Vishva Bharati

এবারও দোলের দিন হচ্ছে না বসন্তোৎসব, সিদ্ধান্ত বিশ্বভারতীর

রাজ্য জেলা

রণদীপ মিত্র

এবারও শান্তিনিকেতনে দোলের দিন হচ্ছে না বসন্তোৎসব। একদিকে শান্তিনিকেতনের হেরিটেজ স্বীকৃতি রক্ষা,  অপরদিকে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম সামাল দেওয়া, কোনোভাবেই কোনও এক বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সম্ভব নয়। এই যুক্তিতেই জনসাধারণের অবাধ সমাগমে বসন্তোৎসব পালন থেকে পিছালো বিশ্বভারতী। 
বিশ্বভারতী জানিয়েছে যে ১১ মার্চ কেবল পড়ুয়া, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, আশ্রমিকদের নিয়ে ঐতিহ্য, রীতি মেনে বসন্তোৎসব করবে বিশ্বভারতী। শুক্রবার বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কর্মীমণ্ডলীর বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গত ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীকে 'বিশ্ব হেরিটেজ' ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। স্বীকৃতি রক্ষা করা অবশ্যই এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বভারতীর কাছে।  সেই বিষয়টি সহ আরও নানান কার্যকারণকে মাথায় রেখেই  দোলের দিন, ১৪ মার্চ, বসন্তোৎসব পালন থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাই দোলের দিন তিনেক আগে ১১ মার্চ বসন্তোৎসব পালন করবে বিশ্বভারতী। 
১৪ মার্চ শান্তিনিকেতনে পর্যটকদের ভিড়ে থিক থিক করবে। তাই ওই দিন বসন্তোৎসব করলে বহিরাগতরা স্বাভাবিকভাবেই আশ্রমে প্রবেশ করবে ৷ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এর ফলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। এদিন বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কর্মীমণ্ডলীর সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বিনয় কুমার সরেন। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বভারতীতে বসন্তোৎসব হতো আশ্রম মাঠে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে দু-আড়াই ঘন্টার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হত। সম্প্রতি উৎসব ঘিরে নানা অনভিপ্রেত আচরণের সাক্ষী হতে হয়েছে বিশ্বভারতীর পড়ুয়া, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, আশ্রমিক সকলকেই। অভিযোগও উঠেছে একাধিক। এই আশ্রম মাঠ সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী চৈতি বাড়ি, গৌরপ্রাঙ্গণ, ঘন্টা তলা, কালো বাড়ি, রামকিঙ্কর বেইজের মূল্যবান ভাস্কর্য প্রভৃতি। তাতেও আবির ছুঁড়ে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও বসন্তোৎসব শেষে বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসজুড়ে মদের বোতল সহ নানান অবাঞ্ছিত সামগ্রীর দেখা মিলেছে এই শিক্ষায়তনে।  এমনকি, বহিরাগতদের হেনস্থার শিকারও হতে হয়েছে বিশ্বভারতীর বহু ছাত্রীকে। এমন অভিযোগ সামনে রেখেই 'হেরিটেজ শান্তিনিকেতনে'র ঐতিহ্য, রীতি রক্ষার লক্ষ্য জানিয়ে এমন সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। বরং রবীন্দ্রসংগীত ও নৃত্যের মধ্য দিয়েই পড়ুয়ারা উদযাপন করবে বসন্তোৎসব। যাকে সাধুবাদই জানিয়েছে শান্তিনিকেতন অনুরাগীদের বড় অংশই। 
শেষবার ২০১৯ সালে আশ্রম মাঠে হয়েছিল বসন্তোৎসব। ২০২০ সালে কোভিড পরিস্থিতির জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল উৎসব। এব্যাপারে বিশ্বভারতীর  জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ জানিয়েছেন, "ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বিশ্বভারতী। তাই হেরিটেজ রক্ষা করতে বহিরাগত প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ১১ মার্চ বিশ্বভারতী নিজেদের মধ্যেই এই উৎসব পালন করবে। এমনটাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"

Comments :0

Login to leave a comment