Recruitment scam

নগরোন্নয়ন দপ্তরের শীর্ষ আমলার যোগ মিলেছে নিয়োগ দুর্নীতিতে

রাজ্য

২০১৪’র প্রাইমারি টেট শুধু নয়, তৃণমূল সরকারের আমলে ২০১২’র প্রাইমারি টেটেও অযোগ্যদের চাকরি বিক্রিতেও সক্রিয় ছিল নিয়োগ কাণ্ডে ধৃত প্রোমোটার অয়ন শীল।
মঙ্গলবার নগর দায়রা আদালতে শুনানিতে ইডি’র আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি বিচারককে বলেন, ২০১৪’র নয় এই সরকারের একেবারে প্রথম থেকেই নিয়োগ দুর্নীতির চক্র চলেছে। তদন্তে ও জেরায় জানা গেছে ২০১২ সালেও অয়ন শীল, কুন্তল ঘোষদের চক্র সক্রিয় ছিল। তাজ্জব তদন্তকারী আধিকারিকরাও।
দশ বছর ধরে চলেছে এই অবৈধ নিয়োগ। ওএমআর শিট বিকৃত করা, খালি ওএমআর শিটে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে কোটি কোটি টাকা পরীক্ষার্থীদের কাছ কোটি কোটি টাকা তোলা। এক দশক ধরে তা চলেছে যদিও একমাত্র রাজ্যের নাকি জানতেন না এই দুর্নীতির কথা। 
এদিন আদালতে রিমান্ড রিপোর্টে ইডি লিখিতভাবে জানায় যে ইতিমধ্যে নিয়োগ কাণ্ডেই ধৃত আরেক তৃণমূল নেতা, হুগলী জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু ব্যানার্জি হেপাজতে থাকাকালীন জেরায় জানায় ২০১২-১৪’র দুটি প্রাইমারি টেটেই পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলেছিল অয়ন শীল। সেই টাকার একটা বড় অংশ সে নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত আরেক এজেন্ট, যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক বনে যাওয়া কুন্তল ঘোষকে দিত। মূলত তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি ও প্রোমোটার অয়ন শীলের মধ্যে সেতু হিসাবে কাজ করতো কুন্তল ঘোষ। কুন্তল ঘোষের মাধ্যমে টাকার একটা বড় ভাগ পার্থ চ্যাটার্জির কাছে পৌঁছাতো ওই অবৈধ নিয়োগকে নিশ্চিত করতে। পার্থ চ্যাটার্জির মাধ্যমেই শুধু ২০১৪ নয়, ২০১২’র প্রাইমারি টেটেও অবৈধ নিয়োগ হয়েছে। তার জন্য টাকা তুলেছে অয়ন শীল। কুন্তল ঘোষ সহ একাধিক এজেন্টের মাধ্যমে সেই টাকার ভাগ পৌঁছে দেওয়া হতো প্রভাবশালীদের কাছে। টাকার বিনিময়ে শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে পার্থ চ্যাটার্জির অযোগ্য, অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের সরকারি শিক্ষকের পদে চাকরি নিশ্চিত করতেন!
রীতিমত চাঞ্চল্যকর দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি’র। ২০১১’তে তৃণমূল সরকারে আসার এক বছরের মধ্যেই এই নিয়োগ দূর্নীতির কারবার শুরু হয়। শুধু সরকারের মাথা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী নাকি তা জানতেন না। অথচ ২০১২ সাল থেকেই যে ব্যক্তি এই টাকার বিনিময়ে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার এই অবৈধ নিয়োগ চক্রে এজেন্ট হিসাবে কাজ করে গেছে, টাকা তুলেছে সেই ব্যক্তিকেই ২০২২সালে খোদ ভাইপো সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির অনুমতিক্রমে যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক পদে বসায় শাসক দল! দশ বছর ধরে যে চাকরি বিক্রির কেলেঙ্কারিতে যুক্তকেই রাজ্যস্তরে দলীয় পদ দেওয়ার ঘটনায় স্পষ্ট একেবারে শীর্ষ প্রভাবশালী মহল থেকেই মদত মিলেছে এই দুর্নীতিতে। 
শুধু তাই নয় এদিন নিয়োগ কাণ্ডে আদালতে আরো বিস্ফোরক তথ্য সামনে এনেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। ব্যাঙ্কশাল আদালতে শুনানি চলকালীন ইডির আইনজীবী জানিয়েছেন, নগরোন্নয়ন দপ্তরের জয়েন্ট ডিরেক্টর পদমর্যাদার এক আধিকারিকের মেয়ের সঙ্গে নিয়োগ কাণ্ডে ধৃত অয়ন শীলের ছেলের একটি যৌথ অংশীদারিত্বের সংস্থা রয়েছে। সেই অংশীদারী সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। পাশাপাশি ওই সংস্থার নামে একটি পেট্রোল পাম্পও রয়েছে বলে ইডির তরফে দাবি করা হয়েছে। ইডি’র আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি বলেন প্রাইমারি ও এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি পৌরসভার নিয়োগ দুর্নীতিতেও সরাসরি অয়ন শীলের যোগ মিলেছে। এক্ষেত্রেও প্রভাবশালী যোগ মিলেছে। পৌরসভার নিয়োগ দুর্নীতির ক্ষেত্রে তদন্তে এবার নগরোন্নন দপ্তরের শীর্ষ আমলার ওপরেও নজর রাখছে তদন্তকারী সংস্থা।
রাজ্যের নগরোন্নয়ন দপ্তরের ওই জয়েন্ট ডিরেক্টর পদমর্যাদার আধিকারিকের নাম  বিভাস গাঙ্গুলি। বিভাস গাঙ্গুলির মেয়ে ইমন গাঙ্গুলির সঙ্গে ধৃত প্রোমোটার অয়নের শীলের ছেলের ব্যবসার পার্টনারশিপের ফার্ম উদ্ধার রয়েছে। অয়ন শীল ও ইমন গাঙ্গুলি দু’জনে মিলে একসঙ্গে টাকা বিনিয়োগ করেছে, তাঁরা একটি পেট্রোল পাম্প কিনেছে। ফসিলস নামে তাঁদের যৌথ সংস্থা রয়েছে। ওই শীর্ষ আমালার কন্যা একটি রেস্টুরেন্ট তৈরি করতে চলেছে যেখানে সবটাই অয়ন শীলের পুত্র বিনিয়োগ করেছে। অয়ন শীলের পুত্র অভিষেক শীল বিপুল টাকায় একাধিক নামে, বেনামে জমিও কিনেছে। এসবই নিয়োগ দুর্নীতির টাকায়। 
একই সঙ্গে ইডি’র তরফে আদালতে জানানো হয়েছে পার্থ চ্যাটার্জি, অনুব্রত মণ্ডলদের মতই অয়ন শীল একাধিক ভুয়ো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা সরিয়েছে। তাঁর কোম্পানির বিভিন্ন স্টাফের নামে এইসব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হতো। 
ইডি জানায় এখনও অয়ন শীলের ৪০টা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পাওয়া গেছে আপাতত। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিতে এখনও পর্যন্ত ৮ কোটি টাকা পাওয়া পাওয়া গেছে। এছাড়াও  নামে, বেনামে  ৮টি ফ্ল্যাট, ৫টি গাড়ি, পেট্রোল পাম্প,  হোটেল- বিপুল সম্পত্তির মালকি এই অয়ন শীল। ১০০ কোটি টাকার বেশি তুলেছিলেন অয়ন শীল। পৌরসভার নিয়োগ দূর্নীতি থেকে তুলেছিলেন ৩৪ কোটি টাকার মতন। নিয়োগ দুর্নীতিতে তুলেছিল প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। এক হাজার পরীক্ষার্থীর কাছ থেকেই ৪৫ কোটি টাকা তুলেছিল। তার মধ্যে ২৬ কোটি টাকা এক এজেন্টের মাধ্যমে একাধিক প্রভাবশালী আমলার কাছে পাঠানো হয়েছিল। এছাড়াও কুন্তল ঘোষকে ৫০ লক্ষ টাকা নগদে দিয়েছিল। 
এদিন ফের অয়ন শীলের জামিনের আবেদন খারিজ করে বিচারক ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত জেল হেপাজতের নির্দেশ দেন।

Comments :0

Login to leave a comment