শুভ্রজ্যোতি মজুমদার
ভগ্নপ্রায় অবস্থা নয়ের দশকে নির্মিত প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ের নামাঙ্কিত ভবনের অডিটোরিয়ামের। সারানোর বা সংস্কারের কোন হেলদোল নেই বলছেন স্থানীয় মানুষ থেকে হল ভাড়া নেওয়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা।
নয়ের দশকে পৌরসভার বামপন্থী বোর্ডের সময় অস্কার জয়ী প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়কে স্মরণে রেখে সত্যজিৎ রায় ভবনের অডিটোরিয়াম তৈরি হয়। উদ্বোধন করেছিলেন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ও কমিউনিষ্ট আন্দোলনের প্রবাদপ্রতিম নেতা বিজয়কৃষ্ণ মোদক। আগে চাঁপদানি থেকে শ্রীরামপুর পর্যন্ত সাংস্কৃতিক সংস্থাদের আশ্রয়স্থল ছিলো সত্যজিৎ রায় ভবন।
নাটক ও গানের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান প্রদর্শনী হত সত্যজিৎ রায় ভবনে। কিন্তু দীর্ঘদিনের দক্ষিণপন্থী দলগুলির বোর্ডের দ্বারা পরিচালিত বোর্ডগুলি হলের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলো। এককালে রাজ্যের বহু খ্যাতনামা শিল্পী এসেছেন এই অডিটোরিয়ামে। এখন সেই ভবন ভগ্নপ্রায়। দীর্ঘ একটা সময় ধরেই পৌরসভা কোলডিপো সংলগ্ন মাতৃসদন ও পুরোনো ভবন থেকে স্থানান্তরিত হয়ে বৈদ্যবাটি পৌরসভা পরিচালিত হচ্ছে সত্যজিৎ রায় ভবন থেকে। বর্তমান পৌরবোর্ডের পৌরপ্রধান থেকে সব কাউন্সিলারেরা বসেন এই সত্যজিৎ রায় ভবনেই। অথচ সত্যজিৎ রায় ভবনের অডিটোরিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কারোর কোন মাথাব্যাথা নেই। এখন অডিটোরিয়ামের দেওয়ালের প্যানেল খসে গিয়ে অ্যালুমিনিয়াম ও লোহার কাঠামো বেরিয়ে গেছে। আগে পেটাই ছোবড়া ও গ্র্যাসবোর্ড খসে গিয়েছে। ছাদের প্যানেল ধরে রাখতে বছর খানেক আগে তৃণমূল পৌরবোর্ড আমলে বাঁশের কাঠামো দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছিলো।
কিন্তু ভাম সহ বিভিন্ন নিশাচর প্রাণীদের উৎপাত ও ঘুনের আক্রমণে বাঁশের কাঠামোটিও দূর্বল হয়ে পড়েছে। দেওয়ালে ও সিলিং এ পাখাগুলির ব্লেড নেই। ঘুপচি অন্ধকার হলে আলোর ব্যাবস্থা নেই। সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনেকে শ্লেষ উদ্ধৃত করে বলেন, হলের যা দশা পাখা তো ডানা কাটা পরী হবেই। অনেক সাংস্কৃতিক সংস্থার কর্ণধারেরা জানান আজকাল শুনছি পৌরসভার চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলারদের ভাতা আগে হয়। কিন্তু ভগ্নপ্রায় ভবনটির রক্ষনাবেক্ষণ হয় না।
পৌরসভার প্রাক্তন সিপিআই(এম) কাউন্সিলার বাদল দাস জানান একসময় বামপন্থী পৌরবোর্ড ও আমরা খেটে তিল তিল করে এই ভবন গড়ে তুলেছিলাম। বর্তমান পৌরবোর্ড সেই ভবন ও অডিটোরিয়ামকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ে নির্বিকার বসে আছে।
৮ নং ওয়ার্ডের বর্তমান সিপিআই(এম) কাউন্সিলার অভিজিৎ গুহ জানান আমরা পৌরসভার এই ঐতিহ্যবাহী অডিটোরিয়াম সারানোর জন্য পৌরপ্রধানকে জানিয়েছি। পরে পৌরপ্রধান জানিয়েছেন যে রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে।
রাজ্য সরকার খরচপাতির একটা তালিকা চেয়েছে। সত্যজিৎ রায়ের নামাঙ্কিত এমন একটি অডিটোরিয়াম গোটা দেশে একটিমাত্র রয়েছে। বৈদ্যবাটির সেই ঐতিহ্যকে রক্ষা করা আশু কর্তব্য বলেই আমার মনে হয়। সত্যজিৎ রায়ের শতবর্ষে তার নামাঙ্কিত ভবনের এমন বেহাল দশা দেখে ক্ষুব্দ জেলার সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
Comments :0