গল্প | নতুনপাতা
হ্যাপি নিউ ইয়ার, বাবা
সৌরীশ মিশ্র
"পলাশ, তোমার একটা চিঠি এসছে আজ। এই নাও।"
উপরের বাক্যটিতে যাঁর চিঠি এসেছে বলা হচ্ছে তিনি হলেন পলাশ দত্ত। বি এস এফ-এ কর্মরত। এখন পোস্টেড এই দিল্লিতে। আর যিনি ঐ বাক্যটা বললেন আর চিঠিটা দিতে এসেছেন পলাশবাবুকে, তাঁরই বাড়িতে এক অফিস-কলিগকে নিয়ে ভাড়া থাকেন পলাশবাবু। বাড়িওয়ালা ভদ্রলোক-ও বাঙালি। নাম রক্তিম সেনগুপ্ত। তিন পুরুষ ধরে দিল্লিতে বসবাস করছে ওঁদের পরিবার।
এই একটু আগে অফিস থেকে ফিরেছেন পলাশবাবু। যাঁর সঙ্গে থাকেন তিনি এই ফ্ল্যাটে, সেই রমেশ যাদব এখনো অফিস থেকে আসেননি। ও এলে একসঙ্গে টিফিন করবেন, তাই অপেক্ষা করছিলেন পলাশবাবু। তখনই, ফ্ল্যাটের কলিংবেলটা বেজে উঠেছিল। আর, দরজা খুলতেই পলাশবাবু দেখতে পেলেন, ষাটোর্দ্ধ রক্তিমবাবু হাসি-হাসি মুখে দাঁড়িয়ে। রক্তিমবাবু বন্ধ কলাপসিবল গেটের ফাঁক দিয়ে একটা খাম এগিয়ে দিয়েছিলেন পলাশবাবুর দিকে। পলাশবাবু সেটা নিতে নিতেই বললেন, "থ্যাংক ইউ সো মাচ। আসুন না ভিতরে।" কলাপসিবল গেটটা খুলতে উদ্যত হন পলাশবাবু।
"না, না। এখন আর বসব না। অফিস থেকে ফিরেছো। রেস্ট-টেস্ট নাও। আমি যাই।" বলেই ভদ্রলোক বিদায় নিলেন।
দরজা বন্ধ করে, খামটা হাতে করে সোফায় এসে বসলেন পলাশবাবু। ঘি-ঘি রঙের খাম। তার উপর স্কেচ-পেন দিয়ে তাঁর নাম ও এই বাড়ির ঠিকানা লেখা। এই খামটা যে কে পাঠিয়েছে বুঝতে একটুও অসুবিধা হয় না পলাশবাবুর। খামের উপরের হাতের লেখাটা যে তাঁর এক বড় আপনজনের। তাঁর মেয়ের। খুশির।
খামের মুখটা খুললেন পলাশবাবু। তারপর খামটা থেকে সাবধানে টেনে বের করে আনলেন সেটার ভিতরের বস্তুটা। খুশির হাতে আঁকা গ্রীটিংস কার্ড। পলাশবাবু দেখলেন, নানান রঙের স্কেচ-পেন দিয়ে বড় সুন্দর করে সাজিয়েছে মেয়ে কার্ডটা। গ্রীটিংস কার্ডটা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় পলাশবাবুর। ছোটোবেলা থেকেই আঁকার হাত দারুণ খুশির। আর এখন যতো বড় হচ্ছে সে, ততো তা আরও আরও ভাল হচ্ছে, দিন কে দিন। মেয়ের জন্য গর্ব হয় পলাশবাবুর। তিনি ঠিক করলেন, আগামীকাল অফিসে নিয়ে যাবেন তিনি কার্ডটা। পরিচিত সব্বাইকে দেখাবেন সেটা।
পলাশবাবু এবার কার্ডটা খোলেন। দেখেন, তাতে মেয়ে লিখেছে- হ্যাপি নিউ ইয়ার, বাবা।
আর, লেখাটা পড়তেই মুহূর্তে দু'চোখে জল চলে আসে পলাশবাবুর। কাজের চাপে, কতো মাস হয়ে গেল ছুটিতে কলকাতায় বাড়িতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি তাঁর। আর তাই, মেয়েকে যে সামনাসামনি দেখাও হয়নি বহুকাল হোলো।
কার্ডটা তাঁর বুকের মাঝে দু'হাতে আঁকড়ে ধরেন পলাশবাবু।
Comments :0