Ssc

অযোগ্য প্রার্থীদের জন্য অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় হাইকোর্টকে জানালেন শিক্ষাসচিব

রাজ্য

অযোগ্য প্রার্থীদের জন্য অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্ত মন্ত্রীসভায় নেওয়া হয়েছিল। তার দপ্তরকে তা কার্যকরী করার নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুই। অবৈধ প্রার্থীদের জন্য শূন্যপদ সৃষ্টি সংক্রান্ত মামলায় শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টকে এমনটাই জানালেন শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন। 
আধিকারিকের এই বয়ান শুনে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এদিন বিস্ময় প্রকাশ করে মন্তব্য করেন, ‘‘অবৈধ অযোগ্য প্রার্থীদের পুনর্বহাল করার জন্য অতিরিক্ত শূন্যপদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত কীভাবে রাজ্য মন্ত্রীসভায় হতে পারে! এটা সংবিধান বিরোধী। এমন কোনও আইন বা বিধি স্কুল সার্ভিস কমিশনের নেই, যেখানে অবৈধ প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য অতিরিক্ত শূন্যপদ সৃষ্টির কথা বলা আছে।’’ 


শুক্রবার তিনি আরও বলেছেন, ‘‘গোটা দেশে যা হয়নি সে পথেই আমি যেতে পারি। দেশের মানুষ সেটা দেখতেও পারেন। এই অসাংবিধানিক কাজের জন্য তৃণমূল কংগ্রেস দলের অনুমোদন বাতিল করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে বলতে হতে পারে।’’ অযোগ্য প্রার্থীদের জন্য শূন্যপদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত রাজ্য মন্ত্রীসভার একথা এদিন আদালতকে জানিয়েছেন শিক্ষা সচিব মণীশ জৈন। শিক্ষা সচিবের সঙ্গে বিচারপতির কথোপকথনের সময় বিচারপতি আরও মন্তব্য করেন, ‘‘এরাজ্যের গণতন্ত্র সঠিক মানুষের হাতে নেই। সংবিধানের শপথ নিয়ে যে মন্ত্রীসভা গঠিত হয়েছে সেখানে এমন সিদ্ধান্ত হয় কী করে?’’ তিনি আরও বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস দলের অনুমোদন এবং দলের লোগো বাতিল করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করতে পারি।’
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশেই এদিন শিক্ষা সচিব মণীশ জৈন আদালতে হাজির হয়েছিলেন। বিচারপতি তাঁকে প্রশ্ন করেন, স্কুলে চাকরির ক্ষেত্রে অযোগ্য প্রার্থীদের পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত কীভাবে হয়েছে? শিক্ষা সচিব জানান, উপযুক্ত স্তর থেকেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষা সচিব শেষ পর্যন্ত জানিয়ে দেন, এব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুই তাঁকে জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত রাজ্য মন্ত্রিসভার। আদালত তখনই মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্তের ‘নোট’ দেখতে চান। শিক্ষা সচিব একটি নোট আদালতের কাছে জমা দেওয়ার পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, মন্ত্রিসভার ‘নোটে’ পাতার ক্রমিক সংখ্যা থাকে না। আদালতের এই কথার পরই অন্য আরেকটি ফাইল বিচারপতির হাতে তুলে দেন। 
বিচারপতি শিক্ষা সচিবকে বলেন, ‘‘অবৈধ প্রার্থীদের পুনর্বহালের জন্য শূন্যপদ সৃষ্টি করার কোনও আইন নেই আপনি জানতেন না?’’ শিক্ষা সচিব বলেন, ‘‘আমি ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম না। ব্রাত্য বসু এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা বলার সময় বলেছিলেন এব্যাপারে আইনি পরামর্শ গ্রহণ করতে। আমি অ্যাডভোকেট জেনারেল, আইন বিভাগ, আইনজীবী এবং এসএসসি’র সঙ্গে কথা বলেছি।’’ বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘আইনজীবীরা মন্ত্রীসভার এই সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছেন? আইনজীবী, আইন বিভাগের ওপর দায় চাপিয়ে দেবেন না।’’


এদিকে, এদিন এই শুনানি যখন চলছে তখন সরকারি আইনজীবী অনির্বাণ রায় এজলাসে ঢুকে বিচারপতিকে জানান, সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার ওপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিয়েছে। অযোগ্য প্রার্থীদের জন্য অতিরিক্ত শূন্যপদ সৃষ্টির মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ এবং ডিভিসন বেঞ্চের নির্দেশের বিরোধিতা করে বৃহস্পতিবারই রাজ্য সরকার এবং এসএসসি সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন দাখিল করেছিল। শুক্রবার সেই মামলার দ্রুত শুনানি গ্রহণ করে শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি হিমা কোহলির বেঞ্চ আপাতত স্থগিতাদেশ জারি করেছে। রাজ্য সরকারের পক্ষে শীর্ষ আদালতে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ এবং শিক্ষা সচিবকে আদালতে ডেকে পাঠানোর বিরোধিতা শীর্ষ আদালতের এই স্থগিতাদেশের আগেই শিক্ষা সচিব কলকাতা হাইকোর্টে হাজির হয়ে তাঁর বক্তব্য আদালতকে জানিয়ে দিয়েছেন। এদিন এব্যাপারে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, শিক্ষকদের জন্য শূন্যপদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত রাজ্য মন্ত্রীসভার। এব্যাপারে শিক্ষা সচিবকে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছিল। তাঁকে এনিয়ে আইনি পরামর্শ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু আদালতে যা ঘটেছে তা আইনি ব্যাপার সে নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে পারব না। উপযুক্ত স্তর থেকেই এনিয়ে যা বলার তা বলা হবে। 
এদিন আইনজীবী ফিরদৌস সামিম বলেন, অকল্পনীয় বিষয়। রাজ্য সরকার জনগণের টাকায় চলে। সেখানে অবৈধ চাকরির বৈধতা দেওয়ার জন্য গোটা মন্ত্রীসভা বেআইনি সিদ্ধান্ত কার্যকর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের মানুষের টাকায় শিক্ষকদের বেতন হবে। সেখানে যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করা হবে কেন? রাজ্যের মন্ত্রীরা যৌথভাবে অসাংবিধানিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কেন? যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হবে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিধি ছাড়াই অযোগ্যদের চাকরির বৈধতা দেওয়ার অর্থ দেশের আইনকে চ্যালেঞ্জ করা। 
শীর্ষ আদালতে এই মামলার নিষ্পত্তির ওপরই পরবর্তী শুনানি হবে হাইকোর্টে। এই মামলা পুনরায় ১৬ ডিসেম্বর শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই মামলা ওপর তাঁর নজর থাকবে। তিনি মামলাটিকে পর্যবেক্ষণে রাখবেন বলে এদিন মন্তব্য করেছেন।  
 

Comments :0

Login to leave a comment