West Bengal poll violence

হিংসা অব্যাহত, প্রাণ গেল আরও দু’জনের

রাজ্য

West Bengal poll violence

নির্বাচনের ২৪ ঘণ্টা আগেও রাজ্যে হিংসা অশান্তি অব্যাহত। বৃহস্পতিবার সেই হিংসার শিকার হলেন আরও দুজন। সব মিলিয়ে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন ১৮ জনের মৃত্যুর খবর মিললো। এরই সঙ্গে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বাম, কংগ্রেস, আইএসএফ প্রার্থীদের ওপর তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হুমকি, হামলা চলেছে এদিনও। তৃণমূলের বাইক বাহিনী টহল দিয়েছে গ্রামে গ্রামে। হামলা হুমকির মোকাবিলায় বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন গ্রামবাসীরা।    
তৃণমূলের আক্রমণে নিহত হয়েছেন কুলপিতে কংগ্রেস নেতা আলফাজউদ্দিন হালদার (৪৫)। বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতার একবালপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে দক্ষিণ গাজিপুর গ্রামে নির্দল প্রার্থীর সমর্থনে নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আক্রমণ করে কংগ্রেসের বুথ সভাপতি আলফাজউদ্দিন হালদারকে। বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁকে। একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। আক্রমণকারী দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সরব হয়েছেন গাজিপুরের বাসিন্দারা। 


অন্যদিকে বীরভূমের মহম্মদ বাজারে হিংলো গ্রাম পঞ্চায়েতের চন্দ্রপুর-সারেন্ডা রাস্তায় কুলুপুকুর পাড় থেকে বৃহস্পতিবার ভোরে উদ্ধার হয়েছে দিলীপ মাহারা (৪৮)-র দেহ। শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে অনুমান। দেহের পাশে মিলেছে বুলেটের খোল। নিহত ব্যক্তি দলের বুথ সহ সভাপতি ছিলেন বলে দাবি বিজেপি’র। 
তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা করতে ছাড়ল না অধ্যাপকের বাড়িতেও। এদিন সন্ধ্যায় পলতা পিএন দাস কলেজের অধ্যাপক সুমনরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিতে তাঁর বাড়িতে হামলা করে একদল দুষ্কৃতী। বাড়িতে সেই সময় ছিলেন অধ্যাপকের মা, বাবা, স্ত্রী ও সন্তান। এই অতর্কিত হামলায় সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
বুধবার রাতে তৃণমূল আশ্রিত বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়িয়েছে উত্তরবঙ্গের  ধূপগুড়ি ব্লকের মাগুরমারি দুই নং গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫/১৩২ নং বুথের পূর্ব আলতা গ্রামের ডাঙাপাড়া এলাকায়। সিপিআই(এম) প্রার্থী মহম্মদ আলিমুদ্দিনের বাড়ি সহ দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে তাণ্ডব চালায় দুষ্কৃতীরা, ছিঁড়ে দেয় ফ্ল্যাগ-ফেস্টুন, ভাঙচুর করে আসবাবপত্র। সে সময়ে নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশকে ফোন করেও মেলেনি কোনও সহযোগিতা। 


মাল মহকুমায় তৃণমূল দুষ্কৃতীদের আক্রমণে আহত হয়েছেন তিন সিপিআই(এম) কর্মী। মঙ্গলবার রাতে এই ঘটনা ঘটে রাজাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের জুম্মাটারির কাছে। সিপিআই(এম) সমর্থক ওয়াহেদ আলি বুধবার ক্রান্তি পুলিশ ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগে জানিয়ে বলেছেন, মঙ্গলবার রাতে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময়ে কয়েকজন তৃণমূল দুষ্কৃতী তাঁদের উপর আক্রমণ করে। এই আক্রমণে খুরশিদ, আলতাফ ও খতিবুল আহত হয়েছেন। আহতদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। তৃণমূল নেতা আব্দুল মোতালেব, আব্দুল লতিফ ওয়ারেসুল সহ দশ জনের নামে অভিযোগ করা হয়েছে। দ্রুত এই ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি করেছেন সিপিআই(এম) নেতৃত্ব।
রাজারহাট চাঁদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বকডোবা গ্রামে বুধবার রাতে বাড়িতে আক্রান্ত হয়েছেন সিপিআই(এম) জোট সঙ্গী আইএসএফ প্রার্থী রেজিনা বিবি। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর থেকে তিনি বাড়ি ছাড়া ছিলেন, তাঁর নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। বুধবার জামিনে মুক্ত হয়ে রেজিনা বিবি বাড়িতে আসেন। রাতেই তাঁর বাড়িতে তৃণমূলের কর্মী সুমন মোল্লা দুষ্কৃতীদের নিয়ে আক্রমণ করে। শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তছনছ করেছে বাড়িঘর। ধূপগুড়িতে তৃণমূলের এক গোষ্ঠী আরেক গোষ্ঠীর বুথ, পার্টি অফিস ভাঙচুর করে সিপিআই(এম)’র নামে মিথ্যা দোষারোপ করল। সিপিআই(এম)’র বক্তব্য, তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল লেগেছে। উত্তেজনা ছড়ায় ধূপগুড়ি ব্লকের মাগুরবারি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানপাড়া এলাকায়। সারা রাত ধরে তৃণমূলের বাইক বাহিনী ঘুরে বেড়াচ্ছে। 


কোচবিহার তুফানগঞ্জের বালাভূত সীমান্ত এলাকায় শাসক দলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে লোকজন এনে মিছিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসীরা। কাঁটাতারের বেড়া নেই এই এলাকায়। দুই দেশের মধ্যে নদীই সীমানা। তৃণমূল নেতাদের নির্দেশে  সেখান দিয়ে লোক ঢোকানো হয়েছে বলে অভিযোগ। অঞ্চলে সিপিআই(এম)’র পতাকা, পোস্টার ছিঁড়ে দেওয়া হয়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয় বহিরাগতরা।

Comments :0

Login to leave a comment