landslides Darjeeling

দার্জিলিঙে ধসে মৃত প্রৌঢ়,উত্তরবঙ্গে বন্যার ভ্রূকুটি

রাজ্য

landslides Darjeeling

ভাদ্রের শুরুতেই বৃষ্টি আশা জাগাচ্ছে কৃষিজীবীদের। কাটা পাট এবার অন্তত জাঁক দিতে পারা যাবে। টানা গরমের তিতে-বিরক্ত দক্ষিণবঙ্গবাসীদের একটু শান্তি ছোঁয়াচ মিলেছে। বৃহস্পতিবার থেকে একটানা বৃষ্টি চলছে উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গে। উত্তরবঙ্গে ভরা তিস্তার চোখরাঙানি ফের নতুন করে দেখা যাচ্ছে। উত্তরবঙ্গে ভূমিধসে আতঙ্কিত মানুষ। ধসে দার্জিলিঙে একজনের মৃত্যু ঘটেছে।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে, বৃষ্টির প্রকোপ থাকবে শনিবারেও। তবে এর প্রাবল্য কিছুটা কমবে। শুক্রবার কলকাতা সহ পার্শ্ববর্তী জেলার আকাশ ছিল মেঘলা। দিনের বেলায় কখন মাঝারি, কখন জোরে বৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এক ধাক্কায় ৫ ডিগ্রি কমে গিয়েছে। এদিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমে হয়েছে ২৭.৫ ডিগ্রি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৬.৫ ডিগ্রি। 


দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টিতে এখনই তেমন কোনও বড় সমস্যা না দেখা গেলেও উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। অবিরাম বৃষ্টিতে দার্জিলিঙ পাহাড়ে ভূমিধসে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকালে দার্জিলিঙের তাকভর ব্লকের পাতাবুংয়ের দারাগাঁও গ্রামে পাহাড়ের গা বেয়ে ধস নেমে আসে। ভূমি ধসে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় বাবুলাল রাই (৫৯) নামে এক ব্যক্তির। তিনি পাতাবুং চা বাগানের দারাগাঁওয়ের বাসিন্দা। পাহাড়ি এলাকায় জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় পুলিশ, দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ি এলাকার ধসে এলাকার মানুষ বেশ উদ্বেগের মধ্যে কাটাচ্ছেন।   
না থামা ভারী বর্ষণের জেরে পাহাড়ি এলাকায় একাধিক ধস নামার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন এলাকার মানুষ। প্রবল বর্ষণে পুলবাজার থানার পুরদু্ং এলাকাতে এদিন ধস নামে। ধসে ওই এলাকার লোধামা যাওয়ার রাস্তার অনেকটাই বসে গিয়েছে। ধসের কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ লোধামার সাথে। এর পাশাপাশি দার্জিলিঙের হ্যাপিভ্যালি চা বাগান লাগোয়া রাস্তাও ধসে গিয়েছে। রাতভর বৃষ্টির জেরে কালিম্পঙে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে একাধিক জায়গায় ধস নামার খবর মিলেছে। ২৯ মাইলে রাস্তার ওপর এক বড় গাছ ভেঙে পড়ার খবর মিলেছে। ধস নেমেছে ৫৫ নম্বর  জাতীয় সড়কেও। ফলে জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির জেরে ডুয়ার্সের প্রায় সবকটি নদীর জলস্তর অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তা নদীর জল ঢুকে জলবন্দি হয়ে পড়েছে ক্রান্তি ব্লকের চাঁপাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের তিন শতাধিক পরিবার। 


বিডিও প্রবীর কুমার সিনহা এবং গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান নন্দিতা রায় মল্লিক জানান, একদিকে পাহাড় ও সমতলে ভারী বৃষ্টিপাত, তার উপর এনএইচপিসি (কালিঝোরা) বাঁধ থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৩ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। তিস্তা, ব্যারেজে ২৭টি গেট খোলা  আছে। প্রতি ঘণ্টায় সাড়ে চার হাজার কিউসেক জল প্রবাহিত হচ্ছে। 
স্বাভাবিকভাবেই কালিঝোরার পর ডুয়ার্সের অন্য নদীগুলির জল তিস্তার সঙ্গে মিশে যাওয়ার কারণে চাঁপাডাঙায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জলমগ্ন পরিবারগুলোকে অস্থায়ী শিবিরে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে জানান বিডিও। নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।  
অন্যদিকে, সিকিম পাহাড়ে লাগাতার বৃষ্টির জেরে তিস্তায় লাল সতর্কতা জারি করলো সেচ দপ্তর। শুক্রবার তিস্তা ব্যারেজ থেকে ৬০০০ কিউসেকের বেশি জল ছাড়া হয়েছে। ফলে জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে তিস্তায়। 
ভুটান পাহাড়েও বৃষ্টির কারণে জলঢাকা নদীর সংরক্ষিত এবং অসংরক্ষিত উভয় এলাকায় হলুদ সতর্কতা জারি করেছে সেচ দপ্তর। অন্যদিকে তিস্তার জলস্তর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় করলা নদীর দু’কূল ছাপিয়েছে। জল ঢুকছে করলা পাড়ের নিচু এলাকায়। 


টানা বৃষ্টির জন্য জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন নিচু এলাকায় সকাল থেকে জলমগ্ন। বৃহস্পতিবার রাতের বৃষ্টিতে শহরের কদমতলা, ডিবিসি রোড, তিন নম্বর ঘুমটি, মহামায়া পাড়া কামারপাড়া, মোহন্তপাড়া, নিউ টাউন পাড়া এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে শুক্রবার বেলার দিকে বৃষ্টি কিছুটা কমলে জল নামে এলাকাগুলি থেকে।  

Comments :0

Login to leave a comment