Opposition Unity

একনায়কতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে দেশ, এই সময় ঐক্য গড়ে তোলা জরুরি

জাতীয়

দেশ ক্রমশ একনায়কতন্ত্রের দিকে এগচ্ছে। এই সময় আরও জোরদার ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন বলেই মনে করছে বিরোধীরা। সেই লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার সংসদের বাজেট অধিবেশনের শেষ দিনে ১৯টি বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে মিছিল করে। পুলিশ মিছিল সংসদ চত্ত্বরের বাইরে আটকালে তাঁরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি’র হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে শক্তিশালী বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
আদানিদের শেয়ার কারচুপি নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গঠন করে তদন্তের দাবিতে অনড় বিরোধীরা। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার এই প্রশ্নে নিশ্চুপ থাকলেও বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে ওই দাবি করে যাচ্ছে সমানে। এমনকি এতদিন কয়েকটি বিরোধী দল কংগ্রেস সহ অন্যদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চললেও এখন তাদের অনেকেই যৌথ লড়াইয়ে শামিল হচ্ছে। জেপিসি ছাড়াও দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি এবং গণতন্ত্রের ওপর আঘাত নিয়েও লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে অঙ্গীকার করেন বিরোধী নেতারা। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস সাংসদ মল্লিকার্জুন খাড়গে মাত্র ১২ মিনিটে দেশের ৫০ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট পাশ করা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। বিজেপি সবসময় বিরোধীদের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলে বলে যে সুষ্ঠুভাবে সংসদ চলা নিয়ে ওদের কোনও সদিচ্ছা নেই এবং ওরাই অচলাবস্থার জন্য দায়ী। একথা যে কতটা ভ্রান্ত তা ১২ মিনিটে বাজেট পাশের মধ্য দিয়েই ফাঁস হয়ে গিয়েছে বলে মনে করেন খাড়গে। তিনি জানান, তাঁর ৫২ বছরের সাংসদ জীবনে এমন ঘটনা এই প্রথম প্রত্যক্ষ করলেন। এরপরেই তাঁর কটাক্ষ, ‘এই সরকার গণতন্ত্র নিয়ে বড় বড় ভাষণ দেয়। কিন্তু নিজেরাই সেপথে হাঁটে না।’
ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক সম্মেলনে এদিন খাড়গে বলেন এখন ১৮-১৯টি বিরোধী দল আদানিকাণ্ডে জেপিসি’র দাবিতে সোচ্চার। কারণ মাত্র দু থেকে আড়াই বছরের মধ্যে আদানির সম্পদ ১২ লক্ষ কোটিতে পৌঁছে গিয়েছে কার দাক্ষিণ্যে সেই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও সরকার কেন জেপিসি-তে রাজি হচ্ছে না এই প্রশ্ন তুলে খাড়গে বলেন, ‘আসলে কিছু গলদ আছে। একারণেই ভয় পাচ্ছে সরকার, রাজিও হচ্ছে না।’ তিনি অভিযোগ করেন, আদানি নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে হবে বলেই বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে সরকারপক্ষ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে রাহুল গান্ধী ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে সংসদ অচল করে রাখল। এরই সঙ্গে সরকার যে তড়িৎ গতিতে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ কেড়ে নিল সেকথা উল্লেখ করে গুজরাটের আমরেলির বিজেপি সাংসদ দোষী সাব্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে রেহাই পেয়ে যান, সেই প্রশ্ন তোলেন খাড়গে। বিরোধীরা যে ন্যায়, সংবিধান এবং গণতন্ত্র রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করছেন সেকথা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। পরিশেষে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মোক্ষম অভিযোগ তুলে খাড়গে বলেন, ‘সংসদ অধিবেশন ভেস্তে যাক এটাই উদ্দেশ্য ছিল সরকারের। এভাবে চললে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে, দেশ ক্রমশ একনায়কতন্ত্রের শিকার হবে।’ একারণেই তিনি বিরোধী ঐক্য শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।
বিরোধীরা দেশ বাঁচানোর সঙ্গে অখণ্ডতা রক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে খাড়গে বলেন, ‘মোদীজী সবসময় দাবি করেন যে তিনি তৃণমূলস্তরের খবর রাখেন। কিন্তু তিনি জানেনও না মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব কিংবা গণতন্ত্রের পরিবর্তনকে ঘিরে মানুষের অসন্তোষ কতটা। উনি ওঁর মতো বলে চলুন। আমরাও আমাদের কাজ করে চলি। ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকি।’
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে ডিএমকে, সিপিআই(এম), সিপিআই, আরজেডি, আইইউএমএল, জেডি(ইউ) উপস্থিত ছিল। ডিএমকে’র টি আর বালু শাসকগোষ্ঠী কীভাবে রাহুল গান্ধীর ক্ষমা চাওয়া নিয়ে সংসদ অচল করে দেয় সেকথা উল্লেখ করে অভিযোগ করেন, ‘এর মধ্য দিয়ে সরকারের আধিপত্যবাদই প্রকটভাবে ধরা পড়েছে।’ তিনি মনে করেন, ভারত জোড়ো যাত্রার সাফল্য দেখে রাহুল গান্ধীকে নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বিজেপি’র। ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতির কেশব রাও বলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে এতদিন দূরত্ব বজায় রাখলেও এখন একসঙ্গেই সবাই মিলে এগিয়ে যেতে চাই যাবতীয় মতভেদকে দূরে সরিয়ে রেখে। আপ’র সঞ্জয় সিং বলেন, রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ কেড়ে নিয়ে একটাই বার্তা দেওয়া হলো যে তোমরা সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারো কিন্তু কোনওভাবেই আদানি সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না। কারণ সরকার তো ওদের হয়েই কাজ করছে।
বাজেট অধিবেশনের শেষে এদিন তেরঙ্গা মিছিলের ডাক দিয়েছিল বিরোধীরা। জাতীয় পতাকা হাতে তাঁরা ‘দেশের গণতন্ত্র বিপদের মুখে’ স্লোগান দিতে এগিয়ে গেলে অন্যান্য বারের মতো এদিনও বাধা দেয় পুলিশ। বাধা পেয়ে আরও জোরে সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন বিরোধী নেতারা।

Comments :0

Login to leave a comment