সদ্য নির্বাচিত বামপন্থী রাষ্ট্রপতি আনুরা দিসানায়েকের দল জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) শ্রীলঙ্কার সংসদীয় নির্বাচনেও বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হয়ে অভাবনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মাত্র দেড় মাস আগে গোটা দুনিয়াকে চমকে দিয়ে সমস্ত প্রতিষ্ঠিত চিরাচরিত রাজনৈতিক দল ও নেতাদের বহু যোজন পেছনে ফেলে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রথম একজন বামপন্থী নেতা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন দিসানায়েক। যদিও প্রদত্ত ভোটের মাত্র ৪২শতাংশ পেয়েছিলেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বর্তমান সামাজিক, রাজনৈতিক এবং প্রধানত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঘোরতর সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে এক বামপন্থী দলের নেতার হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেবার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শ্রীলঙ্কার মানুষ। সেই ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হবার পর থেকে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিল এলিট শ্রেণির পরিবারতান্ত্রিক দল ও নেতাদের হাতে। ফলে তথাকথিত গণতন্ত্র থাকলেও সাধারণ মানুষের স্বার্থকে ঘিরে কোনোদিনই দেশ চালিত হয়নি। ধান্ধার ধনতন্ত্রের বিকাশ ঘটেছে দুর্নীতি, স্বজনপোষণকে সঙ্গী করে। দেশের উন্নয়ন, জাতির উন্নয়ন, সাধারণ মানুষের উন্নয়ন স্বার্থকে ঘিরে কোনোদিনই দেশ চালিত হয়নি। ধান্ধার ধনতন্ত্রের বিকাশ ঘটেছে দুর্নীতি, স্বজনপোষণকে সঙ্গী করে। দেশের উন্নয়ন, জাতির উন্নয়ন, সাধারণ মানুষের উন্নয়ন কোনোদিনই অগ্রাধিকার পায়নি। ক্ষমতাসীনের রাজকীয় বিলাসের জলুসের আড়ালে তলিয়ে যেতে থাকে অর্থনীতি। বেকারী, নিম্ন মজুরি, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জেরে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হতে থাকে। এমন এক অবস্থায় যখন মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যায় তখন ক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েন। গণরোষ, গণবিক্ষোভের উত্তাল তরঙ্গে তৈরি হয় বিদ্রোহের পরিস্থিতি। কার্যত গণ অভ্যুত্থানের চেহারা নিয়ে জনতা দখল নেয় রাষ্ট্রপতি ভবন। দেশ ছেড়ে পালাতে হয় ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতিকে। এমন মহা বিদ্রোহের অন্যতম শরিক ছিল দিসানায়েকের দল। দু’বছর পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সেই বামপন্থী নেতাকে শ্রীলঙ্কার মানুষ বেছে নেন তাদের রাষ্ট্রপতি হিসেবে।
রাষ্ট্রপতি হলেও দিশানায়েক ভোট পান মাত্র ৪২ শতাংশ। তাছাড়া সংসদে ২২৫টি আসনের মধ্যে তাঁর দলের প্রতিনিধি ছিল মাত্র ৩ জন। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দেশের অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে জনমুখী করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেগুলি রূপায়ণের ছাড়পত্র আটকে যাবে সংসদে। বলেছিলেন সংবিধান সংশোধন করে আরও জনস্বার্থমুখী করবেন। কিন্তু সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠতা না থাকলে কোনও প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই তিনি দ্রুত সংসদের নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন সেই নির্বাচনে শ্রীলঙ্কার মানুষ ঢেলে ভোট দিয়েছেন বামপন্থীদের। মোট ২২৫ আসনের মধ্যে ১৫৯ আসনে জয়ী হয় দিশানায়েকের দল। অর্থাৎ দুই তৃতীয়াংশের থেকেও বেশি আসন জেভিপি’র হাতে। তেমনি প্রদত্ত ভোটের ৬১ শতাংশ ভোট পেয়েছে তারা। স্বাভাবিকভাবেই শ্রীলঙ্কার মানুষ তাদের সমর্থন উজার করে দিয়েছে বামপন্থীদের উপর। এমনকি তামিল অধ্যুষিত জাফনাতেও জয়ী হয়েছে বামপন্থীরা।
শ্রীলঙ্কার বুকে বামপন্থীদের উত্থান এবং রাষ্ট্রক্ষমতা দখল নিঃসন্দেহে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। গোটা দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্কটে জর্জরিত মানুষ তাকিয়ে থাকবেন শ্রীলঙ্কার নতুন সরকারের দিকে। জনস্বার্থে তাদের ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং সাফল্য ভারত সহ অন্য দেশগুলির মানুষের চেতনায় নব জাগরণের বার্তা বয়ে আনবে।
Comments :0