MD SALIM BARDHAMAN

দুর্নীতির শেষ না দেখে বন্ধ হবে না লড়াই: সেলিম

রাজ্য জেলা

MD SALIM BARDHAMAN বর্ধমানে সংস্কৃতি লোকমঞ্চে শুক্রবার বক্তব্য রাখছেন মহম্মদ সেলিম।

দুর্নীতি-দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়ছে বামপন্থীরা। দুর্নীতির শেষ না দেখে লড়াই থামবে না। শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে এই লক্ষ্য জানিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।

ইডি এবং সিবিআই’র জেরা ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির আবেদন খারিজ হয়েছে এদিন। শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে যে রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্তে আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। এর আগে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ এবং ডিভিশন বেঞ্চে খারিজ হয় আবেদন। 

সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘‘ দুর্নীতির তদন্তে আদালতের বাধা নেই, ফের বোঝা গিয়েছে। এবার দেখা যাক ইডি এবং সিবিআই তদন্তে গতি আনে কিনা। দরকার পড়লে হেপাজতে নিয়ে জেরা করতে হবে।’’

শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানে সংস্কৃতি লোকমঞ্চে প্রয়াত সিপিআই(এম) নেতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন সদস্য কমরেড মদন ঘোষের স্মৃতিচারণ করা হয়। ছিলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী, অঞ্জু কর। সভাপতিত্ব করেন অমল হালদার। 

‘‘একদিকে আমরা লড়ছি দুর্নীতির বিরুদ্ধে। মানুষের টাকা লুট হয়েছে। লুটেরাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে মানুষকে টাকা ফেরাতে হবে। আরেকদিকে সমানে তদন্তে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’

আইনজ্ঞদের অনেকেই জানিয়েছেন যে ইডি বা সিবিআই’র তদন্তে আদালত আগেও বাধা দেয়নি। বস্তুত দুই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে আদালতে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে তদন্তে হতি আনতে না পারায়। একের পর এক দুর্নীতির তদন্তও হচ্ছে আদালতের নির্দেশ। নিয়োগ দুর্নীতিতে বঞ্চিত যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা যেমন আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন প্রতিকার চেয়ে। আইনজীবীদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন তৃণমূল সাংঅসদ অভিষেক ব্যানার্জির জেরা ঠেকানোর মামলায় রাজ্য সরকার পক্ষ হওয়ায়। তাঁরা বলেছেন, ‘‘দুর্নীতির তদন্ত ঠেকাতে জনতার অর্থ খরচ করে মামলা হচ্ছে।’’   

সিপিআই(এম)’র ডাকে রাজ্যজুড়ে চলছে সই সংগ্রহ। এক কোটি সই নিয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে।

সেলিম এদিন পুলিশের ভূমিকারও কড়া সমালোচনা করেন। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে লুট আর সাম্প্রদায়িকতা চলছে। সহযোগিতা করছে পুলিশ। মানুষের কাছে পুলিশকেই বোঝাতে হবে যে তারা তৃণমূল নয়। নয়তো বারবার মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়বে পুলিশ।’’

বাধা কার দিচ্ছে? সেলিম বলেছেন যে তৃণমূল এবং বিজেপি, তদন্ত ঠেকাতে দু’দলই সক্রিয়। তিনি বলেন, ‘‘কেউ সরাসরি বাধা দিচ্ছে। কেউ আবার নাগপুরে আরএসএস’র দপ্তরে গিয়ে বা দিল্লিতে গিয়ে কলকাঠি নাড়ছেন যাতে তদন্তের গতি কমানো যায়।’’ সেলিম বলেন, ‘‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা লড়ছি। আর বিজেপি নজর ঘোরাতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে। দাঙ্গা হাঙ্গামা করছে। রামনবমীর সময় যেমন হয়েছে।’’ 

আন্দোলনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘মানুষ মুখ খুলছেন। সমর্থন করছেন লড়াইয়ে।’’

বারাকপুরে গত বুধবার সোনার দোকানে ডাকাতিতে নিহত হয়েছে সাতাশ বছরের এক তরুণ। এমন বারবার হচ্ছে। দুষ্কৃতী তাণ্ডব সংক্রান্ত এক প্রশ্নে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় যুক্তি দিয়েছেন যে কাজ নেই বলে এমন হচ্ছে। তৃণমূল নেতানেত্রীরা বলছেন, কেন্দ্র একশো দিনের টাকা দিচ্ছে না বলেও দুষ্কৃতীমূলক কাজকর্ম হচ্ছে। 

সেলিম বলেছেন, ‘‘বগটুইয়ে তৃণমূল তৃণমূলকে পুড়িয়ে মেরেছে। কাজ না থাকার কারণে সেই হত্যাকাণ্ড হয়নি। খাদান, বালি, পাথর লুটের বখরা নিয়ে গণ্ডগোল ছিল বলে হয়েছে। শাক দিয়ে মাছ ঢাকলে হবে?’’ তিনি বলেছেন, ‘‘চারদিকে বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে। তৃণমূলের কর্মী নেতাদের বাড়িতেই বোমা মজুত করা হচ্ছে। বাজির কারখানা রাজ্যে নতুন না। ‘বুড়িমা’-র বাজি তো আগেও ফাটত, তাতে বিস্ফোরণ হয়নি। ‘পিসিমার’ বোমা রোজ ফাটছে কেন? 

এগরায় বাজি বিস্ফোরণের পর বা কালিয়াগঞ্জে ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর জনতা পুলিশকে তাড়া করেছে। পুলিশকে পালাতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ভাটপাড়াতে পুলিশ জনতার ক্ষোভের মুখে পড়েছে। রাজ্যে এই প্রবণতা নিয়ে এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মানুষের ক্ষোভের সামনে পুলিশকে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন। তৃণমূলের মন্ত্রী বা জেলাশাসকদের পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশকে বলতে হবে যে তারা তৃণমূল নয়। তৃণমূলের অপকর্মে সহযোগী হিসেবে পুলিশকে দেখতে পাচ্ছেন মানুষ।’’ 

Comments :0

Login to leave a comment