State Coordination Committee

গণছুটি নিয়ে বিশাল জমায়েতে জবাব দিলেন সরকারি কর্মীরা

রাজ্য

 প্রাপ্য দাবি করায় নিজের সরকারের কর্মচারীদের ‘চোর ডাকাত’ বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এবার তাঁকে পালটা হুঁশিয়ারি দিলেন সরকারি কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় শহীদ মিনার ময়দানে দলে দলে গণছুটি নিয়ে বিরাট কর্মচারী জমায়েত করে তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, কর্মচারীদের চোর বলে গালি দিয়ে সরকারের চুরিকে ধামাচাপা দেওয়া যাবে না, কর্মচারীদের প্রাপ্য ডিএ’র দাবিকেও নস্যাৎ করা যাবে না। 
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের এই আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানাতে সমাবেশে এসেছিলেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচীও। সেলিম সভায় বলেছেন, ‘‘যে শিক্ষকরা মানুষ গড়ে তোলার কারিগর, যে কর্মচারীরা কাজ না করলে এই সরকার একদিনও চলতে পারবে না সেই কর্মচারী শিক্ষকদের মুখ্যমন্ত্রী চোর ডাকাত বলছেন! আসলে চুরি ডাকাতির জন্য সিবিআই ইডি যাদের ধরছে তারাই এখন অন্যদের চোর ডাকাত বলে দাগিয়ে দিতে চাইছে। তিনি বলেন, আপনারা নিজেদের অধিকারের দাবিতে লড়াই করছেন, আর সরকারি টাকায় ওখানে তামাশা (মুখ্যমন্ত্রীর ধরনা) চলছে। চোর ডাকাতরাই বুধবার এখানে এসেছিল আপনাদের ধমকাতে চমকাতে। আমরা আপনাদের প্রতি সংহতি জানাতে এসেছি, ওদের ধিক্কার জানাতে এসেছি।’’ 
শহীদ মিনার ময়দানে আদালতের নির্দেশ নিয়ে টানা অবস্থানে রয়েছে সরকারি কর্মচারীদের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। তৃণমূলের পক্ষে আগেরদিন পাশেই অভিষেক ব্যানার্জির সভা করা হয়েছে, মমতা ব্যানার্জি অদূরে ধরনা মঞ্চ বানিয়ে চোর ডাকাত বলে গালি দিয়েছেন। কিন্তু এতে সরকারি কর্মীদের মনোবল তো ভাঙেইনি, উলটে আগুনে যেন ঘি পড়েছে। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের থেকেও বড় সমাবেশের চেহারা নিল কর্মচারীদের সমাবেশ। শিয়ালদহ এবং হাওড়া থেকে মিছিল করে দলে দলে সরকারি কর্মচারীরা এসেছেন, মধ্য কলকাতার রাস্তা অবরুদ্ধ করে দিয়েছেন, ‘চোর চোর’ স্লোগানে শহীদ মিনার ময়দানকে উত্তাল করে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতারা আগামী দিনে আরও বড় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্যে। দুপুর একটার আগে থেকেই কাতারে কাতারে কর্মচারীরা ঢুকতে শুরু করেন শহীদ মিনার ময়দানে। বেলা দেড়টার মধ্যেই শহীদ মিনার ময়দান কানায় কানায় ছাপিয়ে যায়। অনেকে মাঠের ভিতরে ঢুকতে পারেননি, বহু মানুষ পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে সমাবেশে নেতৃত্বের ভাষণ শুনেছেন।
সমাবেশে কর্মচারীদের লড়াইকে অভিনন্দন জানিয়ে সেলিম বলেছেন, ‘‘স্বাধীনতার আগে থেকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অনেক আন্দোলনের সাক্ষী এই শহীদ মিনার ময়দান। যাদের সিবিআই ইডি চুরির জন্য ডাকছে তারা এখানে সভা করেছে কাল, এখান থেকে ফিরে যাওয়ার পথে বাসগুলিকে লক্ষ্য করে কলকাতার মানুষ চোর চোর বলে চিৎকার করেছে। আজকে সেই শহীদ মিনার ময়দান আপনাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তার মর্যাদা ফিরে পেতে চাইছে।’’ 
বিপাকে পড়ে তৃণমূল যেভাবে সিপিআই(এম)’র চুরি ধরতে এবং সরকারি কর্মীদের চোর বলতে শুরু করেছে সেটাকে মুখ্যমন্ত্রীর আতঙ্কের প্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘আলিবাবা ও চল্লিশ চোর’এ মর্জিনা সবার ঘরে দাগ লাগিয়ে দিয়েছিল যাতে আসল মাল কোথায় আছে সেটা কেউ বুঝতে না পারে। আর চিটফান্ড কেলেঙ্কারির পরে মমতা ব্যানার্জি মিছিল করেছিলেন আমরা সবাই চোর বলে। এখন উনি নিজেকে বাঁচাতে নিজের সরকারের কর্মচারী যারা না কাজ করলে সরকার একদিনও চলবে না, তাঁদেরকেও চোর ডাকাত বলছেন। কালীঘাটে পিসি ভাইপো নিজেদের ঘরের আগুন থেকে বাঁচতে বাংলার ঘরে ঘরে আগুন লাগাতে চেষ্টা করছেন। 
আন্দোলন দমনে প্রধানমন্ত্রী আর মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে মিল উল্লেখ করে তিনি বলেছেন,  আন্দোলন সংগ্রাম ঠেকাতে মরিয়া প্রধানমন্ত্রীও, আন্দোলন সংগ্রাম ঠেকাতে তিনি ফতোয়া দিচ্ছেন। আর মুখ্যমন্ত্রীও চাকরি ছেদের হুমকি দিয়েছেন। তা উড়িয়ে কর্মচারী শিক্ষকরা ধর্মঘট করেছেন। একদশক ধরে বাংলার মানুষ দমবন্ধ অবস্থায় ছিলেন, এখন সেই ভয় কেটে গেছে। তাই যারা ভয় দেখিয়েছিল এখন তারাই ভয় পাচ্ছে। আমরা কাউকে ভয় দেখাতে আসিনি, নিজেদের হক দাবি করতে এসেছি। 
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানিয়ে সেলিম বলেছেন, মাদ্রাসায় স্কুলে দু’জায়গাতেই চুরি হয়েছে। মাদ্রাসা-স্কুল, হিন্দু-মুসলমান আলাদা করা যায় না, চুরির বিরুদ্ধেও লড়াইকেও আলাদা করা যাবে না, একসঙ্গে লড়তে হবে। এটাই যৌথ আন্দোলনের শক্তি। চোর দিল্লিতেই হোক, বাংলাতেই হোক, ছাপান্ন হোক, নবান্নই হোক, মানুষ একসঙ্গে হলে টেনে রাস্তায় নামাবে। আপনাদের আন্দোলন, মানুষের লড়াকু মেজাজ দেখে মুখ্যমন্ত্রীও নবান্ন থেকে গড়ের মাঠে নেমে ধরনা প্র্যাকটিস করছেন। আপনারাই ওঁকে পথে নামিয়েছেন, এরপরে আর শুধু ধরনার তামাশায় উনি রেহাই পাবেন না। 
কর্মচারী সমাবেশে সুজন চক্রবর্তী বলেন, বামফ্রন্টের সময় এরাজ্যের শিক্ষক, সরকারি কর্মচারীদের সম্মান ছিল। জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা সরকারি কর্মচারীদের ‘প্রিয় সহকর্মী’ বলে সম্বোধন করতেন। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী চোর ডাকাত বলছেন! কোন অপসংস্কৃতির জালে আজ পশ্চিমবাংলা? বিকাশ ভট্টাচার্য সরকারি কর্মচারীদের নাছোড়বান্দা লড়াইকে কুর্ণিশ জানিয়ে বলেছেন, আপনারা কোনো দয়ার দান চাইতে আন্দোলন করছেন না। নিজেদের প্রাপ্য বুঝে নিতে লড়াই করছেন। যারা চুরি করছে তাদের হামলা, মামলা, আক্রমণের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। 
সভায় সভাপতিত্ব করেন আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বিপুল রায়, সভার কাজ পরিচালনা করেন নির্ঝর কুণ্ডু। এছাড়া সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ভাস্কর ঘোষ।

 

Comments :0

Login to leave a comment