Mosques attacked and vandalized in celebration of India's victory

মধ্য প্রদেশ, গুজরাটে ভারতের জয়ের উল্লাসে মসজিদে হামলা, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

জাতীয়

ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে, সেই খুশিতে বাইক মিছিল নিয়ে মসজিদের সামনে গিয়ে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ালো হিন্দুত্ববাদীরা। রবিবার রাতে এই ঘটনা ঘটেছে মধ্য প্রদেশের ইন্দোরের মহুতে এবং গুজরাটের গান্ধীনগরে। দুটি জায়গাতেই রমজান উপলক্ষে রাতে তারাবীহর নমাজ চলছিল মসজিদে। সেখানে গিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বাইকের হর্ন বাজিয়ে, বাজি ফাটিয়ে, জয় শ্রীরাম সহ সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে হিন্দুত্ববাদীরা। এমনকি মহুতে মুসলিমদের অশ্রাব্য গালিগালাজ করে হিন্দুত্ববাদীরা। বজরং দল, বিজেপি যুব মোর্চা ইত্যাদি সংগঠনের কর্মীরা সরাসরি এই ঘটনাগুলিতে যুক্ত। এর জেরে বাদানুবাদ, হাতাহাতি, পাথর ছোঁড়া, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তারপর যথারীতি দুই রাজ্যের বিজেপি সরকার একতরফা ভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ করছে। বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের মত দমনমূলক ধারা দেওয়া হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে। 
ভারতের জয়ের পরেই রাত দশটা নাগাদ ৪০টি বাইকে শতাধিক লোক মিছিল বের করে ইন্দোরের মহুতে। সেই মিছিল জামা মসজিদের সামনে এনে জয় শ্রীরাম, ভারত মাতার জয়ের পাশাপাশি মুসলমানদের গালিগালাজ দেওয়া শুরু করে। সেই সময়ে রাতের নমাজ চলছিল। নমাজ শেষে লোকজন বেরতে শুরু করলে মিছিলের শেষটি সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। এই অবস্থায় মিছিল থেকে মসজিদের মধ্যে সুতলি বোম ফেলা হয়। বোমটি সেখানে ফাটার পরেই উত্তেজনা শুরু হয়ে যায়। দুই পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ, হাতাহাতির মধ্যেই বাইক মিছিলের লোকেরা পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। পুলিশের সামনেই পাথর ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তার জেরে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। পুলিশ দর্শকের ভূমিকায় থাকে। হিন্দুত্ববাদীরা এই সময়ে আশপাশের দোকান, অটো, মোটর সাইকেল ইত্যাদিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। 
জামা মসজিদের ইমাম মহম্মদ জাভেদ এই দিন ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেছেন, আমি জানি না কীভাবেই এখান দিয়ে মিছিলের অনুমতি দেওয়া হল। আগেই স্থির হয়েছিল এখান দিয়ে মিছিল যেতে দেওয়া হবে না। ইমাম জানিয়েছেন, যে লোকটা মসজিদের মধ্যে বোম ফেলেছিল নমাজে আসা লোকেদের সঙ্গে তার হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। আমি ওই লোকটাকে মসজিদের বাইরে বের করি। এই সময়ে অমিত যোশী আসেন। তিনি কথাবার্তা শুরু করেন। তাঁকে আমি বলি, থানায় চলুন। সেখানে বসে শান্তিতে কথা বলা যাবে। তিনি মসজিদের এখান থেকে যেতেই ওদিক থেকে পাথর ছোঁড়া শুরু হয়ে যায়। উল্লেখ্য, অমিত যোশী বিজেপি’র যুব সংগঠন যুবমোর্চার মহু শহরের সভাপতি। ইমাম মহম্মদ জাভেদ বলেছেন, পুলিশের সামনেই পাথর ছোঁড়া হয়েছে। হই হট্টগোল শুনে আশপাশের লোকেরাও চলে আসে। তখন দুই পক্ষের মধ্যে পাথর ছোঁড়া চলে। 
এই ঘটনা নিয়ে দিনভর সংবাদ মাধ্যমে এইভাবে প্রচার চলে যে, ভারতের জয়ের খুশিতে মিছিল হচ্ছিল। সেই মিছিল মসজিদের সামনে থেকে যাওয়ার সময়ে দুই পক্ষের অশান্তি, পাথর ছোঁড়া এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এমনভাবে এই সংবাদ পরিবেশন করা হয়, যেন ভারতের জয়ে অখুশি মুসলমানরা মিছিলে হামলা করেছে। এর জেরে এদিন দুপুরে ইমাম মহম্মদ জাভেদ আবার বলেন, আগে থেকেই ধারনা তৈরি করে রাখা হয়েছে যে, মুসলমানরা দেশবিরোধী। আমাদের মসজিদ পাকিস্তানে নয়, আমরা হিন্দুস্তানের বাসিন্দা। এখানেই থাকবো। বজরং দলের জেলা আহ্বায়ক শুভম ঠাকুরের কথাতেও স্পষ্ট হয়ে গেছে বাইক মিছিল ভারতের জয়ে সাধারণ মানুষের ছিল না বরং হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির। তিনি বলেছেন, পাথরের আঘাতে আমাদের সংগঠনের কর্মীদের কয়েক জন চোট পেয়েছে। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, এর জন্য শহরের কাজীর ঘরে বুলডোজার চালাতে হবে। 
পাথর ছুঁড়েই যদিও ক্ষান্ত হয়নি বজরঙ দল, যুবমোর্চার বাহিনী। মসজিদের আশপাশের দোকান এবং দাঁড় করিয়ে রাখা বাইক, অটোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ২০টি বাইক, দুটি গাড়ি, একটি অটোতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি পুলিশের বাইকও ছিল। এছাড়াও ৫টি গাড়ি এবং ১০টি বাইক ভাঙচুরি করা হয়েছে। চারটি দোকানে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরমধ্যে চুড়ি, পাপঁড়, মেডিক্যাল এবং কসমেটিক্সের দোকান রয়েছে। এখানেই দোকান জিতেন্দ্র বাত্রার, জানালেন ১৫ দিন আগে রমজানের জন্য ৫ লক্ষ টাকার মালপত্র তুলেছিলেন। রাতে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল। অবশিষ্ট হামলাকারীরা নিয়ে গেছে লুট করে। একই অবস্থা দোকানদার আজ্জুর। জানিয়েছেন ১১টা নাগাদ নমাজ পড়ে এসে বসেছিলাম। একদল লোক এসে আমাদের ঘর টার্গেট করে আগুন ধরিয়ে দিল। গুদামের খুবই ক্ষতি হয়েছে। এদিন সকালে পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইন্দোরের জেলাশাসক আশিষ সিং জানিয়েছেন, মহুর পাঁচ জায়গায় রবিবার রাতে এইধরনের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তরা করা হয়েছে। 
গুজরাটের গান্ধীনগরে দেহগাম শহরে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে হিন্দুত্ববাদীদের মোটরসাইকেল মিছিলকে ঘিরেই। এখানেও রাত সাড়ে দশটা নাগাদ মুসলিম নিবিড় এলাকার একটি মসজিদের সামনে গিয়ে বাইকের ইঞ্জিন এবং তীব্র হর্ন বাজিয়ে উল্লাস করতে থাকে হিন্দুত্ববাদীরা। মুসলিম সম্প্রদায়কে গালিগালাজ করতে থাকে। সেই সময়ে নমাজের জন্য উপস্থিত ব্যক্তিদের সঙ্গে বাদানুবাদ শুরু হয়ে যায়। এরপরেই দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। জেলার ডেপুটি পুলিশ সুপার পি এন বান্দা জানিয়েছেন ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment