Rally Workers Farmers

বিশ্বাসঘাতক বিজেপিকে কেন্দ্র থেকে হটাতে চলবে লড়াই, আহ্বান সমাবেশে

রাজ্য কলকাতা

ধর্মতলায় সমাবেশের ছবি দিলীপ সেনের।

সৌরভ গোস্বামী, প্রতীম দে, অনিন্দ্য হাজরা
 

দেশের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে দেশের সরকার। দেশজুড়ে প্রতিবাদে শামিল হয়েছে শ্রমজীবীরা। তাঁদের দাবি জানাতে কলকাতায় রাজভবনে গেলেন শ্রমিক-কৃষক নেতৃবৃন্দ। 
কেন্দ্রের সরকার থেকে বিজেপি’কে হটানোর ডাক দিয়েছেন শ্রমিক এবং কৃষক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। বক্তব্য রেখেছেন সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন, দেশের কৃষক আন্দোলনের নেতা এবং সারা ভারত কৃষকসভার সহ সভাপতি হান্নান মোল্লা সহ নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার রাজভবন অভিযান হয়েছে কলকাতার ধর্মতলায়, রানি রাসমণি রোডে। সব কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে রবিবার থেকে চলেছে অবস্থান। সিআইটিইউ, পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষকসভার মতো একগুচ্ছ সংগঠন রাজ্যজুড়ে চালিয়েছে প্রচার। 
রাজ্যপালের হাত দিয়ে দাবিপত্র পাঠানো হচ্ছে প্রধামন্ত্রীর কাছে। গত আগস্টে দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে জাতীয় স্তরের কনভেনশন থেকে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়। কৃষকের ফসলের ন্যূনতম দাম নিশ্চিত করতে আইনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। বিদ্যুৎ আইনে সংশোধন না করার কথা বলেছিল। তা হয়নি। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি, ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার বিপর্যস্ত। বারো ঘন্টা কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। শ্রম কোড চালু না হলেও বাস্তবে তারই প্রয়োগ করছে কর্পোরেট। তার বিরুদ্ধেই দাবি জানাচ্ছেন শ্রমজীবীরা।
কৃষক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ জানাচ্ছেন, এদিন রাজভবনে রাজ্যপাল ছিলেন না। তাঁর ওএসডি পদমর্যাদার আধিকারিকদের হাতে দাবি পত্র তুলে দেওয়া হয়। দীর্ঘক্ষণ তাঁর সঙ্গে কথা বলেন শ্রমিক এবং কৃষক নেতৃবৃন্দ। রাজ্যপালের ওএসডি জানিয়েছেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিক-কৃষকদের দাবি রাজ্যপালের সামনে তুলে ধরবেন। আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের তরফে তাঁকে বলা হয়, এই দাবিগুলি দিল্লিতে পাঠাতে। রাজ্যস্তরে দাবি পূরণ না হলে ফের দেশব্যপী আন্দোলনে নামবেন শ্রমিক এবং কৃষকরা। 
ছয় সদস্যের এই প্রতিনিধিদলে ছিলেন নিরাপদ সরদার, আসাদুল্লা গায়েন, অশোক গুহ, দীপক দাস, বাসুদেব বসু এবং প্রবীর ব্যানার্জি। 
মেহনতি মানুষের প্রতিনিধি দল যখন রাজভবনে দাবিপত্র তুলে দিতে গিয়েছেন, তখন রানী রাসমণি অ্যাভিনিউ’তে জনতার ঢল। সেই জমায়েতের সামনে বক্তব্য রাখেন তপন সেন, হান্নান মোল্লার মত সর্বভারতীয় শ্রমিক এবং কৃষক নেতৃত্ব। 
হান্নান মোল্লা বলেন, দিল্লির ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের সাফল্যকে রাজ্যে রাজ্যে ছড়িয়ে দিতে রাজ্য ভিত্তিক সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা গঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার ২২টি রাজ্যে একযোগে রাজভবন অভিযান চলছে। গ্রাম, ব্লক, মহকুমা স্তরে মানুষের দাবিতে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলব। 
হান্নান মোল্লা রাজভবন অভিযানের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে বলেন, আরএসএস নিজেদের দালালদের রাজ্যপাল করে রাজ্যে রাজ্যে পাঠিয়েছে। এই রাজ্যপালরা যতটা না দিল্লির কথা শুনে চলছে, তার থেকেও বেশি তাঁরা নাগপুরের নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছেন। এবং জনবিরোধী নীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে ভূমিকা নিচ্ছেন। এঁদের আমরা হুঁশিয়ারি দিতে চাই। তাঁরা নিজেদের না শুধরালে, কৃষকরা রাজভবনগুলিকে দালালমুক্ত করবেন। 
তপন সেন বলেন, ৩৭ শতাংশ মানুষ মাসে ৬০০০ টাকাও রোজগার করেননা। উল্টোদিকে ১ শতাংশ মানুষের দখলে সম্পদের ২৫ শতাংশ। অথচ এরা জিএসটি দেয় মাত্র ৩ শতাংশ। আর গরিব মানুষ দেয় ৬৫ শতাংশ। গরিবের উপর, সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা চাপছে। সবটাই লুটের অর্থনীতি, বিদেশি পুঁজির সুবিধা করে দিতে। দেশের ভবিষ্যত বিপন্ন। জীবনের অভিজ্ঞতায় মানুষ বুঝছেন। তাই লড়াইয়ে সামিল হচ্ছেন।
সেন বলেন, এই অন্যায় উপড়ে ফেলতে গেলে বিজেপিকে হারাতে হবে। আদানিদের আগ্রাসন আটকাতে সর্বাত্মক প্রতিরোধে যেতে হবে। বিদ্যুৎ, বন্দর, বিমানবন্দরের পরিকাঠামো স্তব্ধ করে দিতে হবে। বেসরকারিকরণ করতে এলে, তাঁদের বলতে হবে, ‘ক্ষমতা থাকলে করে দেখা’। 
তপন সেন বলেছেন, এর জন্য প্রয়োজন জনতার ঐক্য। সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে হারাতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার লুটের অর্থনীতি বজায় রাখতে মানুষের মধ্যে বিভেদ বজায় রাখতে চাইছে। সেই বিভেদের রাজনীতিকে দেশের স্বার্থে পরাস্ত করতে হবে। 
এছাড়াও এদিন বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষকসভার সম্পাদক অমল হালদার, খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি তুষার ঘোষ, সিআইটিইউ রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু, সিআইটিইউ নেত্রী রত্না ভট্টাচার্য প্রমুখ। 
সভা পরিচালনার জন্য সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা  এবং কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্বকে নিয়ে ১২ জনের সভাপতিমন্ডলী গঠিত হয়। সভাপতি মন্ডলীতে ছিলেন বিপ্লব মজুমদার, সুভাষ মুখার্জি প্রমুখ।

Comments :0

Login to leave a comment