DUTTAPUKUR RESIDENT

পুলিশ, পঞ্চায়েত আমাদের কথা শুনলে এই দৃশ্য দেখতে হতো না’

রাজ্য

ইদ্রিস আলি মণ্ডল,
গ্রামবাসী, মোচপোল

তখন সকাল সাড়ে ৯টার মতো হবে। অন্য রবিবারগুলোর মতো আজও একটু বেরিয়েছিলাম। কাছাকাছিই ঘুরি, গল্প করি। আজও তাই ছিলাম। প্রথমে একটা শব্দ শুনলাম। তারপরই বাড়ি থেকে ফোন। খবর আসে ভয়ানক কিছু ঘটে গিয়েছে শামসুলের বাড়িতে। প্রায় ছুটেই বাড়িতে এলাম। দেখলাম আরও অনেকেই তখন ওদিকেই ছুটছে। এসে বীভৎস দৃশ্য দেখলাম। এর আগে টিভিতে দেখেছি বা এই ধরনের ঘটনার কথা শুনেছি কিন্তু চোখের সামনে কখনো দেখিনি। চোখের সামনে দেখছি দেহগুলো বেগুনপোড়ার মতন ঝলসে গিয়েছে। হাত, পা, মাথা-মুণ্ডু সব ছিটকে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে রয়েছে। চাপ চাপ রক্তও দেখলাম। ধুলোয় ভরে গেছে জায়গাটা। শামসুলের বাড়ি পুরো ধুলোয় মিশে গিয়েছে। চাঙড়গুলো ছিটকে পড়েছে দূরে দূরে। মনে হচ্ছিল কেউ যেন প্রচণ্ড ধাক্কায় বাড়িটাকে মাটিতে বসিয়ে দিয়েছে। বাড়ির সব কিছু ছিটকে গেছে এদিক ওদিক। শামসুলের বাড়িতে শামসুল, তার বউ, তার দুই ছেলে এবং একটি মেয়ে ও নাতনি থাকতো। তাদের কোথাও দেখতে পাইনি। পাশের বাড়ি মনসুর আলির। তাঁর বাড়িরও সামনের দিকটা পুরো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। শাটার ছিটকে গেছে। ছাদের অনেকটা উড়ে গিয়েছে। মনসুর আলি একজন চাষি। এরই মধ্যে পুলিশে খবর দিল কেউ। 
আমাদের গ্রাম মোচপোল। এই গ্রামে বেআইনি বাজি কারখানা চালায় কেয়ামত আলি। কেয়ামত পাশের গ্রামের লোক। স্থানীয় তৃণমূল কর্মী শামসুল আলির বাড়িতে চলতো এই কারখানা। কেয়ামতও তৃণমূল করে।
শামসুল আলির উত্থান হঠাৎ করেই। প্রথমে সে ছিল বাস কন্ডাক্টর। তারপর সে ভ্যান চালাত। এখন এই বেআইনি বাজি কারখানা চালাত কেয়ামতের সাথে। কারখানাটা হয়েছে বছর চারেক। প্রথমদিকে আমরা ভেবেছিলাম ছোটখাটো বাজি কারখানা। তারপর যখন আস্তে আস্তে কিছুটা আন্দাজ করতে পারি সেখানে ভয়ঙ্কর কিছু একটা চলছে তখন দেড় দু’বছর ধরে বিভিন্ন সময় পঞ্চায়েতে এবং প্রশাসনে আপত্তি করেছিলাম আমরা। কিন্তু পঞ্চায়েত কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। পুলিশও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। পুলিশ টাকা ছাড়া কোনও কাজ করে না। আমাদের বলতে কোনও আপত্তি নেই শামসুল এবং কেয়ামত পুলিশকে টাকা দিয়ে নিজেদের পকেটে তুলে রেখেছিল। আর ওদের বিরুদ্ধে যদি কেউ কিছু বলতে যেত তাহলে শাসক দলের পক্ষ থেকে তাকে হুমকি দেওয়া হতো। পুলিশ তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয় না। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের বুথে আইএসএফ জয়ী হওয়ার পর আইএসএফ কর্মীরা যখন বিজয় উৎসব করেছিল তখন তাদের মধ্যে থেকে মুজিবুর গাজী নামে এক আইএসএফ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছিল। তাকে আদালত থেকে জামিন করাতে হয় আমাদের। 
এই কারখানায় এলাকার কয়েকজন মানুষ যেমন কাজ করতেন তেমন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থেকে কয়েকজন শ্রমিক এসেছিলেন। এই শ্রমিকদের মধ্যে থেকে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মজুরি ছিল এই শ্রমিকদের।
এই গোটা ঘটনায় তৃণমূল এবং পুলিশ একসঙ্গে দায়ী। আমরা চাই বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ হোক।

Comments :0

Login to leave a comment