Suvendu Adhikari TMC

অবৈধ নিয়োগে হাত শুভেন্দুর, মুখে কুলুপ শাসক দলের

রাজ্য

দুই জেলাতেই সর্বময় রাজনৈতিক কর্তৃত্বে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। অবৈধ গ্রুপ ডি নিয়োগের ৪০ শতাংশ হয়েছে দুই মেদিনীপুর জেলায় ! সব জানার পরেও মুখ খুলতে পারছেন না তৃণমূল নেতারা। 
আদালতের নির্দেশে স্কুলে গ্রুপ ডি নিয়োগের তালিকা প্রকাশ্যে এসেছে। ১৬৯৮জনের সেই তালিকায় শীর্ষে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। রাজ্যের ২২টি জেলার মধ্যে ৩৬০জন গ্রুপ ডি নিয়োগ হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকেই। তার পিছনেই আছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। আলালতে পেশ হওয়া ক্রমতালিকায় ৮৬৫নম্বর থেকে ১১৬২নম্বর পর্যন্ত তালিকা জুড়ে আছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় অবৈধ নিয়োগের তালিকায় আছে ২৯৮জন। এই দুই জেলা মিলিয়ে ৬৫৮জন গত ২০১৬ সালের শিক্ষাকর্মী (গ্রুপ ডি) নিয়োগের পরীক্ষায় অবৈধ পথে স্কুলে চাকরি করছে। ১৬৯৮জন গ্রুপ ডি অবৈধ নিয়োগের ৪০শতাংশই এসেছে এই দুই জেলা থেকে।
কেন এই দুই জেলা থেকেই সর্বোচ্চ ভুয়ো নিয়োগ তা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছে না সরকার বা শাসকদলের কেউই। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতার তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য,‘‘যে সময়ে এই নিয়োগ হয়েছে তখন এই দুই জেলার রাজনৈতিকভাবে দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর পক্ষেই এখন বলা সম্ভব কীভাবে এই নিয়োগ হয়েছে।’’ আসলে যে সময় এরাজ্যে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি পদে নিয়োগ হয়েছে তখন তৃণমূল কংগ্রেসেই ছিলেন বর্তমান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় একচ্ছত্র ক্ষমতা ছিল অধিকারী পরিবারের। সেই পূর্ব মেদিনীপুরেই রাজ্যের মধ্যে গ্রুপ ডি’র অবৈধ তালিকায় সর্বোচ্চ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এক শীর্ষ তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘রাজ্য মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের পাশপাশি একসময় শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের সাত জেলার দলীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। খোঁজ নিয়ে দেখে নিন, ওই জেলাগুলিতে টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রির প্রভাব কতটা।’’ 
কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতির চক্রে রাজ্যের শাসকদল এতটাই জড়িয়ে আছে যে এখন দল ছেড়ে বিজেপি-তে চলে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে একটি কথাও প্রকাশ্যে বলার সাহস দেখাতে পারছে না। পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর- দুই জেলা মিলিয়ে অবৈধ গ্রুপ ডি নিয়োগের তালিকায় ৬৫৮ জন আছে জানার পরেও তৃণমূল নেতারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কীভাবে এই নিয়োগ হলো, প্রশ্ন শুনে তাঁরা বলছেন, ‘‘ আর এই নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’’ 
পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুর এই দুই জেলার পর অবৈধ নিয়োগের তালিকায় আছে কোচবিহার। ১০৯জনের নাম আছে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলায়। বর্ধমান জেলায় একযোগে অবৈধ নিয়োগ হয়েছে ১২৩জনের। বাঁকুড়া জেলায় ১০০ জন আছে জাল নিয়োগের তালিকায়। মালদহ জেলাতে ৭৮জন, মুর্শিদাবাদে ৬৩জন আছে অবৈধ গ্রুপ ডি নিয়োগের তালিকায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় অবৈধ নিয়োগ তালিকায় আছে ৮৮জন। আদালতে মুখ পুড়িয়ে জেলার তৃণমূল নেতারা কোনোভাবেই বর্তমান বিরোধী দলনেতাকে নিশানা করার জায়গায় নেই। কারণ, শুভেন্দু অধিকারী সাত জেলার দায়িত্ব নিয়ে যে কাজ করেছেন, বাকি জেলাতেও তো একই কাজ তাদের হাত দিয়ে হয়েছে। তাই নিজেদের দুর্নীতিকে আড়াল করতে গিয়ে তৃণমূলে থাকা শুভেন্দু অধিকারীর দুর্নীতি নিয়েও চুপ থাকতে হচ্ছে রাজ্যের শাসকদলকেও। 
রাজ্যের এমন কোনও জেলা নেই যেখানে গ্রুপ ডি নিয়োগের পরীক্ষায় জালিয়াতি করা হয়নি। ওএমআর শিট থেকে শুরু করে পরীক্ষায় শূন্য পাওয়া খাতা জমা দিয়েও স্কুলে গ্রুপ ডি পদে চাকরি করে যাচ্ছেন। শিলিগুড়ি মহকুমাতে ৬জন, উত্তর দিনাজপুরে ৪৯ জন, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া ও হুগলীতে ৬৩জনের অবৈধ গ্রুপ ডি নিয়োগের তালিকা প্রকাশ্যে এসেছে। হাওড়াতে ৫৩জন, কলকাতায় ২০জন ও  উত্তর ২৪পরগনা জেলাতে ৭৯জনের আপাতত ঠাঁই হয়েছে অবৈধ তালিকায়।
আদালতে নির্দেশ পাওয়ার পর রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কমিশনার সব জেলার ডিআই (মাধ্যমিক)-দের কাছে অবৈধ নিয়োগের তালিকা দিয়ে তিনদিনের মধ্যে তাদের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশিকা মেনে মঙ্গলবার থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ডিআই’রা অবৈধ তালিকায় নাম থাকা ১৬৯৮জন গ্রুপ ডি’দের কাছে কোর্টের নির্দেশ পাঠাতে শুরু করেছেন। দক্ষিণবঙ্গের এক জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক জানিয়েছেন, ‘‘ জেলা থেকে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে তালিকা পাঠিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কোর্টের রায় সহ যে গ্রুপ ডি’র নাম অবৈধ তালিকায় আছে প্রধান শিক্ষক তাঁর কাছে পৌঁছে দেবেন।’’ 
অবৈধ তালিকায় ১৬৯৮জনের নাম থাকা নিয়ে বিদ্যালয় পরিদর্শকরা কেউই বিস্মিত নন। তাঁরা অনেকেই বলেছেন,‘‘ গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াটাই অবৈধ পথে হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ করা হয়েছে। ২০২০ সালে লকডাউনের সময় নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। ১৫দিনের মধ্যে নিয়োগ শর্ত পর্যন্ত মানা হয়নি।’’ 
গত ২২ ডিসেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে সিবিআই ও মাধ্যমিক বোর্ডের তরফে ১৬৯৮জনের অবৈধ নিয়োগের তালিকা জমা পড়েছিল। প্রকাশ্যে এসেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার নামে প্রহসনে গ্রুপ ডি নিয়োগ কেলেঙ্কারি।
 

Comments :0

Login to leave a comment