা জাগিয়েছে প্রতিরোধ:

এদিকে  জনবিরোধী নীতি নিয়ে আন্দোলনে বিরোধীদের জনসমর্থন বাড়ায় তাদের উপর আক্রমণ ক্রমশ শাণিত হচ্ছে। আইনের নামে নিছক একটা ছেদো কারণে বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ বাতিল করা হলো। সুপ্রিম কোর্টে যেখানে সমস্ত দিক বিবেচনা করে দিল্লি প্রশাসনিক ক্ষমতা দিল্লি রাজ্য সরকারে হাতে দেওয়ার পক্ষে রায় দিল। সেই রায়কে নাকচ করে নিজের হাতে প্রশাসনিক ক্ষমতা দখলে কেন্দ্র জারি করে দিল অর্ডিন্যান্স। সরাসরি আপ সরকারের থেকে দিল্লির  প্রশাসনিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হলো। কংগ্রেস এবং বামপন্থীদের মতো মূল বিরোধী দলগুলি থেকে নানা সময়ে একটা দুরত্ব দেখিয়ে এসেছে আপ তৃণমূল কংগ্রেসের মতো  অবিজেপি দল। এতে তারা মোদীর প্রিয় হলেও  এবারে  তারা  মোদী সরকারের নিয়ে নতুনভাবে ভাবনা শুরু করেছে। ফলে এক চেটিয়া মোদী কে সর্বেসর্বা  বা বিশ্বগুরু করে তোলা প্রক্রিয়া বানচাল হতে বসেছে। কেটে যাচ্ছে কি রাজনীতি আকাশে টেনে নামানো অরাজনীতির রাত। আর কি তবে ভোট তোলায় ধর্মের  জাল আর কাজ করবে না? রাস্তায় রাস্তায়  রুটি রুজির লড়াইয়ে আছড়ে  পড়া জনরোষ কি সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে?

Comments :0

Login to leave a comment