সাম্য রাহা
চালু পাঁচ ‘এইমস’-র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গুজরাটের রাজকোট থেকে অনলাইনে উদ্বোধনের এই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীও। তবে তাঁর ঘোষণায় চালু এই চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মান কেমন, সেই প্রশ্নও দেখা দিল বড় হয়ে।
রবিবার মোদীর বক্তব্য শুরু হবার আগেই খালি চেয়ার দেখা গিয়েছে কল্যাণীতে। সভা শুরুর আগে বিজেপি’র কর্মীরা ভিড় জমিয়েছিলেন। এর আগে ২০২১’র জানুয়ারিতে বিধানসভা নির্বাচনে আগ দিয়ে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে কল্যাণীর ‘এইমস’-র উদ্বোধন করেছিলেন মোদী। কিন্তু পরিষেবা এবং পরিকাঠামোর মানে এখনও এই ‘এইমস’ দিল্লির ধারে কাছে নেই। এখনও চালু হয়নি ‘ক্যাথ ল্যাব’। কল্যাণী এইমস’র ওয়েবসাইটও জানাচ্ছে হৃদ শল্য চিকিৎসা এখনও পরিকল্পনার স্তরে।
জাতীয় স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস বা ‘এইমস’, গড়া হয়েছিল দিল্লিতেই। শীর্ষ স্তরের চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশে নয়, দেশের বাইরেও স্বীকৃত দিল্লির এইমস। ২০০৪’র পর থেকে ঠিক হয় বিভিন্ন রাজ্যে ‘এইমস’-র মানের হাসপাতাল গড়া হবে। পশ্চিমবঙ্গে প্রথমে ঠিক ছিল রায়গঞ্জে হবে এইমস। তৃণমূলের বাধায় তা সরিয়ে করা হয় কল্যাণীতে। কেন্দ্রের ইউপিএ-১ সরকারের সময়েই শুরু হয় এই উদ্যোগ।
এদিন উদ্বোধনের তালিকায় রয়েছে রায়বেরিলি, ভাতিন্ডা, মঙ্গলাগিরির এইমস-ও। কিন্তু কেমন তার পরিকাঠামো, কেমন হবে চিকিৎসার মান? রাজকোটে মোদী নিজে যেখানে গিয়ে উদ্বোধন করেছেন প্রতিষ্ঠানের, তা চালু হবে ২৫০ শয্যা নিয়ে। কোনও বিচারেই যে পরিকাঠামো উল্লেখযোগ্য নয়।
এদিন যে প্রতিষ্ঠানগুলির উদ্বোধন হয়েছে আনুষ্ঠানিক বিচারে, তার কয়েকটি আগে থেকে চালুর ঘোষণা করে রেখেছিল কেন্দ্র। যেমন কল্যাণী এইমস’র ওয়েবসাইট জানাচ্ছে যে ২০১৯ থেকে প্রথম শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে এমবিবিএস’র ৫০ ছাত্রকে নিয়ে। তেমনই উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলির এইমস আউটডোর বা ‘ওপিডি’ চালু করেছিল ২০১৮’তে। আবার অন্ধ্র প্রদেশের মঙ্গলাগিরি এইমস ২০১৮’তে বিজয়ওয়াড়ার অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চালু হয়। গুজরাটের রাজোকোটে এইমস চালু হয় ২০২০-তে।
বস্তুত পুরনো কেন্দ্র নতুন করে এদিন উদ্বোধনের ঘোষণা করেছেন মোদী। ‘আয়ুষ্মান ভারত, বিকশিত ভারত’ স্লোগান দিয়ে উদ্বোধন করেছেন তিনি। সংসদের শেষ অধিবেশনে আলোচনাতেও দেশে ২২টি নতুন এইমস গড়ার দাবি করে ভাষণ দিয়েছেন মোদী। মূল্য বক্তব্য, ইউপিএ’র সময়ে অন্য রাজ্যে ৭টি এইমস চালু হলেও তাঁর মেয়াদে সংখ্যা বেড়ে ২২ হয়েছে। কিন্তু দেখা গিয়েছে তাঁর সময়ে চালু ‘এইমস’ নাম দিয়ে প্রতিষ্ঠানের মান আদৌ শীর্ষস্তরের নয়। কারণ প্রায় কোনোটিই পূর্ণতা পায়নি মোদীর ১০ বছরের শাসনে।
২০২৩’র ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী মনসুখ মান্ডবীয় লোকসভায় জানিয়েছিলেন যে ‘এইমস’-র মানের ১৬টি প্রতিষ্ঠান ‘কার্যকারিতার বিভিন্ন স্তরে রয়েছে’। মুখ্যত আউটডোর চালানো হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে। শয্যা চালু হলেও পূর্ণ প্রকল্প লক্ষ্যের ধারকাছে নেই।
কল্যাণীর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রামজী সিং সমস্যা স্বীকার করে নিয়েছেন রবিবারেই। তিনি জানিয়েছেন যে চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। পরিকাঠামোর অভাবও রয়েছে। চিকিৎসক নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ চলছে।
Comments :0