বিশ্বজিৎ দাস: গুয়াহাটি
শুক্রবার সকালে মণিপুরের চুরাচাঁদপুরে তিনজনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। এঁরা সকলেই রাজ্যের পূর্ত বিভাগের শ্রমিক ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিং শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, চুরাচাঁদপুর জেলার টরবুঙ শহরের পূর্ত বিভাগের বাংলোতে থাকা বহু শ্রমিক নিখোঁজ ছিলেন। এরমধ্যে শুক্রবার সকালে ওখানকার পাহাড়ে তিনশো ফুট গভীর খাদে একটি গাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা দেখে সেনাবাহিনীর জওয়ানরা গাড়ির কাছে গেলে সেখানে আধা মাটিচাপা দেওয়া তিনটি দেহ দেখতে পান। তিনটি দেহ শনাক্ত করা গিয়েছে। ওই বাংলোর আরও তিনজন শ্রমিক এখনও নিখোঁজ। এই তিনজনের দেহ উদ্ধারের পর সরকারিভাবে ৭১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানান কুলদীপ। নিরাপত্তা উপদেষ্টা আরও বলেন, সাম্প্রতিক হিংসাত্মক ঘটনার জেরে পার্শ্ববর্তী দেশ বার্মায় ২৫০-৩০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে, রাজ্যে জাতি সংঘর্ষকে হাতিয়ার করে হঠাৎ করে মণিপুর ভাগের দাবি উঠেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মণিপুর ভাগের দাবি কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক দলসংগঠন তোলেনি। খোদ বিজেপি এই দাবি তুলেছে। এতে মণিপুরকে টুকরো করার বিজেপি’র গোপন অভিসন্ধি প্রকাশ্যে এসে পড়েছে বলে মনে করছে বিরোধীরা। রাজ্যের দশজন জনজাতি বিধায়ক জনজাতিদের জন্য পৃথক প্রশাসনের দাবি তুলেছেন শুক্রবার। আপাতত পৃথক প্রশাসন চাইলেও তাদের মূল উদ্দেশ্য পৃথক রাজ্য। দশ বিধায়ক সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই দাবি জানিয়েছেন। পৃথক প্রশাসনের দাবিতে সোচ্চার হওয়া দশ বিধায়কের মধ্যে আটজনই বিজেপি’র। বাকি দুইজন বিজেপি’র শরিক দল কুকি পিপলস লায়েন্স (কেপিএ) দলের। বিবৃতিতে বিধায়করা বলেছেন, ‘আমরা আমাদের নিজ নিজ এলাকার জনগণের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সবাই একমত হয়েছেন যে মণিপুরে জাতি-জনজাতি একসঙ্গে বাস করা আর সম্ভব হবে না। তাই জনজাতিদের জন্য পৃথক মণিপুর প্রয়োজন। তবে এই মুহূর্তে আলাদা রাজ্যের দাবি আমরা তুলছি না। সংবিধান মেনে মণিপুরের জনজাতিদের পৃথক প্রশাসনিক এলাকা নির্দিষ্ট করে দিতে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’ বিধায়কদের এই বিবৃতি প্রকাশের পর রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন মোড় নিতে শুরু করেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, জাতি-জনজাতির মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি সুদৃঢ় করার বদলে উলটে দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থায়ী বিরোধ বাধানোর লক্ষ্যে হাঁটছে বিজেপি।
Comments :0