Sunday Story

টমটম ও টুকটুক-এর আড্ডা

ছোটদের বিভাগ

Sunday Story


সুচিত চক্রবর্তী

টমটম ও টুকটুক পাশাপাশি বাড়িতে থাকে। দুজনে বেশ বন্ধু। ওরা কলকাতার একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলে বরাবর টমটম ফার্স্ট হয়, আর টুকটুক সেকেণ্ড হয়। প্রতিদিন বিকেলে টুকটুক টমটমদের ছাদে চলে আসে। দুজনে জেনারেল নলেজ, খেলাধুলো এইসব নানা জিনিস নিয়ে চর্চা করে। কেউ কারোর কাছে ছোটো হতে চায় না। মাঝে মাঝে দুজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক বেঁধে যায়।
দুজন দুজনকে মজার মজার প্রশ্ন করে। এইভাবে প্রশ্ন, উত্তর করে করে বিকেলটা কেটে যায়। সেদিন বিকেলে টমটম ও টুকটুক দুজনে টমটমদের ছাদে এসে রেলিং-এর সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

টমটম এবার টুকটুককে বলল, আচ্ছা বল দেখি বিদ্যাসাগর মহাশয় কত বছর বয়সে সংস্কৃত কলেজে ভরতি হয়েছিলেন ?
টুকটুক খানিকক্ষণ মাথায় হাত রেখে চিন্তা করে। টমটম এবার হেসে বলল, এই সামান্য প্রশ্নের উত্তর দিতে তোর এত সময় লাগছে ? 
টুকটুক এবার হালকা হেসে বলল, আরে বলছি বলছি, নয় বছর বয়সে। 
— আচ্ছা বল দেখি বিদ্যাসাগর মহাশয় কার পাঠশালায় পড়েছেন ?
— এটা একটা প্রশ্ন হল নাকি ? বলছি, বলছি। পেটে আসছে মুখে আসছে না। টুকটুক বলল। 
— এত বড়ো ভুঁড়ি পেটে এত গ্যাস তাই হয়তো গ্যাস উত্তরটাকে চেপে ধরে আছে। যাক পারবি? 

— না। টুকটুক বলল। 
টমটম বলল, উত্তরটা শোন
— পাঁচ বছর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের পাঠশালায় ভরতি করে দেওয়া হয়। আমার শেষ প্রশ্ন হল, ঈশ্বরচন্দ্র কোথা থেকে বিদ্যাসাগর উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন ?

— সংস্কৃত কলেজ থেকে।
স্কুলের বন্ধু পল্টু দূরে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন, উত্তরের পর্ব শুনছিল। পল্টু এবার হালকা হাসি হেসে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, তোরা কী সুন্দর জেনারেল নলেজ নিয়ে চর্চা করে বিকেলটা কাটাস। 
জানিস আমার খুব ইচ্ছে করে বিকেলটা তোদের সাথে কাটাই।
টমটম ও টুকটুক হাসে।
পল্টু বলল, কীরে তোরা আমার কথা শুনে হাসছিস কেন ?
টমটম বলল, শোন, হাসার মতো কথা বলে হাসছি।
টুকটুক এবার পল্টুর কাঁধে হাত রেখে বলল, তুই আমাদের বড়ো শ্রোতা। পল্টু হাসে। টুকটুক এবার টমটমকে বলল, এবার আমি প্রশ্ন করবো আর তুই উত্তর দিবি।

আমি রেডি। টমটম বলল।
— বল দেখি রাজা রামমোহন রায়ের কবে জন্ম ?
— বাইশে মে সতেরশো বাহাত্তর খ্রিষ্টাব্দে, কারোর মতে সতেরশো চুয়াত্তর খ্রিস্টাব্দে। 
টুকটুক মনে মনে ভাবে কীভাবে টমটমকে কাত করা যায়।
যদিও টমটম নানা বই পড়ে। ওর কাছে জটিল প্রশ্নও সহজ হয়ে যায়। টমটম এবার টুকটুককে বলল, কী রে দ্বিতীয় প্রশ্নটা বল ?
— বল দেখি, রাজা রামমোহন রায় প্রথম জীবনে কোন কোন ভাষা শিখেছিলেন ?
এসব প্রশ্ন জলভাত । রাজা রামমোহন প্রথম জীবনে সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শিখেছিলেন। টুকটুক এবার বাঁ হাত দিয়ে মাথা চুলকে, ডান হাত কপালে ঠুকে বলল, আচ্ছা বল দেখি সংস্কৃত শেখার জন্যে রাজা রামমোহনকে কোথায় পাঠান হয়েছিল ?
হেসে টমটম বলল, 
— কাশীতে। 

শোন, দুঃখ করিস না, খেলায় হারজিত আছে।
পল্টু ওদের প্রশ্ন, উত্তর পর্ব শুনল। পল্টু বলল, আরে আমাকে তোদের দলে নিবি ? টমটম এবার পল্টুকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, দূর বোকা, তুইতো আমাদের দলেই আছিস। 
তুই ভাবছিস তুই যদি আমাদের আড্ডায় এভাবে থাকতিস তবে ভালো লাগত। টুকটুক বলল, শোন, সবাই সব প্রতিভা নিয়ে জন্মায় না। তুই ফুটবল ভালো খেলিস ওটাকে মন দিয়ে খেল।
ভবিষ্যতে ভালো ফুটবল প্লেয়ার হবার স্বপ্ন দ্যাখ। আমাদের দ্বারা খেলাধুলো হবে না। তাই আমরা জেনারেল নলেজ নিয়ে পড়ে আছি।
 

Comments :0

Login to leave a comment