ভারতীয় সভ্যতার ঐতিহ্যের একটানা পুনরাবিষ্কারের যে প্রক্রিয়া চলছে, অযোধ্যায় রামমন্দিরের নির্মাণও ইতিহাসে সেই হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসে দেশবাসীর প্রতি ভাষণে এই কথাই উল্লেখ করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। বিরাট মন্দির নির্মাণকে শুধু মানুষের বিশ্বাস বলে নয়, বিচারবিভাগের উপরেও আস্থা বলে উল্লেখ করেছেন। রামমন্দির নির্মাণকে রাষ্ট্রপতি মুর্মু ভারতীয় সভ্যতার ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার বলছেন। হামেশাই রাষ্ট্রপতির আদিবাসী পরিচয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে অন্যরা কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেন। ভারতীয় সভ্যতার প্রকৃত ঐতিহ্য আদিবাসীদের সংস্কৃতির মধ্যে নিহিত। আদিম অধিবাসীদের সেই সংস্কৃতিকে অস্বীকার করার যে চেষ্টা হামেশাই করে থাকে সঙ্ঘ পরিবার, সেই কথাই একজন আদিবাসীকে দিয়ে বলিয়ে নেওয়া হলো সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির ভাষণে, এমনই বলছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে রাম এবং রামমন্দির নিয়ে প্রচার জোরালো করছেন প্রধানমন্ত্রীও। এদিন বুলন্দশহরে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাসের জন্য এক অনুষ্ঠান থেকেও প্রধানমন্ত্রী রামমন্দিরের প্রসঙ্গ তুলেছেন। তাঁর ভাষায় রামমন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এবার রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। মন্দির উদ্বোধনের ভাষণের মতই তিনি এদিনও বলেছে দেব থেকে দেশ এবং রাম থেকে রাষ্ট্রে যেতে হবে। বাবরি ধ্বংসের সময়ে উত্তর প্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কল্যাণ সিং। প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখে বাবরি ভাঙতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। এদিন মোদী তাঁর ভাষণে কল্যাণ সিংয়ের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, তিনি ‘রামকাজ’ এবং ‘রাষ্ট্রকাজ’ করেছেন। রাষ্ট্রের কী ‘কাজ’ করেছিলেন তা সকলেরই জানা। হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডা কার্যকরী করাকেই ‘রাষ্ট্র কাজ’ বলে চিহ্নিত করলেন প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই সেই ‘রাষ্ট্র কাজ’ সম্পন্ন করে ফেলায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা প্রধানমন্ত্রীকে বাহবা দিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। ‘ভারতীয় সভ্যতা’ গত পাঁচ শতক ধরে নাকি যে স্বপ্ন দেখছিল, তাকেই স্বার্থক করেছেন তিনি, এমনই বলেছে মোদীর সহকর্মীরা। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঐতিহাসিক কাজ অনেকবার হয়েছে কিন্তু যবে থেকে ক্যাবিনেট ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে এবং ব্রিটিশ সময়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলও ধরা হয়, তাহলেও এমন কাজ কখনও হয়নি, যা রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করে করা হয়েছে। কারণ ২২ জানুয়ারি আপনার মাধ্যমে যে কাজ হয়েছে সেটা ইতিহাসে অদ্বিতীয়। ১৯৪৭ সালে দেশের শরীর স্বতন্ত্র হয়েছিল, এখন দেশের আত্মায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার প্রস্তাব, রাষ্ট্রপতির ভাষণ এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, হিন্দুত্বকেই ‘ভারতীয় সভ্যতা’ এবং হিন্দুত্বের অ্যাজেন্ডাকে কার্যকরী করাই ‘রাষ্ট্র কাজ’ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
Comments :0