Donald Trump

আরও এক অতি দক্ষিণপন্থীর জয়

সম্পাদকীয় বিভাগ

শেষ পর্যন্ত ভোটে জিতে আমেরিকার ৪৭তম রাষ্ট্রপতি হলেন রক্ষণশীল রিপাবলিকান দলের অতি দক্ষিণপন্থী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথমদিকে সমানে সমানে টক্কর দিলেও শেষ পর্যন্ত ধরাশায়ী হলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী তথাকথিত লিবারাল কমলা হ্যারিস। রাষ্ট্রপতি হিসাবে ট্রাম্প শুধু পপুলার ভোট ও ইলেক্ট্রোরাল কলেজ— উভয় ক্ষেত্রেই এগিয়ে থাকেননি, সেনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টিটিভ অর্থাৎ সংসদের উভয় ক্ষেত্রেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন। ফলে আগামী চার বছর সরকার চালাতে বা নিজের খুশি মতো নীতি গ্রহণ করতে কোনও বাধা থাকবে না। বিশ্বের প্রায় সব দেশের রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর প্রবণতা, তখন আমেরিকা তাদের রাষ্ট্রপতি হিসাবে বেছে নিয়েছে ৭৮ বছরের এক নেতাকে। শুধু বয়সের দিক থেকেই নয় নানা ক্ষেত্রে তাঁর অনন্য নজির আছে। তিনি আমেরিকার প্রথম যিনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে একবার হেরে যাবার পরও দ্বিতীয়বার জয়ী হয়েছেন। তাছাড়া তিনিই সম্ভবত একমাত্র রাষ্ট্রপতি যার বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ ডলারের দুর্নীতি, হিংসায় মদত দেওয়া এবং যৌন অপরাধ সহ ২৬টি গুরুতর মামলা চলছে বিভিন্ন আদালতে। তাঁকে গ্রেপ্তারও হতে হয়েছে। এমন এক নেতাকে আমেরিকার অধিকাংশ মানুষ যেমন পছন্দ করেছেন তেমনি কোনও মহিলা আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হোক সেটাও চাননি।
কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন নিয়ে অন্যান্য দেশের মাথা ঘামানোর কথা নয়। কিন্তু দেশটা যেহেতু আমেরিকা তাই মাথা না ঘামিয়ে উপায় নেই। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির প্রতিটি পদক্ষেপের ধাক্কা যেমন বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিবার্য প্রভাব ফেলে তেমনি সামরিক-স্ট্র্যাটেজিক ক্ষেত্রে তাদের নীতি পরিবর্তন ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। ইতিমধ্যে ক্ষমতায় এলে যা যা করবেন বলে ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন সেগুলি যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে বিশ্বজুড়ে নতুন বিতর্ক, নতুন অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। যেমন, ট্রাম্প বিশ্বাস করেন না বিশ্ব উষ্ণায়ন ও তজ্জনিত পরিবেশের ভারসাম্যের পরিবর্তনে বৈজ্ঞানিক সত্যতায়। তাই দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমেরিকা কোনো দায় নেবে না। ট্রাম্প মনে করেন আমেরিকার অর্থনীতির দুর্দশা, বেকারী, মূল্যবৃদ্ধি, মানুষের রোজগার না বাড়া ইত্যাদি সব সমস্যার প্রধান কারণ ভিনদেশ থেকে আমেরিকার অভিবাসন। তাই বিদেশ থেকে আসা মানুষের সংখ্যা যেমন তিনি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন তেমনি আমেরিকায় বসবাসকারী প্রায় এক কোটি অবৈধ অভিবাসীদের তাড়িয়ে দেবেন। তিনি এটাও মনে করেন উদার বাণিজ্যের জন্যই আমেরিকা পণ্য উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ছে। মার্কিন শিল্প প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে কর্মসংস্থান ও মজুরি বৃদ্ধি করতে পারছে না। তাই মার্কিন বাজারে বিদেশি পণ্য আমদানি আটকাতে আমদানি শুল্ক ২০ থেকে ১০০ শতাংশ বাড়িয়ে দেবেন। তেমনি বাইরের যুদ্ধ সংঘাতে মার্কিন অস্ত্র ও অর্থ ব্যয় কমাবেন। বিনিময় অস্ত্র রপ্তানিতে জোর দেবেন। আর দেশের মধ্যে কর্পোরেশন কর যথাসম্ভব কমিয়ে কর্পোরেট মুনাফা সর্বোচ্চ করার ব্যবস্থা করবে।
যদি সত্যি সত্যি তিনি প্রতিশ্রুতি মতো পদক্ষেপ শুরু করেন তাহলে আমেরিকার অভ্যন্তরে যেমন বিতর্ক ও নৈরাজ্যের ঝড় উঠবে তেমনি বিশ্ব অর্থনীতি‍‌ ও বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাতেই প্রবল অস্থিরতা দেখা দেবে। শেষ পর্যন্ত তার পরিণতি কোন দিকে গড়াবে, কারা তার সুযোগ নেবে এবং কারা তার শিকার হবে তা বোঝা যাবে কিছুদিন পর থেকেই।
 

Comments :0

Login to leave a comment