RAILWAY BOARD BALASORE

ব্যর্থতা মানতে নারাজ রেল বোর্ড বলল
‘ইন্টারলকিং’ নয় দায়ী ‘ইন্টারফেরেন্স’

জাতীয়

Not Correct to Call it A Failure

বৈদ্যুতিন ইন্টারলকিং ব্যবস্থায় গলদের অনুমান নাকচ করছে রেলওয়ে বোর্ড। রবিবার, প্রাথমিক তদন্তের পর, রেলওয়ে বোর্ড মনে করছে রেল লাইনের সিগন্যালের ব্যবস্থায় অনভিপ্রেত কোনও বাধা তৈরি হয়েছিল। বালেশ্বরের ঘটনায় তিনশোর কাছাকাছি যাত্রীর মৃত্যুর পরও সরাসরি ব্যর্থতা বলে মেনে নিতে রাজি নয়।   

রবিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন রেলওয়ে বোর্ডের ট্রেন চলাচল বিষয়ক সদস্য জয়া ভার্মা সিন্‌হা। এদিন সকালেই রেল মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছিলেন যে সিগন্যালিংয়ের ত্রুটিই বালেশ্বরে তিন ট্রেনের সংঘর্ষের সম্ভাব্য কারণ। তবে ইন্টারলকিং সিস্টেমে সমস্যার অনুমান জানিয়েছিলেন তিনি। 

ভার্মা সিন্‌হা বলেছেন, ‘‘ইন্টারলকিং ব্যবস্থায় ব্যর্থতার কারণে দুর্ঘটনা হয়নি। সিগন্যালিং ব্যবস্থায় ‘ইন্টারফেরেন্স’ বা অনভিপ্রেত সঙ্কেত ঢুকে পড়েছে। তবে কেন এই তা হলো বোঝা যাবে তদন্ত শেষ হলে।’’ ভার্মার মত, ‘‘ইন্টারফেরেন্স কেন হলো সেটি খুঁজে দেখা হবে। কর্মীদের ভুল, প্রাকৃতিক কারণে সমস্যা, দীর্ঘদিন ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটির মতো বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।’’ 

রেলওয়ে বোর্ডের সদস্যের বক্তব্যের সঙ্গে রেল মন্ত্রীর বক্তব্য মিলছে না। রবিবার সকালে বৈষ্ণব ঘোষণা করে দিয়েছিলেন তদন্ত শেষ। পরে যদিও বলেছেন, তদন্তের প্রাথমিক পর্ব শেষে তিনটি কারণ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে। কিন্তু জয়া ভার্মা সিন্‌হা যা জানিয়েছেন তাতে বোঝা যাচ্ছে প্রাথমিক অনুমানে পৌঁছানোর জায়গায় গিয়েছে রেল। তার মধ্যেও ‘ইন্টারলকিংয়ের সমস্যা’ না ‘ইন্টারফেরেন্স’ তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। 

ইন্টারলকিং ব্যবস্থা রেলের সুরক্ষা বন্দোবস্তের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিপদ হতে পারে এমন সিগন্যাল বা সঙ্কেত যাতে দেওয়া না হয়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা হয় স্বয়ংক্রিয় এই ব্যবস্থায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনও চালক যদি অতিরিক্ত বেগে ট্রেন ছুটিয়ে দেন, তা’হলেও সতর্ক করবে বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা। আর ইন্টারলকিংয়ে একটি ট্রেন কোনও লাইনে থাকলে বিপদসীমার মধ্যে অন্য ট্রেন যাওয়ার সঙ্কেত পাবে না। 

রেলওয়ে বোর্ডের প্রাথমিক তদন্তে দেখা গিয়েছে বালেশ্বরের বাগানাগা বাজার স্টেশনে দু’দিকে দু’ট মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে তা’হলে করমণ্ডলের চালক লুপ লাইনে ঢুকলেন কিভাবে? লুপ লাইনেই দাঁড়িয়ে ছিল মুখ্যত লোহা ভর্তি মালগাড়ি। 

সিন্‌হা ভার্মা বলেছেন, মালগাড়ি অত্যন্ত ভারি হওয়ায় ধাক্কা খেয়েও সেটি লাইন থেকে সরেনি। ছিটকে গিয়েছে করমন্ডল একস্প্রেস। উলটোদিক থেকে ধেয়ে আসা যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট। জানা গিয়েছে, দু’টি যাত্রীবাহী ট্রেনের গতিই ছিল প্রস্তাবিত সীমা, ঘন্টায় ১৩০ কিলোমিটারের মধ্যে।  

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রাক্তন রেল মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যের সঙ্গেও একমত নয় রেলওয়ে বোর্ড। মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, সংঘর্ষ প্রতিরোধী যান্ত্রিক ব্যবস্থা, পরিভাষায় ‘কবচ’ না থাকার ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়নি। জয়া ভার্মা সিন্‌হা বলেছেন, যে তীব্র গতিতে এবং দ্রুততায় যাত্রীবাহী ট্রেন মালগাড়িকে ধাক্কা দিয়েছে সেখানে ‘কবচ’ বা সংঘর্ষ প্রতিরোধের কোনও ব্যবস্থাই কাজ করত না।

মৃতের সংখ্যা আগের ঘোষণার থেকে কমিয়ে দিয়েছে রেল। শনিবার বেলায় বলা হয়েছিল নিহতের সংখ্যা ২৮৮। আহত ১০৭৫। রবিবার বলা হয়েছে নিহতের কয়েকজনকে দু’বার তালিকায় আনা হয়েছে। সঠিক সংখ্যা ২৭৫। আহতদের মধ্যে সাতশোর কিছু বেশি যাত্রীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসার পর।

Comments :0

Login to leave a comment