প্রবন্ধ | মুক্তধারা
বাংলার সংস্কৃতিতে পিঠা
তপন কুমার বৈরাগ্য
বাংলার খাদ্য সংস্কৃতিতে পিঠা এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার
করে আছে।বাংলার পিঠার কথা পৌরাণিক কাহিনিতেও
উল্লেখ আছে। পৌষমাসের সংকারান্তির আগের দিন বাংলার
ঘরে ঘরে এই পিঠা পুলির উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। পিঠা এসেছে
সংস্কৃত পিষ্টক শব্দ থেকে।পিঠা হলো চালগুঁড়া,ডালবাটা,গুড়,
নারিকেল মিষ্টান্ন বিশেষ। আগেরকার দিনে যখন ঢেঁকি ছিলো,
তখন ঠাকুমা,দিদিমা,মা মাসি ,পিসিরা চাল ভিজিয়ে
রেখে সারারাত জেগে এই চাল ঢেঁকিতে গুড়িয়ে নিতো
গ্রামবাংলার নিজস্ব উৎসব এই পৌষপার্বন।মা মাসিরা
চালগুঁড়ানোর পরেরদিন সারারাত স্যাঁকস্যাঁক শব্দে মাটির
পাত্র দিয়ে নানারকম পিঠে তৈরি করতো।প্রাচীনবাংলার
পিঠার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুধপিঠা,সরুচিকলি,আসকে,
পুলিপিঠা ,সিদ্ধপিঠা ইত্যাদি।অগ্রহায়নের আমনধানের
চালের পিঠা শীতের খেঁজুরগুড় দিয়ে খেতে কার না ভালো
লাগতো।তখন গ্রাম বাংলার মানুষেরা ছিলো সৎ এবং সরল।
তখনকার মানুষেরা খেঁজুর রস জ্বাল দিয়ে যে গুড় তৈরি করতো
সে গুড় ছিলো নির্ভেজাল।এই গুড় দিয়ে পিঠে খেতে কার
না ভালো লাগতো।যান্ত্রিকতার যুগে মানুষ খাদ্যে ভেজাল
দিতে শিখলো।খেঁজুরগুড়ে আঁখেরগুড় ভেজাল দেওয়া হলো।
তাই পিঠে খেতে এই ভেজালগুড় দিয়ে আগের মতন স্বাদ
পাওয়া যায় না।আগের চালও নেই আর গুড়ও নেই।
তাই পিঠে খেয়ে আগের মতো আর আনন্দ পাওয়া যায় না।
তাই আগের চেয় পৌষপার্বন উৎসব অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে।
তবে পিঠার ধরনও বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে। প্রাচীন পিঠার
পর আমরা যে সব পিঠা পেলাম তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-- পাটিসাপটা,ভাপাপিঠা, ছাঁচপিঠা,ফুলঝুরি,চুইকিপিঠা,চাপড়িপিঠা,
ছিটপিঠা ইত্যাদি। বর্তমানকালে যেসব পিঠার সঙ্গে আমরা
পরিচিত হয়েছি তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য--মালপোয়া,ভেজিটেবিল
ঝালপিঠা,নকশিপিঠা , পাকনপিঠা ,জামদানি পিঠা, মোহনবাঁশি,ক্ষীরমুরলি,জামাইপিঠা ,চুঙ্গিপিঠা পুডিং ইত্যাদি। পিঠা একটি রন্ধন শিল্প।বাংলার পিঠা আনন্দ উদযাপনের প্রতীক।স্মৃতির ভান্ডার এই পিঠা।শীতকাল মানেই মায়ের হাতের পিঠা। আজ বিভিন্ন স্থানে পিঠা উৎসব হচ্ছে।বেশ কিছু লোক একে আশ্রয় করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করছে। শান্তিনিকেতেনের
পৌষমেলায় নানা ধরনের পিঠা পাওয়া যায়।কালনায় পিঠেপুলি
উৎসব হয়।পৃর্বস্থলীর খালবিল উৎসবেও নানারকমের পিঠে
বিক্রি হয়।পিঠা গ্রামবাংলার নিজস্ব খাদ্য সম্পদ।
Comments :0