Panchayat Election 2023

ভোটের কাজে যেতে ভয় পাচ্ছেন প্রয়াত রাজকুমারের রায়ের স্ত্রী

রাজ্য

Panchayat Election 2023

বিশ্বনাথ সিংহ: রায়গঞ্জ

কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া ভোট করাতে রাজি নয় রাজকুমার হত্যা বিচার মঞ্চ। ২০১৮ সালে রাজ্য পুলিশের দায়িত্বে হওয়া এই নির্বাচনে প্রাণ হারিয়েছিলেন এই প্রিসাইডিং অফিসার। এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্য পুলিশে আস্থা নেই ভোট কর্মীদের । সেদিনের সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতিতে এবার আতঙ্কিত প্রয়াত রাজকুমার রায়ের স্ত্রী অর্পিতা রায় বর্মণ।
পঞ্চায়েত ভোট যেদিন থেকে ঘোষণা হয়েছে সেদিন থেকেই চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। পঞ্চায়েত ভোট হবে শুনেই চলে গিয়েছে ঘুম খাওয়াদাওয়া। পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য পুলিশের উপর আর আস্থা নেই তৎকালীন প্রিসাইডিং অফিসার নিহত রাজকুমার রায়ের স্ত্রীর। রাজকুমার রায়কে হত্যা করা হয়েছে, দাবি বিচার মঞ্চের প্রতিনিধিদের। তাঁরা বলেছেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে ভোট করানো হোক, এর যাবতীয় ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। 


২০১৮ সালের মে মাসে পঞ্চায়েত নির্বাচন অতিক্রান্ত হলেও আজও রাজকুমার রায়ের রহস্যজনক মৃত্যুর কিনারা হয়নি। পাঁচ বছর স্বামীর মৃত্যু রহস্য অধরা থেকে যাওয়ায় তাঁর ছবি বুকে আঁকড়ে এখনও কেঁদে চলেন স্ত্রী, মেয়ে, ছোট ছেলে। মৃত প্রিসাইডিং অফিসার রাজকুমারের স্ত্রী রবিবার সাংবাদিকদের জানান, ‘‘২০১৮ সালের সেই ভয়ঙ্কর দিনটির কথা কিছুতেই ভুলতে পারছি না। ভোট শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগেও কথা হয়েছিল। ডিসিআরসি কাগজপত্র জমা দিয়েই বাড়ি ফেরার কথা। কিন্তু কোথায়? সারারাত উৎকণ্ঠার পর সকালে রাজকুমার রায়ের ছিন্নভিন্ন দেহ উদ্ধার হলো। 
আবার পঞ্চায়েত ভোট এসেছে। যেদিন থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়েছে সেদিন থেকে ঘুম ও খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এবার আবার কী ঘটনা ঘটবে কে জানে! তাঁর দাবি, ‘পঞ্চায়েত ভোট হোক কিন্তু, আর যেন কেউ রাজকুমার রায় না হয়, আমার জীবনে যে ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনা যেন আর কারো জীবনে না ঘটে।’ রাজ্য পুলিশের উপর কোনও আস্থা নেই অর্পিতা রায় বর্মণের। তাঁর মতে, পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা দিয়ে ভোটকর্মীদের ভোট কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করুক নির্বাচন কমিশন।

 


শাসক দলের নেতারা নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে গিয়ে রহতপুর হাই মাদ্রাসার জনপ্রিয় ইংরেজির শিক্ষক ভোটকর্মী রাজকুমার রায় সেই ভোট প্রহসনকে প্রবলভাবে বাধা দেন। সব বাধাকে উপেক্ষা করেও স্বচ্ছভাবে ভোট চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। অভিযোগ, কিছু সময় পরেই প্রিসাইডিং অফিসার রাজকুমার রায় আচমকাই ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর পরিবর্তে অন্য একজনকে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব দিয়ে ভোটপর্ব সম্পন্ন হয়েছিল। সারারাত প্রিসাইডিং অফিসারের কোনও খোঁজ মেলেনি। ভোটের পরের দিন ১৫ মে তাঁর ছিন্নভিন্ন দেহ রায়গঞ্জের সোনাডাঙিতে রেল লাইনের ধার থেকে উদ্ধার হয়।
এই অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে। রায়গঞ্জ শহর স্তব্ধ করে দেন ভোটকর্মীরা। আন্দোলনে শামিল হওয়ার কারণে তিন শিক্ষক গ্রেপ্তার হন এবং অসংখ্য শিক্ষকের নামে অভিযোগ দায়ের হয়। কিন্তু মাস্টারমশায়ের মৃত্যুর কিনারা হয়নি। আতঙ্কের পঞ্চায়েত ভোটে শঙ্কার কথা জানালেন নিহত রাজকুমার রায়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাহিদুর রহমান। তাঁর বক্তব্য, ৫ বছর আগের স্মৃতি এখনও দগদগে। ভোটের কাজে যোগ দিতে ভয় পাচ্ছেন ভোটকর্মীরা। এমনকি প্রয়াত রাজকুমারের স্ত্রীও শঙ্কায় রয়েছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া ভোট করাতে রাজি নয় রাজকুমার হত্যা বিচার মঞ্চ। কারণ ২০১৮ সালে রাজ্য পুলিশের দায়িত্বে হওয়া এই নির্বাচনে প্রাণ হারিয়েছিলেন এই প্রিসাইডিং অফিসার। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্য পুলিশে আস্থা নেই ভোট কর্মীদের ৷ 

Comments :0

Login to leave a comment