Udhayanidhi Opposition

যোগীর মন্ত্রীকে নিয়ে অস্বস্তিতে বিজেপি

জাতীয়

Brinda Karat


উদয়নিধি স্ট্যালিনের সনাতন ধর্ম প্রসঙ্গে মন্তব্য নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের সুর গতকাল বেঁধে দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। সোমবার সারাদিন সেই সুরেই বিরোধী মঞ্চকে আক্রমণে ব্যস্ত থেকেছেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু এরমধ্যেই বেকায়দায় পড়েছে বিজেপি। উত্তর প্রদেশে যোগী সরকারের মন্ত্রী সতীশ শর্মার শিবলিঙ্গে হাত ধোয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় জবাব দিতে পারছে না বিজেপি নেতারা। 
বিরোধী দলগুলি মণিপুরের ঘটনা, বিশেষত মহিলাদের উপরে বর্বরতা, মোদীর অতি ঘনিষ্ঠ আদানি গোষ্ঠীর লেনদেন সংক্রান্ত বড় ধরনের দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। প্রশ্ন উঠছে বিদেশনীতির ব্যর্থতা, দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়েও। মূল্যবৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের মতো প্রশ্ন তো আছেই। এই সব নিয়ে অস্বস্তিতে থাকা বিজেপি নজর ঘোরাতে উদয়নিধির বক্তব্যকে হাতিয়ার করে বিরোধীদের গায়ে ‘হিন্দু বিরোধী’ তকমা লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। 
সোমবার এই প্রশ্নই তুলেছেন সিপিআই (এম) পলিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত। সংবাদ সংস্থা ইউএনআইয়ের প্রশ্নের জবাবে বৃন্দা কারাত বলেন, আগে অমিত শাহ জবাব দিন, সনাতন ধর্ম কি জন্মগত বর্ণব্যবস্থাকে মহিমান্বিত করে?  কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ কি জাতপ্রথাকে সমর্থন করেন? অমিত শাহ কি মনুস্মৃতির সেই সব বিধানকে সমর্থন করেন, যেখানে দলিত এবং মহিলাদের সম্পর্কে আপত্তিকর কথা আছে? অমিত শাহকে কটাক্ষ করে বৃন্দা কারাত বলেন, উনি আগে বলুন সংবিধান মেনে চলেন না মনুস্মৃতি? সংবিধানে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাকে নিজের পছন্দে সঙ্গী নির্বাচন করে বিয়ের অধিকার দেওয়া আছে। অমিত শাহ সেটা মানেন, নাকি মনুস্মৃতিতে যে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা আছে তা মানেন? বৃন্দা কারাত বলেন, তাই মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি ও দেশে দলিত এবং মহিলাদের উপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণের থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করবেন না। এটা আপনাদের সরকারের চূড়ান্ত ব্যর্থতা। 
অমিত শাহের লাইন ধরে এদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্জুন রাম মেঘওয়াল, প্রহ্লাদ প্যাটেল, ধর্মেন্দ্র প্রধান, অনুরাগ ঠাকুর প্রমুখরা বিরোধীদের মঞ্চকে আক্রমণ করেন। মুম্বাই বৈঠক থেকেই সনাতন ধর্মকে আক্রমণ করা হবে বলে স্থির হয়েছে এবং সেই মোতাবেকই স্ট্যালিনের ছেলে উদয়নিধি সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে বলেছেন বলে তাঁদের মূল অভিযোগ। বিরোধীদের এই নিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও দাবি তোলা হয়েছে বিজেপি’র পক্ষ থেকে। 
বিপরীতে বিভিন্ন বিরোধী দলের পক্ষ থেকে নানারকম মতামত এসেছে। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেনুগোপাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, কংগ্রেস ‘সর্বধর্ম সম্ভব’ নীতি অর্থাৎ সব ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধায় বিশ্বাসী। এটা কংগ্রেসের নীতি। কিন্তু বিভিন্ন দলের অধিকার রয়েছে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী সম্পর্কে কথা বলার। আমরা সকলের বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কংগ্রেস নেতা করণ সিং উদয়নিধির বক্তব্যকে ভ্রান্ত এবং অতি দুর্ভাগ্যজনক। তিনি উদয়নিধিকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, তামিলনাডুর বড় বড় মন্দিরের কথা। কিন্তু কর্নাটকের মন্ত্রী এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের ছেলে প্রিয়াঙ্ক খাড়গে এদিন বলেছেন, যে ধর্ম সমতার অধিকার প্রচার করে না, মনুষ্যত্বের মর্যাদা সুনিশ্চিত করে না, আমার মতে সেটা ধর্মই নয়। রোগের মতই খারাপ। খাড়গে পুত্র ঘুরিয়ে উদয়নিধিকেই সমর্থন করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। 
শিবসেনার উদ্ধব গোষ্ঠীর নেত্রী প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী সোশাল মিডিয়ায় সনাতন ধর্মের পক্ষে সওয়াল করেই বিজেপি-কে আক্রমণ করেছেন। তিনি লিখেছেন, সনাতন ধর্ম নিয়ে বিজেপি’র উদ্বেগ ভুয়ো। মহারাষ্ট্রে সনাতনিরা যখন তাদের অধিকারে দাবিতে আন্দোলন করছে, তখন বিজেপি জোটের সরকার তাদের উপরে নির্দয়ভাবে লাঠিচার্জ করছে। এতেই বিজেপি’র ভণ্ডামি সামনে এসে গেছে। সমাজবাদী পার্টি নেতা স্বামীপ্রসাদ মৌর্য যিনি লাগাতার বিজেপি’র হামলার মুখে আছেন জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে বলে, এদিন ফের বিজেপি’কে আক্রমণ করেছেন। মৌর্য বলেছেন, ‘সনাতন’ শব্দ নিয়ে বিজেপি বাজার করছে। ধর্মের নামে মানুষের আবেগের সঙ্গে খেলছে বিজেপি। আপ নেতা সঞ্জয় সিংও বিজেপি’কে পালটা আক্রমণ করে বলেছেন, বিজেপি আগেই হিন্দু ধর্মকে অপমান করেছে। যারা রামের নামের দেওয়া দান লুট করছে, তাদের সম্পর্কে কী বলবেন, প্রশ্ন তুলেছেন সঞ্জয় সিং। আদিত্যনাথ এর আগে বলেছিলেন বজরংবলী দলিত ছিলেন। একজন ভগবানকে জাতপাতের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া সনাতন ধর্মের অপমান নয়? প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে এদিন উদয়নিধির বক্তব্যের পক্ষে সরাসরি সমর্থন না করা হলেও বিজেপি’কে তীব্র আক্রমণ করা হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি’কে আক্রমণে পথে যাননি। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আমি সনাতন ধর্মকে সম্মান করি। আমরা ঋক বেদ, অথর্ব বেদ সম্পর্কে জানি। উপাসনা, আরাধনা, বন্দনা সেখান থেকে এসেছে। আমি সনাতন ধর্মের লোকেদের পেনশন দিই।’ উদয়নিধিকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, ও জুনিয়র, হয়তো সবটা জানে না। আমি ঠিক জানি না কোন দৃষ্টিভঙ্গী থেকে এমন বলেছেন। আমার দিক থেকে বলতে পারি, ওঁদের সমস্ত ধর্মকে সম্মান করা উচিত।’ উদয়নিধি জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন, সেই প্রসঙ্গে যদিও কিছু বলেননি তৃণমূল নেত্রী। তবে এদিনও নিজের অবস্থানে অনড় আছেন উদয়নিধি স্ট্যালিন। এদিন তিনি বলেন, আমি জাতিভেদ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বলেছিলাম কাল। আমার অবস্থানে আমি অনড় আছি। আমি এই কথা বারবার বলব। 
এদিকে দেশজুড়ে হিন্দুধর্ম নিয়ে হইচই করার মধ্যেই বেকায়দায় পড়েছে বিজেপি। উত্তর প্রদেশের যোগীর সরকারের মন্ত্রী সতীশ শর্মার একটি মন্দিরের মধ্যে শিবলিঙ্গে হাত ধোয়ার ছবি সোশাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে। ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে, বারাবাঁকির লোধেশ্বর মহাদেব মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়া মন্ত্রী সতীশ শর্মা শিবলিঙ্গে হাত ধুচ্ছেন। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন আরেক মন্ত্রী জিতিন প্রসাদ। সনাতন ধর্মের অপমানের প্রতিবাদে কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টি যোগীর মন্ত্রিসভার সদস্যের ইস্তফার দাবি করেছে। কংগ্রেস টুইট করে বলেছে, ধর্মের নামে, দেবী দেবতার নামে রাজনীতি করে এরা শুধু ক্ষমতা দখল করতে চায়। এদের ঈশ্বরের প্রতি কোনও আস্থা নেই, জনতার বিশ্বাসের উপরেও কোনও আস্থা নেই।
 

Comments :0

Login to leave a comment