দীপশুভ্র সান্যাল, জলপাইগুড়ি
গরমে পুড়ছে ডুয়ার্স, পানীয় জলের খোঁজে কখনও ব্যারাজে কখনও আবাসনের ছাদে থাকা জলের ট্যাঙ্কের দিকে বন্যপ্রাণ। অসুস্থ হয়ে পড়ছে পাখীরা।
তীব্র দাবদাহে একদিকে যখন পুড়ছে গোটা বাংলা, ঠিক সেসময় শুকিয়ে যাচ্ছে ডুয়ার্সের একাধিক জঙ্গলের ভেতরে থাকা জলাশয় এবং ঝোরা। যার অন্যতম একটি কারণ গরুমারা জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন এলাকায় অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলা রিসর্টের রাজ।
পরিবেশ কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, প্রতিটি রিসর্ট অবৈধ ভাবে ভূগর্ভস্থ জল তুলে নিচ্ছে। গভীর জঙ্গলের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে। জলস্তর নেমে যাচ্ছে। আর এই কারণেই কার্যত তৃষ্ণা মেটাতে গভীর জঙ্গল ছেড়ে জলের খোঁজে লোকালয়ে পাড়ি দিচ্ছে বন্যপ্রাণ।
দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় ডুয়ার্সে গরম কিছুটা কম হলেও প্রখর রোদ এবং দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি হচ্ছে না। ভুগর্ভস্ত জল তুলে নিচ্ছে রিসর্ট। ঝোড়া ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্রের ওপর। ডুয়ার্সের জঙ্গলগুলিতে রয়েছে হাতি, লেপার্ড, হরিণ, বুনো শুকর, বাইসন। আবার রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। শুকিয়ে যাওয়া জলাশয় এবং নালা গুলোই ছিলো বন্যপ্রাণীদের নিয়মিত জলপানের উৎস।
ঝোরাগুলিতে জল না থাকায় বুনো হাতির পাল জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে তিস্তা ব্যারাজে নেমে আসছে।
তা হলে এর সমাধান কী? এই গরম থেকে বাঁচতে মানুষকে যেমন নিজের শারীরিক বিষয়ে সচেতন থাকতে হচ্ছে, তেমনই পশু পাখিদের বিষয়ে ভাবাটাও কর্তব্য বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। পাখিদের জন্যে বাড়ির ছাদে কিংবা উঠোনে, মাঠে-ঘাটে জলের ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন জলপাইগুড়ির পশু চিকিৎসক ডা. রাজেশ্বর সিনহা। যাতে পাখিরা উড়ে এসে জল পান করতে পারে, স্নান করতে পারে।
অপরদিকে গরুমারা ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশনের ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেনের বক্তব্য, দক্ষিণবঙ্গের মতো সেরকম গরম এদিকে পড়েনি জল কষ্ট দেখা দেয়নি। বেশ কিছু জলাশয় নতুন করে সংস্কার করার পরিকল্পনা চলছে। প্রতি মুহূর্তেই পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।’’
বনাধিকারী এমন দাবি করলেও বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলছে।
শুধু বনের নয় জলকষ্টে ভুগে গ্রাম শহরের পশুপাখিদেরও দেখা যাচ্ছে ড্রেনের নোংরা জল পান করতে। জলপাইগুড়ি শহরে প্রায়শই চোখে পড়ছে গরু কুকুর সহ রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো প্রাণীদের নর্দমা থেকে জলপান করতে।
Comments :0