Sitaram Yechury Interview

বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ের অভিমুখ ঠিক করে দিয়েছে বামপন্থীরাই সাক্ষাৎকারে বললেন ইয়েচুরি

জাতীয়

 বিদায়ী লোকসভায় আসন কম থাকতে পারে, কিন্তু এই পর্বে বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কর্মসূচি ঠিক করায় বামপন্থীরাই অন্যতম প্রধান ভূমিকা নিয়েছে। সামনের সারিতে থেকে বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ের অভিমুখ নির্ধারণে ভূমিকা পালনের জন্য আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বামপন্থীদের আসনসংখ্যা বাড়বে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এই দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ করেছেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। এই সাক্ষাৎকারেই তিনি জোরের সঙ্গে বলেছেন, বিজেপি এবারও দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে দাঁত ফোটাতে পারবে না।
সাক্ষাৎকারে এবারের নির্বাচনী লড়াইয়ে বামপন্থীরা কতটা সফল হতে পারবে, সেই প্রশ্ন করা হয়েছিল ইয়েচু‍রিকে। তারই উত্তরে তিনি বলেন, এই ভোটে বামপন্থীদের ফল অবশ্যই আগের থেকে ভাল হবে। তবে কটি আসনে জেতা যাবে, বামপন্থীদের কাছে এটি আসল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। প্রকৃত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কত কর্মসূচি বামপন্থীরা ঠিক করে দিচ্ছে। গত পাঁচ বছরে বিজেপি’র তুলে আনা যে‍‌ যে বিষয়কে বামপন্থীরা সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং বিভাজন সৃষ্টিকারী বলে মনে করেছে, সেগুলির প্রতিটির ক্ষেত্রে বামপন্থীদের উদ্যোগই লড়াইয়ের কর্মসূচি ঠিক করে দিয়েছে। তা একইসঙ্গে সারা দেশে জনগণের লড়াইয়েরও অভিমুখ ‍‌নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইয়েচুরি এই প্রসঙ্গে উদাহরণ দিয়েছেন সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা খারিজ, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, কর্পোরেটমুখী কৃষি আইন, বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি, নির্বাচনী বন্ড বাতিল প্রভৃতির। তিনি বলেছেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই বামপন্থীরা থেকেছে প্রতিবাদের সামনের সারিতে। বামপন্থীদের প্রতিবাদ ক্রমে গোটা দেশে জনগণকে প্রতিবাদের পথ দেখিয়েছে। 
এর ব্যাখ্যায় সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিল করার পরে বামপন্থীরাই সবার আগে আদালতে তাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। ওই ধারা বাতিল করার পরে যখন সরকার জম্মু-কাশ্মীরে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আটক করার পাশাপাশি কারফিউ জারি করে রেখেছিল, তখন রাজনৈতিক নেতা হিসাবে তিনিই প্রথম সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়ে ওই সময়ে ইয়েচুরি জম্মু-কাশ্মীরের সিপিআই(এম) নেতা ইউসুফ তারিগামিকে দেখতে যাওয়ার এবং তাঁকে চিকিৎসার জন্য দিল্লির এইমসে নিয়ে আসার অনুমতি পেয়েছিলেন। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রসঙ্গে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, এই আইন নিয়ে জাতীয় স্তরে বিতর্ক তৈরি করা, রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ জানানো এবং সুপ্রিম কোর্টে এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা— সবকিছুতেই বামপন্থীরা থেকেছে প্রথম সারিতে।
এই সঙ্গেই ইয়েচুরি আরও বলেছেন, বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদই হোক, আর নির্বাচনী বন্ডের বিরোধিতাই হোক, প্রতিটি ক্ষেত্রেই বামপন্থীদের উদ্যোগ লড়াইয়ের বিষয় ঠিক করে দিয়েছে, সেই লড়াই নির্ধারণ করে দিয়েছে সারা দেশে জনগণের আন্দোলনের অভিমুখকে। বিলকিস বানোর ক্ষেত্রে তাঁর ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাঁরা প্রথম আবেদন জানিয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরোর সদস্য সুভাষিনী আলি। সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ওই ১১ জন ধর্ষকের সবার মুক্তির নির্দেশ খারিজ করে সবাইকে জেলে ফেরত পাঠিয়েছে। আবার সিপিআই(এম)-ই একমাত্র রাজনৈতিক দল, যে মোদী সরকারের নির্বাচনী বন্ডকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। শীর্ষ আদালতের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, বন্ড নিয়ে সিপিআই(‌এম)’র অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ সঠিক। ২০২০-২১ সালের ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনেও বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, যে আন্দোলনের জেরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন। যে সংযুক্ত কিষান মোর্চা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, সারা ভারত কিষান সভা সহ বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলি তার অন্যতম বড় শক্তি। ইয়েচুরি বলেছেন, স্পষ্টতই এই সমস্ত ক্ষেত্রেই বামপন্থীরা লড়াইয়ের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। তারই পরিণতিতে আসন্ন নির্বাচনে শক্তি বাড়বে বামপন্থীদের।

Comments :0

Login to leave a comment