প্রবন্ধ
মুক্তধারা
বিদায় শহর...
অভীক চ্যাটার্জি
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩
পুজো শেষ। মা ফিরে চলেছেন মেঘের ভেলায় কৈলাশে। শহরের পরিযায়ী পাখিরা জমা হতে শুরু করবে স্টেশনে, এয়ারপোর্টে। একে একে ফিরে যাবে যে যার কর্মস্থলে। আর বৃদ্ধ বাবা মা, চোখের জলে বিদায় দেবেন তার আদরের ধনটিকে। তখন নীলকন্ঠ পাখি হয়তো মহেশ্বরের কানে কানে বলবে মহেশ্বরীর প্রত্যাগমন বার্তা।
যেদিন মহালয়ার পূণ্য লগ্নে রেডিওর নস্টালজিয়ায় আধ অন্ধকারে বেজে ওঠে, "আশ্বিনের শারদ প্রাতে,বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির,কিম্বা সুরের মূর্ছনায় বেজে ওঠে তোমার আলোকবেনু, সেদিন থেকেই প্রতিটি প্রবাসী বাঙালির মন আর বসতে চায় না তার ৪ বাই ৪ এর কিউবিকালে। তারপর শুধু দিনগোনা, আর পঞ্চমী রাতে অথবা ষষ্ঠীর সকালে ঘুম চোখে দরজাতে টোকা মেরে বলা,"মা, দরজা খোলো"। কিন্তু, এসব কিছুর মাঝে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। আজ অর্ধেকের বেশি শিক্ষিত বাঙালি প্রবাসী কেনো? কেনো সেই মানুষ গুলোকে পরিযায়ী পাখির মত উৎসবেই এসে উদয় হতে হয়! আর এই মহাশ্মশানভূমি যার অনুপ্রেরণার ফসল, তিনিও নির্বিকার।
তারপর পাঁচটা দিন, হইহুল্লোড়, আনন্দ। বন্ধুরা এক হয়, প্রেমিকা দেখতে পায় প্রেমিককে। ভাই ভাইকে। আনন্দ, খাওয়াদাওয়ায় কখন যে সময় কেটে যায়, বোঝাই যায় না। তারপর পুজো কাটে, পাখি ফিরে যাবে নিজের ঘরে। নিজের শহরকে রিক্ত করে অর্ধেক শহর পাড়ি জমাবে নিজের কর্মস্থলে। বুড়ো বাবা আর মা, পড়ে থাকবেন এ পোড়া শহরের নোনা ধরা ঘরে। আর সেই পাখি চোখের জলে ফ্লাইটের উইন্ডো সীটে সজল চোখে তাকিয়ে দেখবে পিছনে চলে গেলো "নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর" প্লেন তখন ছুটতে শুরু করেছে রানওয়ে ধরে। উৎসব আনন্দের। কিন্তু এ বিদায় বড়ো কষ্টের। বড্ড যন্ত্রণার।
Comments :0